সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি ও ব্লাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যজেড আই (জহিরুল ইসলাম) খান পান্না বলেছেন, শুধু পুলিশ নয়, কারা কর্তৃপক্ষসহ এ ঘটনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, আইন ভঙ্গ করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এ রকম একটি অমানবিক ঘটনার মাধ্যমে মানবাধিকারেরও লঙ্ঘন করেছেন। এ জন্য এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের শাস্তি হওয়া উচিত। যদি তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা আরও ঘটার আশঙ্কা থাকবে। আজ হয়তো বিএনপির এক কর্মী বা নেতার ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনা ঘটেছে, ভবিষ্যতে অন্য দল বা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও একই রকম হতে পারে। তাই এ ধরনের কর্মকা- বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ অভিযান, দলটির নেতা-কর্মীদের গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, তাঁদের প্রতি সংবিধান ও আইন পরিপন্থী আচরণ এবং এ সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেছেন।
উল্লেখ্য ,মায়ের মৃত্যুর খবরে গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পান কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আলী আজম। হাতে হাতকড়া, পায়ে ডা-াবেড়ি লাগিয়ে তাকে পাবরিয়াচালা এলাকায় নিজ বাড়িতে মায়ের লাশ দেখতে নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয়দের অনুরোধেও খোলা হয়নি তার হাতকড়া-ডা-াবেড়ি। শোকাচ্ছন্ন আলী আজম হাতকড়া-ডা-াবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজা পড়ান। এসময় স্থানীয় লোকজন ও বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জানাজার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, আলী আজমকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জানাজার সময়ও তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেয়া হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক।
স্থানীয়রা জানান, গত রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আলী আজমের মা সাহেরা বেগম (৬৭) বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শেষবার মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে সোমবার প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। তবে সোমবার না দিয়ে আদালত তাকে মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেন। পরে তিনি প্যারোলে মুক্তি পেয়ে হাতকড়া ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজা পড়ান। জানাজা চলাকালেও আলী আজমের হাতে থাকা হাতকড়া ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় উপস্থিত লোকজন। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদসহ উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মৃতের ছোট ছেলে আতাউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি জানাজার নামাজ পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে বললেও পুলিশ খুলে দেয়নি। সম্প্রতি তাকে একটি মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘আলী আজমকে ৯ জন পুলিশ সদস্যসহ তাঁর বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং জেল আইন অনুযায়ী তাঁকে পাঠানো হয়েছিল।
জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গত ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামালার অভিযোগে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ২রা ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় মো. আলী আজমকে। এ মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ১৫০ জনকে।
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান শেখকে মামলাটির বাদী করা হলেও ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ঘটনা ও মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘কসম, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখানে আলাউদ্দিন এসআই ছিল। ওই স্যার আমারে বারবার ফোন দিয়া অস্থির কইরা ফেলছে। আমি বলছি, স্যার, আমি দাওয়াতে আছি। আমি দাওয়াতে থাইক্যা মামলা করলাম কীভাবে? আমি ছিলামও না, দেখিও নাই। স্যারেগো আমি কইছিলাম, স্যার, আমারে আপনারা ঝামেলায় ফালাইয়েন না।’ বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু। তিনি কোনো দাগী আসামি নন বলে শুনেছি। তাই তাঁকে শুধু হাতকড়া পরিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া যেত।’