শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

আজ ১৯ ডিসেম্বর কাশিয়ানী মুক্ত দিবস

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২

আজ ১৯ ডিসেম্বর কাশিয়ানী মুক্ত দিবস। ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হলেও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা হানাদার মুক্ত হয় ১৯ ডিসেম্বর। এ উপলক্ষে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি বছরের মত এ বছরেও আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন। ভাটিয়াপাড়া একতা সংঘ ক্লাব মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মেহেদী হাসান। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন,অফিসার ইনচার্জ মোঃ ফিরোজ আলম। বীরমুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার করিম লাবলুর সভাপতিত্বে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,বীরমুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মোঃ সিরাজুল ইসলাম, শাহ শওকত হোসেন,আবজাল হোসেন,রনু মাস্টার,সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ মশিউর রহমান খান প্রমূখ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কাশিয়ানীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা-স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা মতে, মহান মুক্তিযোদ্ধে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে সমূখ যুদ্ধে শহীদ হন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যুদ্ধে ছুটে আসা ২০ বীর মুক্তি সেনা। তাদের সরণে উপজেলার ফুকরা ও ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ বেদী ও স্মৃতি ফলক। মহান এ যুদ্ধে গণহত্যার শিকার হয় পাচঁশতাধিক মানুষ। কাশিয়ানীতে পাক-সেনাদের আগমন ও অত্যাচার:-১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুর থেকে এক প্লাটুন সশস্ত্র পাকসেনা রেলযোগে কাশিয়ানী অদূরবর্তী ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস সেন্টার দখল করে অবস্থান নেয়। স্থানীয় মুসলিম লীগ ও পিডিপি নেতাদের সহযোগিতায় রাজাকার, আলবদর, আল সামস এবং শান্তি কমিটি গঠন করে এলাকায় লুটতরাজ,খুন,অগ্নি সংযোগ,নারী ধর্ষণসহ বিভিন্নœ ধরণের অত্যাচার নিপিড়ন চালাতে থাকে। ১৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগ নেতা এমএম আমজাদ হোসেন, বাগঝাপা গ্রামের মোক্তার শেখ, মাজড়ার হাবিবুর রহমান বাবু মিয়ার বাড়িসহ শতাধিক নেতাকর্মীর ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পাক সেনারা। মাজড়া গ্রামের জহির উদ্দিন মৌলভীর ছেলে বেলায়েত, যদু মিয়ার স্ত্রী ও বাগঝাপার আক্কাস শেখকে গুলি করে হত্যা করে। পরদিন ১৪ এপ্রিল পোনা গ্রামে ৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাজাকার খোকা মৌলভীসহ ১১ জনকে গুলি করে হত্যা করে। দিনদিন পাক সেনাদের অত্যাচার বাড়তে থাকে, তারা কাশিয়ানী উপজেলার প্রায় পাচঁ শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ধংস যোগ্য ও লুটতরাজ করে। শতশত নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এ ছাড়া ভাটিয়াপাড়া পাকসেনা ক্যাম্পে, কালনা,তারাইল ও ফুকরা পাক বাহিনীর হাতে গণহত্যার স্বীকার হয় পাচঁশতাধিক মানুষ। পাকসেনা ক্যাম্পে যাদের ধরে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ ক্যাম্পের ভিররে এবং আসেপাশে মাটি চাপা দিয়ে রাখে। অনেকের মৃত দেহ আবার পাশে মধূমতি নদীতে ভাসিয়ে দেয় পাক বাহিনীর সদস্যরা। যুদ্ধঃ- মোঃ ইদ্রিস আলী মিয়া এ প্রতিবেদককে জানায়, প্রথম থেকেই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিহত করবার চেষ্টা করে পাক-সেনাদের। মে মাসের শেষদিকে ফিরোজ খালিদ ও আক্কাস হোসেন এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদল এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। জুলাই-আগষ্ট মাসে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা এলাকায় প্রবেশ করে যুদ্ধ শুরু করে। শতাধিক খন্ড যুদ্ধ হলেও কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া ও ফুকরা সমূখযুদ্ধে শহীদ হন ২০ মুক্তিসেনা। শহীদ হন যারা:- ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন যে সব বীর সেনা :- ভাটিয়াপাড়া পাক-সেনা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা বার বার আক্রমন চালায়। এ সময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে অসংখ্য বার খন্ড যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সমুখ যুদ্ধে শহীদ হন-উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের মান্নান মোল্যার ছেলে শহীদ এ কিউ এম জয়নূল আবেদীন,কাগদী গ্রামের খালেক মুন্শীর ছেলে শহীদ মজিবর রহমান,ডোমরাকান্দি গ্রামের মোঃ হালিম শেখের ছেলে শহীদ মোঃ হান্নান শেখ,চরভাটপাড়া গ্রামের অভিমান্য বিশ্বাসের ছেলে অনিল বিশ্বাস,মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার মেদিনী মন্ডল গ্রামের মীর শাহাদত হোসেনের ছেলে শহীদ মীর মহিউল হক মিন্টু, ফরিদপুর জেলার আলফাডাংগা উপজেলার মালা গ্রামের আলতাফ শিকদারের ছেলে শহীদ মোঃ মশিউর রহমান হেমায়েত। ফুকরার যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন যে সব বীরসেনা:-১৯৭১ সালের ৩১ অক্টোবার তারাইল ও ফুকরা এলাকায় পাকসেনারা নির্বিচারে হত্যাযোজ্ঞ চালায়। এই দিনে ওই এলাকায় দুইশতাধিক মানুষ গণহত্যার স্বীকার হয়। মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেয়ে পাক সেনাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। এ যুদ্ধে ১৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সমূখ যুদ্ধে শহীদ হন। ফুকরা যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন যে সব বীরসেনা :- কলসী ফুকরা গ্রামের হিঙ্গুল শেখের সরদারের ছেলে শহীদ আলী আকবর সরদার, ছোট বাহির ভাগ গ্রামের মোঃ মোকসেদ মিয়ার ছেলে শহীদ ইমাম হোসেন মিয়া, ছোট বাহিরভাগ গ্রামের মোঃ ফাগু সরদারের ছেলে শহীদ মোঃ হাবিবুর রহমান সরদার, দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের মোঃ মোকসেদ সরদারের ছেলে শহীদ মোঃ রবিউল সিকদার, দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের মোঃ ছায়েন কারিগরের ছেলে শহীদ রিজাউল কারিকর, ফুকরা গ্রামের কানাই কারিকরের ছেলে শহীদ আবু কারিকর, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার খাগাইল গ্রামের আব্দুল হামিদ মোল্লার ছেলে শহীদ চাঁন মোল্লা, দইসারা গ্রামের বারেক সিকদারের ছেলে শহীদ আবুল হোসেন, ধোপাপাড়া গ্রামের গণি মোল্যার ছেলে শহীদ আব্দুল মান্নান, বড় বাহিরভাগ গ্রামের ছায়েন মুন্সির ছেলে শহীদ আকরাম হোসেন মুন্সি, মুকসুদপুর উপজেলার গুনর গ্রামের শহীদ নূর হোসেন, একই গ্রামের শহীদ মোসলেম উদ্দিন। দুইজন বীর শহীদ মুক্তি যোদ্ধার পরিচয় ও বাড়ি ঘরের ঠিকানা আজও জানা যায়নি। স্মৃতি স্তম্ব ও শহীদ বেদীঃ- আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের স্বরণে সরকারি ভাবে উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ বেদী। অন্যদিকে দক্ষিণ ফুকরা যুদ্ধক্ষেত্রে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতি ফলক। গণহত্যা ও অরক্ষিত গণকবর:Ñতারাইল ফুকরা এলাকায় গণহত্যার শিকার হয়েছিলো যে সব মানুষ পাকসেনারা চলে গেলে তাদের লাশ স্বজন ও স্থানীয়রা দুইদিন পরে দাফন করে। ভাটিয়াপাড়া পাক-সেনা ক্যাম্প ও আশেপাশে অসংখ্য নিরিহ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে মাটি চাপা মাটি দিয়ে রাখে পাক-সেনারা। যেসব স্থানে চাপা মাটি দিয়েছিলো পাক সেনারা সে সব গণকবরের মধ্যে একটি গণকবর চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি গণকবর কালের বির্বতনে হারিয়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মনির হোসেন জানান, তিনশতাধিক মানুষ গণহত্যার শিকার হয়। তাদের অনেকের লাশ মধুমতি নদীতে ফেলে দেয়। আবার অনেক লাশ সেনা ক্যাম্পের ভিতরে এবং আশে পাশে চাপা মাটি দিয়ে রাখে। তার মধ্যে ক্যাম্প থেকে একটু দুরে ভাটিয়াপাড়ার রেল স্টেশনের পাশে যে গণকবরটি ছিলো সেটি সংরক্ষণ করে উপজেলা প্রশাসন। বর্তমানে সেটিও অরক্ষিত রয়েছে। আশেপাশের মানুষ গণকবরের সাথে গরব শুকায়, গইট ভাঙ্গা ও দেওয়ালের উপরের লোহার কাটা তার ছিড়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা গণকবরটির ভিতরে জ্বালানী খড়ি রাখে এবং গরু ছাগল চরায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মেহেদী হাসান জানান, আমি অল্পদিন যোগদান করেছি। কাশিয়ানীর সকল গণকবর চিহ্নিত করতে চাই। যেটা আছে সেটিকে সুন্দর ভাবে সংরক্ষিত করার উদ্যেগ সরকারি ভাবে নেব। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইদ্রিস আলী মিয়া জানান,কাশিয়ানী ১৯ ডিসেম্বর স্বাধীন হয়। বিকাল তিনটায় ৬৫ জন পাকসেনাসহ শতাধিক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসর্পন করে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com