নাটোরের নলডাঙ্গায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন ১৮০ জন কৃষক। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করে ৮৬৪ মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ হাজার টাকা মন হিসেবে মোট মূল্য ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারী প্রণোদনার বীজ, সার ও আন্ত:পরিচর্যা বাবদ নগদ অর্থ সহায়তা পাওয়ায় কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন এসব পেঁয়াজ চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। বিঘা প্রতি ১২০ মন হারে ফলন ও বর্তমান বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকরা তাই বেশ খুশি। নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সুত্র জানায়, প্রতি বছর নলডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় ২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়। এতে মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৫১ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন। আর ১ লাখ ৪২ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে বছরে পেঁয়াজের খাদ্য চাহিদা ১ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন। খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বছরে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করা হয়। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ। ফলে পেঁয়াজ চাষাবাদসহ উৎপাদনের পরিধি আরো বেড়েছে। এতে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগের মতে নলডাঙ্গা উপজেলায় শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন তিনবার মিলে মোট উৎপাদন হয় ৫৩ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন। আর বছরে খাদ্য চাহিদা প্রায় ২ হাকার মেট্রিক টন। বছরে খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ব থাকছে ৫১ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন। যা স্থামীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা যাবে। কৃষি বিভাগ জানায়, বছরের যেকোনো সময় বা সারা বছর এসব গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করা যায়। তবে সাধারণত গ্রীষ্মকালে দুইবার ও শীতকালে একবার এই পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়। আর গ্রীষ্মকালীন নাসিক-এন ৫৩ জাত ও বাংলাদেশি বারি-৩ ও ৫ জাতের বীজ বেশি আাবাদ হয় এবং ফলনও বেশ ভাল। প্রতি বিঘায় গড় ফলন হয় ১২০ থেকে ১৫০ মন। বিঘায় মোট খরচ হয় ২৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। বয়সকাল বীজ থেকে উত্তোলন পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ দিন। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এবার প্রণোদনা কর্মসুচীর মাধ্যমে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে ১৮০ জন কৃষককে এক বিঘা করে ১৮০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদে বিনামূল্যে বীজ, সার ও আন্ত:পরিচর্যা বাবদ নগদ ২ হাজার ৮০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১২০ মন হারে ফলন হচ্ছে। বাজারে পেঁয়াজের বাজার দরও বেশ সন্তষজনক। সরজমিনে গত সোমবার (০২ জানুয়ারী) দুপুরে এ পেঁয়াজ উত্তোলন কার্যক্রম ও প্রদর্শনী ক্ষেত পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রোজিনা আক্তার, উপজেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান-১ শিরিন আক্তার, উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস, কৃষি সম্প্রসারন অফিসার কিশোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদ সাবেক সদস্য রঈস উদ্দিন রুবেল সহ কৃষি কর্মকর্তাগনসহ কৃষকরা। এসময় তারা কৃষকদের সাথে কথা বলেন এবং গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদের সফলতার বিষয়ে অবগত হন। একই সঙ্গে তারা শীতকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদের পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদে এগিয়ে আসার আহবান জানান। এদিকে সুবিধা ভোগী নলডাঙ্গার সড়কুতিয়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, এবছর তিনি ১৭ কাঠা জমিতে গ্রীষ্মকালীন নাসিক-এন ৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন। রোপন থেকে তার পেঁয়াজ উত্তোলনের উপযোগী হতে সময় লেগেছে ৮০ থেকে ৮৫ দিন। চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ৫ কাঠা জমির পেঁয়াজ উত্তোলন করেছেন। কাঠা প্রতি ফলন হয়েছে ৬ মন। এ হিসাবে বিঘায় ফলন হবে ১২০ মন। বাজারে এ পেঁয়াজ ১ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করেছেন। একই গ্রামের কৃষক আনোয়ার করিম ও ইসহাক আলী এবং বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের নশরৎপুর গ্রামের ইলিয়াস হোসেন জানান, তারা ১ বিঘা করে গত দুই বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করে আসছেন। বিঘা প্রতি ২০/২২ হাজার খরচ করে ১২০ থেকে ১৩০ মন হারে পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারছেন এবং দামও সন্তষজনক। এ ফসল চাষাবাদে তারা আশাবাদী এবং সফলতার হাতছানি দেখতে পাচ্ছেন। নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস জানান, দেশের মানুষের জন্য সারা বছর পেঁয়াজের খাদ্য চাহিদা মেটানো, বছর জুড়ে ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সহ বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমাতে এই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সরকারী প্রণোদনার বীজ, সার ও আন্ত:পরিচর্যা বাবদ নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। যাতে কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদে আগ্রহী হন। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে সজাগ আছেন। তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদে খরচ কম, ফলন ভাল হয় এবং সঠিক দামও পাওয়া যায়। তাই এ ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করতে পারলে সারা বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হবে এবং খাদ্য চাহিদা মিটবে। পাশাপাশি আর দেশে পেঁয়াজের সংকট হবে না, বিদেশ থেকেও আর পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী মাইল ফলক বলে মন্তব্য করেন তিনি।