বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের জ্ঞান খুবই সীমিত বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, বিদেশিরা মাঝে-মধ্যে যে সুপারিশ দেয়, সেগুলো খুব আহাম্মকের মতো মনে হয়, অলীক। বাংলাদেশ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন বাঙালিরা। গতকাল বুধবার দুপুরে সিলেট নগরের চৌহাট্টার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের ইপিআই ভবনে কমিউনিটি ক্লিনিক বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আপনারা মিডিয়ারা অতো হইচই করেন কেনো? বরং আপনাদের কারণে বেদিশিরা পাত্তা পাচ্ছে। আপনারা বিদেশিদের কাভার করা (সংবাদ প্রচার) বন্ধ করেন। কাভার যদি বন্ধ করেন, তাহলে পরের দিন থেকে ওরা ঘরে বসে হুক্কা খাবে। আপনাদের কারণে তারা মজা পায়, নিজেদের রাজা মনে করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা (বিদেশিরা) কারও স্বার্থে তথ্য সংগ্রহ করতে যাক আমাদের অসুবিধা নাই। এতে আপনাদেরও মাথাব্যথার কিছু নেই। আমরা আমাদের দেশে লুকিয়ে কিছু করি না। আমরা ভেরি ফেয়ার, ওপেন। আমাদের দেশে ৪৫টি প্রাইভেট টেলিভিশন রয়েছে, প্রতিদিন সাড়ে ১২ হাজার সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০০ সাময়িকী বের হয়। এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও আছে?
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন বাঙালিরা। অথচ বিদেশিরা যখন আমাদের কোনো পরামর্শ দেয় তখন সেটি হাস্যকর। মাঝে মধ্যে যে সুপারিশ দেয়, সেগুলো খুব আহাম্মকের মতো মনে হয়, অলীক। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি দেশ, যে দেশের মানুষ মানবতা, গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের জন্য রক্ত দিয়েছেন। এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। দুনিয়ার আর কোথাও এমন নজির নেই। অথচ বিদেশিরা আসে আমাদের বোঝাতে। কিন্তু এ দেশের প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ে ডেমোক্রেসি আছে। তাদের দেশে নির্বাচন হলে ২৫ ভাগ মানুষ ভোট দেয়, আর আমাদের দেশে ৭০-৮০ ভাগ মানুষ ভোট দেন। অথচ তারা বড় বড় কথা বলেন। তারা নিজের দিকে তাকায় না। তারা তাদের নির্বাচনের সময় প্রার্থী পায় না।
গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো থেকে অনেক অনেক ভালো অবস্থানে এসেছি। দারিদ্র্যতা একটি বড় অভিশাপ। আমরা সেটি অর্ধেকে নামিয়ে নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ এখন দারিদ্র্য দেশ না। দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। যেহেতু আমরা প্রতিবেশী দেশ অনেক ভালো করতেছি, এ জন্য অনেকে আকর্ষণ বোধ করছেন। অনেকে অনেকভাবে ফায়দাও লুটতে চাচ্ছেন। বিশ্বের যেসব দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সেসব দেশেই উন্নতি ঘটে। বাংলাদেশেও তা ঘটছে। যেসব দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নেই, সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
আমাদের কিছু লোক চায় না দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করুক জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দেশ অশান্ত থাকলে তাদের ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল হয়। দুঃখজনকভাবে বিরোধীদলীয় অনেক নেতা আছেন, যারা চান না আমাদের দেশ উন্নত হোক। তাঁরা তাঁদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্য দুশ্চিন্তায় থাকেন। এ জন্য তাঁরা বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং অপপ্রচার চালিয়ে লোকজনকে উসকে দেন। দেশ অশান্ত হলে তাঁরাও কিন্তু শান্তিতে থাকবেন না। বিশ্বের যে সকল দেশে যে পক্ষ অশান্তি সৃষ্টি করেছে তাঁরাও কিন্তু শান্তিতে নাই। কিন্তু নিজের পা কেটেও তাঁরা অন্যের মাড়ি নষ্ট করতে চায়। এর আগে মতবিনিময় সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিলেটে আরও সাতটি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের মোট ২৪টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রয়োজন। আশা করছি দ্রুতই এগুলো পেয়ে যাব।
এ সময় তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কারণে দেশে যে কত উন্নয়ন হচ্ছে তা আমরা টের পাচ্ছি না। কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ার ফলে দেশে মা ও শিশুমৃত্যু অনেক কমে গেছে। আগে মা ও শিশুমৃত্যু প্রায় ৮৬ শতাংশ ছিল। এর মধ্যে সিলেটে শিশু ও মায়ের মৃত্যু সবচেয়ে বেশি ছিল। এগুলো অনেক কমে এসেছে।
মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় ও সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ারসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। সূত্র:-বাংলাদেশ জার্নাল