কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার এক যুগ হলো গতকাল (৭ জানুয়ারি)। দেশ-বিদেশে আলোচিত এ নির্মম হত্যাকা-ের দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি তার পরিবার।
বিচারিক কাজ ভারতের উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকায় এখনও ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ফেলানীর বাবা-মা। এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে বিচারিক কাজ বিলম্বিত হলেও শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের। ২০১১ সালের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বাবার সঙ্গে কাটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফ সদস্যরে গুলিতে মারা যান ফেলানী খাতুন। ফেলানীর মরদেহ কয়েক ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে।
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারের বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় বিএসএফ’র বিশেষ আদালত। বিজিবির আপত্তিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার শুরু হলেও সেখানে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্তকে। এরপর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই ভারতীয় মানবাধিকার সুরক্ষা ম (মাসুম) এর মাধ্যমে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনের ভিত্তিতে কয়েক দফায় শুনানির দিন পেছালেও এখনও আদালতেই ঝুলে আছে পিটিশন। এ অবস্থায় অনেকটা হতাশার মধ্যে থাকলেও মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ন্যায়বিচারের আশা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
ফেলানীর বাবা মো. নুর ইসলাম বলেন, মেয়েকে আমার চোখের সামনে হত্যা করা হয়। আমি হত্যাকারীর ফাঁসি চাই। দু’দেশের সরকার যেন সঠিক বিচারটা করে। ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, মেয়েকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি ভারতে ছিলেন। তার বোনের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য ফেলানীর বাবা তাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় মেয়েকে বিএসএফ হত্যা করেছে। ফেলানী তাদের বড় মেয়ে। তিনি এই হত্যার জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেন। নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলনিটারী গ্রামের ফেলানীর পরিবারের প্রতিবেশীরা জানান, ফেলানী হত্যার বিচার পেতে আদালতে স্বাক্ষী দিতে কয়েক দফায় ভারতে যান ফেলানীর বাবা। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার না পাওয়াটা দুঃখজনক। ফেলানী হত্যার বিচারের পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি তাদের।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানীর বাবার আইনি সহায়তাকারী আব্রাহাম লিংকন জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে দাখিল করা রিট পিটিশনটির শুনানি এখনও শুরু হয়নি। বিলম্ব হলেও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দু’দেশের বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রতিষ্ঠা হবে বলে মনে করেন তিনি। নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলনিটারী গ্রামের নুর ইসলাম ও জাহানারা দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে সবার বড় মেয়ে ছিলো ফেলানী।