শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে ভারতীয় সাপ্তাহিকের প্রতিবেদন খণ্ডন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের নিউ ইয়র্ক পুলিশের ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সিলেটের আব্দুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সাথে মির্জা ফখরুলের বৈঠক বিভাজিত হওয়ায় আমাদের শিক্ষা বিশ্বমানের হয়নি : মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন হোয়াইট হাউসের কাছে বিমান দুর্ঘটনায় ষড়যন্ত্র দেখছেন ট্রাম্প শ্রমিক ঘাটতি পূরণে ইন্টার্নশিপ কতটা সহায়ক হতে পারে? হরতাল হবে না, মানুষ আওয়ামী লীগের শাস্তির অপেক্ষা করছে: রিজভী আ’লীগের প্রতি আচরণ তেমন হওয়া উচিত, গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে যেমন আমাদের সাথে করা হতো: হাসনাত আব্দুল্লাহ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে তিন বিষয়কে গুরুত্ব দেবে ইসি নাইম শেখের সেঞ্চুরি, খুলনার রান পাহাড়

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৩

শীতকাল ইবাদতের সফলতার শ্রেষ্ঠ সুযোগ এনে দেয়। ইবাদত ও ব্যবসার সঙ্গে শীত ও গ্রীষ্মের সম্পর্ক এবং জীবনে ব্যবসায়িক ভ্রমণের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কুরাইশদের অভ্যস্ততা আছে; অভ্যাস আছে শীত ও গ্রীষ্মের ভ্রমণে। তাই তাদের উচিত এই (কাবা) গৃহের প্রভুর ইবাদত করা। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা প্রদান করেছেন।’ (সুরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ১-৪) ইবাদতের মূল সূত্র হলো সুন্নাতে রাসুল (সা.)। (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৭) সুন্নতের মূল প্রেরণা হলো, রাসুলে আকরাম (সা.) যে অবস্থায় যে কাজ যতটুকু গুরুত্বসহকারে করেছেন বা বিরত রয়েছেন, সে অবস্থায় সে কাজ ততটুকু গুরুত্বসহকারে করা বা বিরত থাকাই হলো প্রকৃত সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি আমল পাপ মোচন করে—সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা ও শীতের অজু।’ (আদ-দোয়া লিত-তাবরানি: ১৪১৪)
ষড়্‌ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ ও মাঘ শীতকাল। গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য শীত মানে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র নেই। আমরা যখন লেপ–কম্বল গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘ রাত সুখনিদ্রায় বিভোর, তখন রাস্তার পাশে, বাস ও রেলস্টেশনে, বাজারঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায়; যাঁদের রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায়। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাঁদের জীবনে এনে দিতে পারে অনাবিল আনন্দ। কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তাঁর মুখে হাসি ফোটানোর মতো আনন্দের আর কী হতে পারে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তির অতিরিক্ত বাহন জন্তু বা বাহনে খালি জায়গা আছে, সে যেন বাহনহীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। কোনো ব্যক্তির যদি অতিরিক্ত পাথেয় থাকে, তাহলে সে যেন পাথেয়হীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজি (সা.) এভাবে আরও অনেক ধরনের সম্পদের কথা বললেন। তাতে আমাদের মনে হলো, প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদে আমাদের কোনো অধিকার নেই। (মুসলিম: ১৭২৮)
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত অভাবী সে নয়, যে এক-দু লোকমা খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ফেরে; বরং অভাবী তো সে, যার সামর্থ্য নেই অথচ (সে মানুষের কাছে মুখ ফুটে চাইতে) লজ্জাবোধ করে।’ (বুখারি: ১৪৭৬; মুসলিম: ১০৩৯) শীতকালে গরম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। হজরত ওমর (রা.) তাঁর শাসনামলে গভর্নরদের উদ্দেশে শীতের আগমনে লিখতেন, ‘শীত কিন্তু এসে গেল, এ তোমাদের দেহের শত্রু। অতএব এর প্রতিরোধে পশমি বস্ত্র, মোজা, হাতমোজা ইত্যাদির প্রস্তুতি নাও। আর পশম দিয়ে গায়ের চামড়ায় এবং শরীরের পোশাকে শীতের আক্রমণ ঠেকাও। কারণ, শীত খুব দ্রুত প্রবেশ করে, তবে সহজে বিদায় নেয় না।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

সমাজের সুবিধাবি ত ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ানো শুধু সামাজিক দায়িত্বই নয়, এটা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্বও বটে। হাদিস কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে (আল্লাহ তাআলা বলবেন), ‘“হে বনী আদম! আমি পিপাসার্ত ছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি।” বান্দা তখন বলবে, “হে আল্লাহ! আপনি উভয় জাহানের প্রতিপালক। আপনাকে কীভাবে পানি পান করাব?” আল্লাহ তাআলা বলবেন, “আমার অমুক বান্দা পিপাসার্ত হয়েছিল; কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাওনি। যদি তাকে পানি পান করাতে, তাহলে সেখানে আমাকে পেতে (আজ তার প্রতিদান পেতে)। (তারপর বলবেন) হে বনী আদম! আমি পীড়িত ছিলাম কিন্তু তুমি আমার সেবা করোনি।” তখন বান্দা বলবে, “আপনি উভয় জাহানের প্রতিপালক, কীভাবে আমি আপনার সেবা করব?” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, “আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল; কিন্তু তুমি তার সেবা করোনি। যদি তুমি তার সেবা করতে তাহলে আমাকে তার কাছে পেতে।”’ (সহিহ্ ইবনে হিব্বান: ২৬৯) শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক ও ইমানি দায়িত্ব। ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের প্রকোপে নিদারুণ কষ্ট ও দুঃসহ অবস্থায় পড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লাখ লাখ দুস্থ, নিঃস্ব, ছিন্নমূল, গরিব-দুঃখী, বস্ত্রহীন, শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ। অনেকেই ভুগছেন সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণে। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন যথাযথ চিকিৎসা, ওষুধপথ্য এবং সরকারি ও বেসরকারি সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। এ জন্য জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে সমাজের বিত্তবানদের শীতার্ত বস্ত্রহীন মানুষের পাশে অবশ্যই দাঁড়ানো উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পুণ্য আছে আল্লাহর প্রেমে আত্মীয়স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্য প্রার্থীদের এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ প্রদান করলে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করলে ও জাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থসংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্যধারণ করা। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৭) ● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী লেখক: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম smusmangonee@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com