মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

টেনিস বিশ্বের কালো নায়িকা

ড. মাহফুজ পারভেজ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩

‘সাদা বিশ্বে কালো ছিলো চরম উপেক্ষিত। বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সমাজে কৃষ্ণ নায়ক-নায়িকা উঠে এসেছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অসম সাহসে ও সুতীব্র লড়াইয়ের মাধ্যমে। তাদের সংগ্রামশীল অভিযাত্রার সাহিত্যিক অভিব্যক্তি পাওয়া যায় কালজয়ী উপন্যাস রুট্স: দ্য সাগা অফ অ্যান অ্যামেরিকান ফ্যামিলি-এর পৃষ্ঠাগুলোতে। বঙ্গানুবাদ যার শিরোনাম শিকড়ের সন্ধানে। আমেরিকান-কৃষ্ণাঙ্গ লেখক অ্যালেক্স হেলি রচিত আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস রচনার বহুবছর অতিক্রান্ত। ততদিনে সিভিল রাইটস, হিউম্যান রাইটস, সিটিজেন রাইটস আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় প্রান্তিক ও অবদমিত কালো মানুষগুলোর উত্থান ঘটতে থাকে পশ্চিমা সমাজে। মার্টিন লুথার কিং, ম্যালকম এক্স হয়ে মুষ্টিযুদ্ধে মোহাম্মদ আলী আর সাহিত্যে টনি মরিসন বিশ্বকে নাড়িয়ে দেন। তারপর অকল্পনীয় ঘটনা। মার্কিন মসনদে বারাক ওবামা। এবার সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় তালিকায় যুক্ত হলেন টেনিস বিশ্বের কালো নায়িকা সেরিনা উইলিয়ামস। জয় যদি ঈশ্বরের উপহার হয়, হার হলো তাঁর শিক্ষা, এই বিশ্বাসে আড়াই দশকের বেশি খেলোয়াড়ি জীবনে সেরিনা বদলে দিয়েছেন মহিলা টেনিসের সংজ্ঞা। সমীহ আদায় করে নিয়েছেন পুরুষ খেলোয়াড়দের। তাঁর সামনে থমকে গিয়েছে টেনিসে সাদা চামড়ার একচ্ছত্র দাপট।
তাঁর বাবা রিচার্ড উইলিয়ামসকে গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছিল একবার। রাগে এবং প্রতিবাদে টানা ১৪ বছর ইন্ডিয়ান ওয়েলস ওপেন খেলেননি সেরিনা। বর্ণবাদের আনুষ্ঠানিক বিদায়ে এতো বছর পরেও গায়ের রং কালো হওয়ায় খুন হয়েছিলেন সেরিনার সৎ বোন ইয়েতুন্ডে প্রাইস। তবু তিনি কৃষ্ণকলি হাসিতে উজ্জ্বল করেছেন টেনিস দুনিয়া।
‘যখন সবাই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে, তখনও নিজের উপর বিশ্বাস রাখা জরুরি, শুধু মুখে নয়, জীবনচেতনায় মানতেন তিনি কথাটি। কালো হওয়ার যাতনা, সামাজিক অবহেলা, আর্থিক বঞ্চনা, পারিবারিক দুর্যোগ অতিক্রম করে সম্ভবত এজন্যই তিনি নিজেকে আনতে পেরেছেন বিশ্বসেরাদের তালিকায়।
পরিবার ছিল বেশ বড়। অনেকগুলো ভাইবোন। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ায় ছিল আর্থিক ও মানসিক চাপ। ২০১১ সালে ফুসফুসে রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার গুরুতর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। এসব কিছুই সামলাতে হয়েছে তাঁকে একা। কোর্টের ভিতর সেরিনা যত মসৃণ, ততটা মসৃণ নয় ব্যক্তি সেরিনার জীবন। তবু তিনি বন্ধুর পথ পেরিয়ে এগিয়েছেন। বাড়িয়েছেন লড়াই করার শক্তি, স্পৃহা, জেদ। বিজয় দিয়ে জীবনের প্রতিটি অপমানের জবাব দিয়েছে সেরিনার র‌্যাকেট। সমৃদ্ধ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়নি। কিন্তু তাঁর কালো শরীরের শিরায় শিরায় ছিল লড়াকু রক্ত আর ছিল আফ্রো-আমেরিকান গতিময়তার অত্যন্ত সমৃদ্ধ স্পিরিট।
টেনিসের ইতিহাসে ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম এমনি এমনি হয়নি। তার পিছনে রয়েছে সেরিনার কঠোর সাধনা, অধ্যাবসায়। রয়েছে গভীর জীবনবোধ। কী সেই জীবনবোধ? বার বার ফুটে উঠেছে সেরিনা উইলিয়ামসের নানা বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, কোনও কিছুর মূল্যেই আমি হারতে পছন্দ করি না। তবে অবাক করার মতো হলেও এটা সত্যি আমি জিততে জিততে বড় হইনি, অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছি।
একটি কথা সেরিনা বার বার বলেছেন, কোন পরিবেশ থেকে এসেছি, কোথা থেকে এসেছি- এগুলো একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বপ্ন এবং লক্ষ্য থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। স্বপ্ন-সফল করতে তাঁর ছিল তীক্ষ্ণ পরিকল্পনা, প্ল্যান ‘এ’ কাজ না করলে আমার প্ল্যান ‘বি’, ‘সি’, এমনকী প্ল্যান ‘ডি’ তৈরি করা থাকে। আর আমি মনে করি, ‘কাউকেই আমার নিজের থেকে বেশি পরিশ্রম করতে দেওয়া উচিত নয়। জন্মগতভাবে সেরিনা সৌভাগ্যবতী ছিলেন না। তাঁর জীবন ছিল উত্থান-পতনে ভরপুর, কণ্টকাকীর্ণ। তবু তিনি নিজেকে ভাগ্যবান বলে বিশ্বাস করতেন। প্রায়ই অনেক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘আমি ভাগ্যবান। কারণ, আমার ভিতরে যেটুকু ভয় ছিল, তার থেকে জেতার খিদেটা অনেক বেশি ছিল।
পরিসংখ্যান অনুয়াযী, বিশ্বের এক নম্বর হিসাবে সেরিনা ছিলেন মোট ৩১৯ সপ্তাহ। স্টেফি গ্রাফ ছিলেন সর্বোচ্চ ৩৭৭ সপ্তাহ। নাভ্রাতিলোভা ছিলেন ৩৩২ সপ্তাহ। সেরিনা তৃতীয়। সব মিলিয়ে সেরিনার সিঙ্গলস খেতাবের সংখ্যা ৭৩। ডাবলস খেতাব ২৩টি। নাভ্রাতিলোভা সিঙ্গলস খেতাব জিতেছিলেন ১৬৭টি। ডাবলস আরও ১৭৭টি। ১৮টি সিঙ্গলস গ্র্যান্ড স্ল্যাম-সহ তাঁর মোট গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের সংখ্যা ৫৯। ১৮টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম-সহ এভার্টের সিঙ্গলস খেতাব ১৫৭টি। ৩০ বছরে অবসর নেওয়া গ্রাফের সিঙ্গলস খেতাব ১০৭। তাঁর গ্র্যান্ড স্ল্যাম ২২টি। প্রতিটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম চার বার করে জেতার কৃতিত্ব রয়েছে।
মোট জয়ের নিরিখে এঁদের থেকে অনেক পিছনে সেরিনা। গ্রাফ ৮৯ শতাংশ সিঙ্গলস ম্যাচে জয় পেয়েছেন। সেরিনা জিতেছেন ৮৫ শতাংশ সিঙ্গলস ম্যাচ। ১৯৮৪ সালে গ্রাফ চারটি গ্ল্যান্ড স্ল্যামের সঙ্গে অলিম্পিক্স সোনাও জিতেছিলেন। টেনিস বিশ্বে তিনিই একমাত্র, যাঁর ক্যালেন্ডার গোল্ডেন স্ল্যাম রয়েছে। নাভ্রাতিলোভা ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত টানা ছ’টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। সেরিনা ২০০২ থেকে ২০০৩ এবং ২০১৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত দু’বার টানা চারটি করে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন। তবু তিনি বিশ্বসেরাদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, জয় দিয়ে একজন খেলোয়াড়ের বিচার হয় না। পড়ে গিয়ে কী করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, সেটা দিয়ে বিচার হয়। ইতিহাসের বিচার সেরিনার মূল্যায়ন করতে ভুল করেনি। টেনিস বিশ্বের কালো নায়িকার সম্মানে অভিষিক্ত করেছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com