সম্প্রতি গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। বেড়েছে দামও। সরবরাহও কমে গেছে। তবে এ সংকট সমাধানে বিকল্প খুঁজে নিয়েছেন হবিগঞ্জের গ্রামা লের মানুষ। গোবরের জ্বালানিতে ভর করছেন তারা।
গ্রামা লের বেশিরভাগ পরিবারেই গরু রয়েছে। গরুর গোবর দিয়েই তৈরি হচ্ছে এসব জ্বালানি। বাড়তি খরচ নেই। ফেলারও কিছু নেই। ছাই পর্যন্ত কাজে লাগে। এজন্য কদর বেড়েছে এসব জ্বালানির।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই ও মাধবপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা হাওরবেষ্টিত। যুগ যুগ ধরে হাওরা লের মানুষের কাছে জনপ্রিয় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘চটা’ ও ‘গুমুট’। গরুর গোবর, ধানের কুড়া ও খড় আর বাঁশের চটি হলেই তৈরি করা যায় এসব জ্বালানি। প্রথমে ধানের খড় গোল করে বিছিয়ে দুপাশে গোবর লেপন দিয়ে তৈরি হয় চটা। পরে রোদে ভালো করে শুকিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়। এরপর এগুলো কেটে টুকরা টুকরা করে চুলায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অপরটিকে বলা হয় ‘গুমুট’। গোবরের সঙ্গে ধানের কুড়া মিশিয়ে একটি বাঁশের কাঠিতে মুষ্টি লেপন দিয়ে তৈরি হয় এটি। এরপর রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হয়। শুকিয়ে গেলেই ব্যবহার করা যায় জ্বালানি হিসেবে। এসব জ্বালানি দিয়ে আগুন ভালো জ্বলে। খাবারেও বাড়তি স্বাদ মেলে। জ্বালানি শেষে এ থেকে বের হওয়া ছাই ফসলের জমিতে ব্যবহার করা হয়। এটি একই সঙ্গে উৎকৃষ্ট সার ও পোকা দমনেও ভূমিকা রাখে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও গ্রামাঞ্চলে এলপি গ্যাস সহজলভ্য হয়ে ওঠে। ঘরে ঘরে শুরু হয় গ্যাসের ব্যবহার। কিন্তু সম্প্রতি দেশে গ্যাসের সংকট দেখা দেয়। বিদেশ থেকে আমদানিও বন্ধ হয়ে যায়। দিন দিন এটির দামও বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে এলপি গ্যাস অনেকটা দুর্লভ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় জ্বালানি সংকট সমাধানে গ্রামের মানুষ আবারও আগের জ্বালানিতে ফিরে যেতে শুরু করেছেন। এখন গ্রামা লে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েই দেখা মেলে চটা ও গুমুট। বাড়িতে বাড়িতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
বানিয়াচং উপজেলার তারাসই গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে গ্যাসের দাম ছিল ৬০০-৭০০ টাকা। এখন হয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। এত টাকা দিয়ে এখন আমাদের পক্ষে গ্যাস ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তাই ধানের খড় (স্থানীয় ভাষায় ন্যাড়া) আর গরুর গোবর দিয়ে চটা তৈরি করি। এটা দিয়ে রান্না করি। এর ছাই মাঠে ছিটিয়ে দিই। সারের কাজ করে।’ বৃদ্ধা সাহেদা বিবি বলেন, ‘গ্যাসের দাম বেশি। এখন আমরা গ্যাস কিনতে পারি না। তাই চটা দেই। এগুলো শুকিয়ে গেলে তা দিয়ে রান্না করি।’
উপজেলা সদরের জাতুকর্ণ পাড়ার বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন, ‘গ্যাস দাম বেড়েছে। এখন গ্যাস কিনে ব্যবহার করার মতো নয়। ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় এক সিলিন্ডার আনলে ১৫ দিনও যায় না। তাই আমরা আবারও চটা, গুমুট দিয়ে রান্না করছি।’
একই এলাকার সেলিম মিয়া বলেন, ‘ধানের খড় আছে। গরুর গোবর আছে। কিছুই কিনতে হয় না। অথচ গ্যাস সময়মতো পাওয়া যায় না। মানুষকে অলসও বানাচ্ছে। অথচ আমরা যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলছি।’ বানিয়াচং উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি চটা, গুমুট দিয়ে আমাদের মা-চাচিরা রান্না করেছেন। মধ্যে গ্যাস সিলিন্ডার আসার পর এ ধরনের জ্বালানি কিছুটা কমে যায়। গ্রামগঞ্জেও সিলিন্ডার সহজলভ্য হয়ে ওঠে। এখন গ্যাসের দাম বাড়ায় গ্রামের মানুষ আবারও গোবরের জ্বালানির দিকে ঝুঁকছেন।
তিনি বলেন, চটা ও গুমুট দিয়ে রান্না করা খাবার গ্যাসের খাবারের চেয়ে অনেক বেশি স্বাদের হয়। এর আরেকটি উপকার হচ্ছে জ্বালানির পর এর ছাই সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।-জাগোনিউজ২৪.কম