শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ন

চিনি, আলু আর বিষাক্ত কেমিক্যালে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়!

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৩

রাজশাহীর পুঠিয়ায় চিনি, আলু, ঝোলা গুড় আর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়। স্বাদ-গন্ধহীন সেই ভেজাল গুড়েই সয়লাব উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গুড় প্রস্তুতকারকরা বাড়তি লাভের আশায় এবং চাহিদা বেশি থাকায় ঝোলা খেজুর গুড়ের সাথে চিনি আর আলু মিশিয়ে উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। বাজার থেকে কমদামে নি¤œমানের ঝোলা ও নরম গুড় কিনে তাতে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারি মিশিয়ে গুড় তৈরি করছেন। সেই গুড় বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। এতে করে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারণার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও রয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলেন, সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে বাজার গুলোতে ক্রমেই ভেজাল গুড়ের আমদানী বেড়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, খেজুর গুড়েরের সর্ববৃহৎ আড়ৎ হচ্ছে উপজেলার ঝলমলিয়া ও বানেশ্বর হাট। খেজুর গুড় উৎপাদন মৌসুম শুরু হলেই এই হাটসহ পুরো উপজেলা জুড়ে প্রায় আড়াই শতাধিক আড়তে গুড় কেনা-বেচা শুরু হয়। হাট বারসহ প্রতিদিন সকাল থেকে ওই আড়ৎ গুলোতে খেজুরের গুড়ের কর্মযজ্ঞ দেখা যায়। পাশাপাশি গত কয়েক বছর থেকে অনলাইন মাধ্যমেও গুড় কেনা-বেচা হচ্ছে। এ বছর কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে মৌসুমের শুরু থেকে হাট-বাজার ও আড়ৎগুলোতে ভেজাল খেজুর গুড়ের আমদানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি গুড় ১১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার (৭ই জানুয়ারি) সকালে উপজেলার বানেশ্বর হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে আগত বেশির ভাগ বিক্রেতারা চিনি মিশ্রিত খেজুরের গুড় তৈরি করে এনেছেন। এদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত চিনি মিশ্রিত গুড় বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা দরে। আর এর চেয়ে কিছু ভালো মানের গুড় বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। তবে পাটালি বা খুরি (পাটা গুড়ের সাইজ) প্রকার ভেদে কেজিতে দু’একটাকা কম বেশি হচ্ছে।
কান্দ্রা এলাকা থেকে গুড় বিক্রি করতে আসা নজরুল আলী বলেন, খেজুর গাছগুলোর যতœ বা তদরাকি না করায় অনেক গাছে রস কম দেয়। সে ক্ষেত্রে অল্প রসের মধ্যে অনেকই চিনি দিয়ে গুড় তৈরি করেন। আবার কেউ কেউ বেশি লাভের আশায় ১০ কেজি খেজুরের গুড়ের মধ্যে ২০ কেজি চিনি মিশ্রণ করেন।
তবে স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ি বা হাট-বাজার কর্তৃপক্ষ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না করায় ভেজাল গুড়ের আমদানি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে।
আবু হাসাদ নামের অপর এক গুড় বিক্রেতা বলেন, খেজুর রসের গুড় তৈরি করতে কিছু চিনি মেশাতে হয়। তাহলে গুড়ের রং ও মান অনেক বেড়ে যায়। গুড়ের রং ভালো হলে বাহির থেকে আসা পাইকাররা বেশি দামে কিনতে আগ্রহী হয়। তিনি আরো বলেন, গত বছরের পুরোনো ‘র’ বা লালিতে অনেকই গুড় তৈরি করেন। ওই গুড়ে একটু চুন, ফিটকারীর পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত চিনি, সোড়া ও হাইডোজ দিতে হয়।
আড়ৎদার জহুরুল ইসলাম বলেন, হাটে আসা বেশীর ভাগ খেজুরের গুড়ে মাত্রারিক্ত চিনি মেশানো আছে। যার কারণে এই অ লের খেজুর গুড়ের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকে গুড়ের দামও একটু বেশি।
তবে পুঠিয়া উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, ইতোমধ্যে জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার শাকিল আহম্মেদকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলার বেশ কয়েকটি গুড়ের কারখানা পরিদর্শন করেছেন। খুব দ্রুত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা: আলী মাজরুই রহমান প্রত্যয় বলেন, খেজুর গুড়ে চিনি, সোডা, রং, ফিটকারীসহ নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর কারণে মানব দেহের কিডনি ড্যামেজসহ খাদ্যনালিতে ক্যান্সার ও লিভারে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ, পিএএ বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে দ্রুত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।-মানবজমিন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com