জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার ৬ লেনের মহাসড়কটির নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ থাকা, ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিই এর মূল কারণ বলে মনে করছেন তারা। মহাসড়কের ২টি আন্ডারপাস ও একটি ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ওই স্থানগুলোতে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি ঈদেই ওই স্থানগুলোতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। যানজটে আটকা পড়ে ঘরমুখো মানুষদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কটি ৬ লেনের নির্মাণ করছে। ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কে ১৩টি আন্ডারপাস ও ৭টি ফ্লাইওভার রয়েছে। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯শ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রতি কিলোমিটারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ কোটি টাকারও বেশি।
বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কটি প্রথমে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি ২০১৩ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়ে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। পরবর্তীতে মহাসড়কটি ৬ লেনের কাজ শুরু হয়। মহাসড়কটিতে চার প্যাকেজে নির্মাণ কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ জয়দেবপুর থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার। এ অংশের নির্মাণ কাজ করছেন স্প্রেকট্রা নামে একটি ঠিকাাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্যাকেজ-২ কালিয়াকৈর থেকে মির্জাপুরের কুরণী পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার। এ অংশের নির্মাণ কাজ করছেন আব্দুল মোমেন লি: ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্যাকেজ-৩ করণী থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার। এ অংশের কাজ করছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সামহোয়ান ও বাংলাদেশের মীর আকতার লি: ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
প্যাকেজ-৪ টাঙ্গাইল থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার। এ অংশের কাজ করছেন ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিয়েনকো লিমিটেড। গত সোমববার (৭ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভূমি জটিলতার কারণে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। গোড়াই-সখিপুর রোডের হাজার হাজার যানবাহন গোড়াই এলাকা হয়ে মহাসড়কে চলাচল করছে। মহাসড়কের উভয় পাশে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় ধীর গতিতে চলাচল করে যানবাহন। এতে ওই স্থানে থেমে থেমে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে গোড়াই হাইওয়ে থানা পুলিশ নিজ উদ্যোগে একাধিকবার ইট ফেলে গর্ত ভরাট করেন।
গোড়াই এলাকার ব্যবসায়ী জুয়েল, সজিব ও সুমন জানান, মহাসড়কের পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। বৃষ্টির পানি মহাসড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্তে জমে থাকে। যানবাহনের চাকার চাপে কাঁদা পানি চলাচলরত মানুষের গায়ে লেগে কাপড় নষ্ট হয়ে থাকে। পিকআপ চালক, আরফান আলী ও লোকমান মিয়া জানান, মহাসড়কের ওই স্থানে এলে গাড়ির আয়ু কমে যায়। ৬ লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমিত চক্রবর্তী জানান, করোনা মাহামারির কারণে দীর্ঘ সময় মহাসড়কে নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। গত ১০ জুন থেকে আবার কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এ মহাসড়কে ১৩টি আন্ডারপাসের মধ্যে নাটিয়াপাড়া ও তারুটিয়া এবং ৭টি ফ্লাইওভারের মধ্যে টাঙ্গাইল রাবনা বাইপাস এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া গোড়াই ফ্লাইওভারের কাজ ভূমি, অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। মির্জাপুরের গোড়াই থেকে ঘারিন্দা পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রাস্তার পাশে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি না সরানোর কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান।-জাগোনিউজ২৪.কম