বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

সমাজের পরিবর্তন : একটি বিশ্লেষণ

আফতাব চৌধুরী :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এবং সমাজতান্ত্রিক (বস্তুবাদী) দর্শন পৃথিবীর প্রাচীনতম সমাজ ব্যবস্থা এবং দর্শন। বয়সও দশ হাজার বছরের চেয়ে কম নয়, বরং বেশি। এ সমাজ ব্যবস্থা বা দর্শনের জন্ম মাতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতির ক্রোড়ে। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা বা দর্শনের বয়স ছয় হাজার বছরের বেশি নয়। জন্ম পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতির ক্রোড়ে। অর্থাৎ ভাববাদী দর্শনের বয়স ছয় হাজারের বেশি নয়। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং ধনতান্ত্রিক (ভোগবাদী) দর্শনের বয়স পাঁচশত বছরের কম, বেশি নয়।
ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এবং ভোগবাদী দর্শনের জন্ম শিল্পবিপ্লবের আস্তাকুঁড়ে।
তিনটি সমাজব্যবস্থা ও তিনটি দর্শনের তিনটি সংস্কৃতি। এ তিনটি সংস্কৃতি হলো সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতি, সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি ও ধনতান্ত্রিক সংস্কৃতি। সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির অপর নাম লোক সংস্কৃতি এবং দর্শনের নাম লোকায়ত দর্শন। গতির ক্রমবিবর্তনের ধারায় বিকশিত হয়ে তার নাম হয় বস্তুবাদী দর্শন এবং বস্তুবাদী সংস্কৃতি, তারপর আবার গতি ও ক্রমবিবর্তনের ধারায় বিকশিত হয়ে তার নাম হয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শন, সংস্কৃতির নামকরণ হয় দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী সংস্কৃতি। আজ পর্যন্ত সর্বশেষ গতি ও ক্রমবিবর্তনের ধারায় নাম হয় ঐতিহাসিক দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দর্শন ও ঐতিহাসিক দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী সংস্কৃতি অর্থাৎ ঐতিহাসিক দ্বান্দ্বিক লোকায়ত দর্শন এবং ঐতিহাসিক দ্বান্দ্বিক লোক সংস্কৃতি।
সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা অর্থাৎ সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতির অন্য নাম ব্রাহ্মণ্যবাদী বা সামন্তবাদী বা রাজন্যবাদী সংস্কৃতি এবং দর্শনের নাম ব্রাহ্মণ্যবাদী দর্শন বা ভাববাদী দর্শন। উক্ত সমাজ ব্যবস্থা বা সংস্কৃতি ব্রাহ্মণদের তত্ত্বে সামন্তবাদ এবং রাজন্যদের প্রশাসনে চলে বলে একে সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বা সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি বলে। রাজার প্রতিনিধি হিসাবে সামন্তরা প্রশাসন চালান ব্রাহ্মণদের তাত্ত্বিক নির্দেশে চলে সাংস্কৃতিক বা সামাজিক কাজকর্ম। এ জন্য এর নাম সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি। উক্ত দর্শন কল্পনার উপর ভাব আরোপিত করে যে দার্শনিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত তাকে ভাববাদী দর্শন বলে। ঐ দর্শন কোনো প্রকার প্রমাণসিদ্ধ দর্শন নয়, শুধুমাত্র কল্পনার উপর ভাব আরোপিত করে যে দার্শনিক ভাবের উপর নির্ভরশীল বলে তাকে ভাববাদী দর্শন বলে। এজন্য এ দর্শনের অপর নাম অলৌকিক দর্শন। এ দর্শনের কল্পনা সমস্ত কিছুর একজন ¯্রষ্টা আছেন। এ ¯্রষ্টার নাম স্পিরিট, এজন্য এ দর্শনের অপর নাম স্পিরিচুয়াল দর্শন। ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা বা সংস্কৃতি এবং দর্শনের নাম ভোগবাদী সংস্কৃতি এবং ভোগবাদী দর্শন। এ সংস্কৃতির একমাত্র দিশা যতদিন বেঁচে থাকবে ভোগ করে বেঁচে থাকা এবং ঐ দর্শনের নির্দেশও এক। এজন্য এ দর্শনের অপর নাম পুঁজিবাদী দর্শন। অর্থাৎ অর্থ সঞ্চয় কর, পুঁজি বৃদ্ধি কর শুধুমাত্র ভোগবিলাসের নিমিত্তে। এ সংস্কৃতি আজকাল অনেকে টিভি সংস্কৃতি নামে আখ্যায়িত করে থাকেন। এ নামকরণ কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সেটা পাঠকরা বিচার করবেন।
ক্রমবিবর্তন বা পরিবর্তন গতি নিয়ন্ত্রিত। গতিশীলতা ক্রমবিবর্তন বা পরিবর্তনশীলতা। এ গতিশীলতার জন্য প্রকৃতি নিয়ত পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীলতার ধারা ক্রমবিবর্তনশীলতা। গতির এ পরিবর্তনশীলতা বা ক্রমবিবর্তনশীলতায় একদিকে যেমন আছে জন্ম একদিকে আছে মৃত্যু। গতি মানেই কুমোরের চাকার মত ঘূর্ণন নয়, গতির এ ঘূর্ণনের মূলে আছে অগ্রগতি এবং উন্নতি। পরিবর্তনের পিছনে অর্ন্তদ্বন্ধ ও বিরুদ্ধের মধ্যে সংঘাত রয়েছে। পরিবর্তন শুধু পরিমাণগত নয় গুণগতও। আর এ পরিবর্তনের নিয়ম হল ‘অভাবের অভাব’। যে নিয়মে অর্থাৎ গতিশীলতার নিয়মে তাতে কোনো কিছুকে আলাদাভাবে চেনা যায় না। প্রতিটি পরিবর্তন ও গতিই পরস্পর নির্ভরশীল।
প্রতিটি ঘটনা প্রবাহ প্রতিটি পরিবর্তন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
প্রতিটি ঘটনা, পরিবর্তন ও ক্রমবিকাশের ধারায় একটি ইতিহাস আছে। এই যে তত্ত্ব এটাকে দ্বন্দ্বতত্ত্ব বা দ্বান্দ্বিকতত্ত্ব বলা হয়। প্রকৃতিতে এ দ্বান্দ্বিকতত্ত্ব বিদ্যমান। প্রকৃতির এ দ্বন্দ্বিকতত্ত্বে দেখা যায়, প্রকৃতির প্রত্যেকটি নিয়ম ও গতি ঐক্যতান বিশিষ্ট এবং সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রতিটি কার্যকারণ পরিবর্তনশীল। প্রতিটি কারণের গুণগত ও পরিমাণগত পরিমাপ যত কার্যেরও গুণগত ও পরিমাণগত পরিমাপ তত। প্রতিটি ক্রিয়ার সমপরিমান প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান।
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া বিরামহীন। গতি বিরামহীন কিন্তু পরিবর্তনশীল। বস্তুর (সধঃঃবৎ) ধ্বংস নেই তবে অণু-পরমাণু ইত্যাদি ভগ্নাংশে বিভাজ্য। এগুলো হলো দ্বন্দ্বতত্ত্বের সাধারণ নিয়ম বা প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে ঐকতান বিশিষ্ট। দ্বন্দ্বতত্ত্বের এ নিয়মানুসারে প্রত্যেকটি বস্তুর দুটি দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিবর্তন অন্তহীন। সমাজ ব্যবস্থায়, সংস্কৃতি, দর্শন সবকিছু এ দ্বন্দ্বতত্ত্ব নির্ভর। সেজন্য সবকিছুতে দ্বান্দ্বিকতত্ত্ব বিদ্যমান। উঠা, বসা, থাকা, খাওয়া সবকিছু দ্বন্দ্বতত্ত্বনির্ভর। পরিবর্তনের অপর নাম সমন্বয়, সমন্বয়বাদীর মতে।
দর্শনের জন্ম সংস্কৃতির কোলে। সংস্কৃতির জন্ম মানুষের সমাজে। সংস্কৃতি তথ্য দিয়ে দর্শনকে অনুপ্রাণিত উৎসাহিত ও উন্নত করে। দর্শন সংস্কৃতি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তত্ত্ব দিয়ে সংস্কৃতিকে উন্নতির পথে, অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। দর্শন এবং সংস্কৃতি একে অন্যের পরিপূরক। দর্শন যেমন সংস্কৃতির উপর নির্ভলশীল তেমনি সংস্কৃতি ও দর্শনের উপর নির্ভরশীল। দর্শন এবং সংস্কৃতি আবার সমাজের দ্বন্দ্বতত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। সমাজের দ্বন্দ্ব সংস্কৃতিকে তথ্য দিয়ে পুষ্টি যোগায়, সংস্কৃতি এ তথ্য দিয়ে দর্শনের পুষ্টি সাধন করে। যে সমাজ যত বেশি দ্বান্দ্বিক সে সমাজের সংস্কৃতি এবং দর্শন তত বেশি অগ্রগামী এবং উন্নত। সমাজের দ্বান্দ্বিকতা সংস্কৃতি ও দর্শনের অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। যে সমাজে দ্বান্দ্বিকতা নেই, সে সমাজের অগ্রগতি নেই। এমন কোন সমাজ নেই যে সমাজে দ্বান্দ্বিকতা নেই।
সকল সমাজে সমস্ত সংস্কৃতিকে এমনকি সমস্ত দর্শনে দু’ধরনের দ্বান্দ্বিকতা বিদ্যমান। একটি অর্ন্তদ্বন্দ্ব অপরটি বহির্দ্বন্দ্ব। সমাজ, সংস্কৃতি ও দর্শনের নিজস্ব অভ্যন্তরে অহরহ যে দ্বন্দ্ব বিদ্যমান তাকে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও অন্য সমাজ, সংস্কৃতি এবং দর্শন একই সূত্রে গাঁথা। প্রকৃতির নিয়মাবলী সংস্কৃতি ও দর্শনের নিয়মাবলী। প্রকৃতির নিয়মাবলী দ্বান্দ্বিক, সেজন্য সংস্কৃতি ও দর্শনের নিয়মাবলী ও দ্বান্দ্বিক।
সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতি সমাজ সর্বস্ব। সমাজ সর্বস্বতা এ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রাণী জগতের তিনটি সহজাত প্রবৃত্তি আত্মরক্ষা, বংশবিস্তার ও আত্মপ্রকাশ। এ তিনটি প্রবৃত্তির জন্য প্রাণীজগত সমাজবদ্ধ। সমাজহীন মানুষ প্রায় অস্তিত্বহীন বলা চলে। কারণ এতে তার প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার সুযোগ নেই। যেকোন সমাজের মানুষ একে অন্যের উপর নির্ভরশীল। কৃষি বিকাশের ফলে এ নির্ভরতা আরো বৃদ্ধি পায়। সে জন্য সামন্ততান্ত্রিক সমাজে দেখা দেয় যৌথ পরিবারের প্রয়োজনীয়তা। কাজেই সমাজনির্ভর মানুষের নিকট সমাজের গুরুত্ব খুব বেশি। আর এজন্য সমাজতান্ত্রিক সমাজে দেখা দেয় সমবণ্টন, সমঅধিকার ইত্যাদি। সমাজতান্ত্রিক সমাজের দর্শনও তাই সমাজকেন্দ্রিক। সমাজ বাস্তব সত্যি। সমাজ শান্তি, সত্য এবং সুন্দর। এ বাস্তবতা থেকে সমাজ দর্শনের নাম বস্তুবাদী দর্শন। বস্তুবাদী দর্শনে অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান প্রভৃতি ও সমাজ নির্ভরশীল। এ সংস্কৃতি সমাজসর্বস্বময়তা দ্বারা পরিচালিত। এ সংস্কৃতি সম্পূর্ণরূপে দ্বান্দ্বিক সংস্কৃতি।
সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতি পরলোক সর্বস্ব, পরলোক সর্বস্বতা এ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
কৃষি সমাজকে কেন্দ্র করে যেহেতু এ সংস্কৃতি বিকশিত সেজন্য এ সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য যৌথ পরিবার। পরলোক সর্বস্বতার জন্য এ সংস্কৃতির দর্শনকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে দেখা যায়। কখনো এ সংস্কৃতির দর্শনের নাম ‘ভাববাদ’ আবার কখনো এ সংস্কৃতির দর্শনের নাম একেশ্বরবাদ, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ ইত্যাদি। মূলত এ সংস্কৃতি কল্পনার ভাবের উপর প্রতিষ্ঠিত সে জন্য ‘ভাববাদ’। সৃষ্টিকর্তা ইত্যাদি কল্পিতভাব থেকে এ দর্শনের নাম ভাববাদী দর্শন। সেজন্য এ দর্শনের কর্মফলবাদ, নিয়তিবাদ, পরলোকবাদ, স্বর্গনরকবাদ ইত্যাদির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এ সংস্কৃতির নীতিবিজ্ঞান পাপ-পূণ্য নির্ভর। এ সংস্কৃতির অর্থনীতি, সমাজনীতিতে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রধান্য লক্ষণীয়। এ সংস্কৃতির অর্থনীতি মূলত কৃষি অর্থনীতি। এ সংস্কৃতির অর্থনীতির সর্বময় কর্তা সামন্তপ্রভূ অর্থাৎ রাজা। এ সংস্কৃতিতে দ্বান্দ্বিকতার প্রাধান্য শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই বিদ্যমান। অন্যত্র এ সংস্কৃতিতে দ্বান্দ্বিকতার প্রাধান্য ততটুকু নয়, যা আছে তা ধনতান্ত্রিক সংস্কৃতির পুষ্টি সাধনের দ্বান্দ্বিকতা। এ সংস্কৃতিতে বাস্তবতার পরিবর্তে কল্পনার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। এক কথায় এ সংস্কৃতিকে পুনর্জন্মবাদী বা পরলোকবাদী সংস্কৃতি বলা যায়। কারো কারো মতে এ সংস্কৃতি বা দর্শনের নাম কল্পনাবিলাসী সংস্কৃতি এবং দর্শন।
ইহলোকের ভোগ সর্বস্বতা ধনতান্ত্রিক সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এ সংস্কৃতি বা দর্শনের অন্যতম শর্ত হলো লাভ, ড্রিংক অ্যান্ড বি মেরি। একদিকে যেমন সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির সামাজিক সাম্যতার বিরুদ্ধবাদী অপরদিকে ঠিক তেমনি কল্পনাবিলাসী পুনর্জন্ম ও পরলোকবাদ সংস্কৃতি অর্থাৎ সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতিরও চরম বিরুদ্ধবাদী। এ সংস্কৃতি এবং দর্শনে যেমন নেই সমাজে তেমনি নেই পাপ-পুণ্য। এ সংস্কৃতিতে যৌথ পরিবার নিস্প্রয়োজন। এ সংস্কৃতি একান্তভাবে আত্মসর্বস্বপর ভোগবাদী সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি ও দর্শনের একমাত্র বৈশিষ্ট্য হল যত পারো সঞ্চয় কর, অর্থ ভা-ার স্ফীত কর আর ভোগ কর। এখানে ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য, ধর্মাধর্ম সবকিছু অনুপস্থিত-একমাত্র ভোগসর্বস্বতা বিরাজমান। এ সংস্কৃতি এবং দর্শনের অন্য নাম যান্ত্রিক দর্শন তবে বৈশিষ্ট্য বিচারে এ সংস্কৃতি ও দর্শনের নাম ভোগবাদী সংস্কৃতি বা ভোগবাদী দর্শন।
একই সমাজ অভ্যন্তরে তিনটি সংস্কৃতি, তিনটি দর্শন, তিনটি সভ্যতা, তিনটি সমাজ। কাজেই বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার অভ্যন্তরে এ তিনটি সংস্কৃতির, তিনটি দর্শনের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত, সংঘর্ষ ও নির্মাণ বিদ্যমান। এই যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বহির্দ্বন্দ্ব তা অহরহ চলছে। ফলে সমাজের উত্থান পতন যেমন ঘটছে তেমনি সংস্কৃতি সভ্যতা ও দর্শনের উত্থান পতন অনবরত ঘটে চলেছে।
এ দ্বন্দ্ব, সংঘাত, সংঘর্ষ ও নির্মাণের জন্য সমাজে কখনো দেখা দিচ্ছে চরম মাৎস্যন্যায়তা, যার পরিণাম নির্মাণ বা পরিবর্তন। এ পরিবর্তনে পরস্পর দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সংঘর্ষ যেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করে তেমনি প্রত্যেকটি সংস্কৃতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সংঘর্ষ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থকে। এ উভয় প্রকার দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও সংঘর্ষ যে সংস্কৃতিকে যত বেশি অগ্রগতি বা উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে সে সংস্কৃতি তখন সমাজে প্রধান্য বিস্তার করবে এবং অপর দুটি সংস্কৃতি সাময়িক নি¯প্রভ হয়ে যাবে। এ দ্বন্দ্ব, সংঘাত, সংঘর্ষ ও নির্মাণের নিয়ম। এ নিয়ম প্রকৃতিতে যেমন পরিদৃশ্যমান অনুরূপভাবে সমাজে ও পরিদৃশ্যমান। সমাজ মানুষের জন্য, মানুষ জীবনের জন্য। সমাজ মানুষের এক সহজাত স্বাভাবিক প্রাকৃতিক অবস্থান। সমাজতন্ত্রের তথা সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির এটি মূল কথা। মানুষ এবং সমাজকে পৃথক করে দেখা যায় না, দেখার কোন উপায় নেই। ( উৎস: দৈনিক ইনকিলাব) লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com