রেলওয়ে পশ্চিম জোনের জনগুরুত্বপূর্ণ জংশন রেল স্টেশন হওয়া স্বত্ত্বেও সান্তাহার থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোতে চাহিদার তুলনায় কম আসন বরাদ্দ থাকায় ঢাকামূখী যাতায়াতকারী ট্রেন যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাঙ্খিত ট্রেনের টিকেট না পেয়ে অনেক যাত্রীকে কালোবাজারে দ্বিগুন দামে টিকেট কিনতে হয়। রেলওয়ে পশ্চিমজোন রাজশাহী সূত্রে জানা গেছে, সান্তাহার জংশন স্টেশন হয়ে দিন ও রাতে ঢাকা রুটে মোট ৭টি ট্রেন চলাচল করে। এগুলো হলো রংপুর, একতা, দ্রুতযান, লালমনি, নীলসাগর ও রংপুর আন্তঃনগর এক্সপ্রেস। এ সব ট্রেনযোগে বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলার ঢাকাগামী ভিআইপিসহ অধিকাংশ যাত্রীরা সান্তাহার হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেলযাত্রা সহজ, আরামদায়ক ও ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার কারণে এসব আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোর যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বাসের তুলনায় ট্রেনের টিকিটের মূল্যও কম হওয়ায় ট্রেন যাত্রীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, নওগাঁ-সান্তাহার থেকে ঢাকায় যেতে বাসের ভাড়া ৭০০ টাকা। কিন্তু ট্রেনের ভাড়া মাত্র ৩৬০ টাকা। ফলে ঢাকামূখী যাত্রীরা ট্রেনে যেতেই আগ্রহী হয়। এসব কারণে ট্রেনে যাত্রীদের চাপ বেশী থাকে। কিন্তু যাত্রী সংখ্যার তুলনায় ট্রেনে বরাদ্ধকৃত আসন কম থাকায় টিকিট পাওয়া নিয়ে একদিকে চলে যেমন প্রতিযোগিতা অন্যদিকে কালোবাজারে টিকেট বিক্রিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করার সুযোগ তৈরি হয়। সান্তাহার স্টেশনের বুকিং অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেসে মোট আসন সংখ্যা ৪৫টি। তারমধ্যে শোভন চেয়ার কাউন্টারে ২০টি, অনলাইনে ২০টি, এসি কাউন্টারে ৩টি ও অনলাইনে ২টি টিকেট মাত্র। একতা এক্সপ্রেসে মোট আসন সংখ্যা ৫০টি। তারমধ্যে কাউন্টারে শোভন চেয়ার ২৫টি, অনলাইনে ২২টি, এসি কাউন্টারে ২টি ও অনলাইনে ১টি টিকেট মাত্র। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে মোট আসন সংখ্যা ৭৮টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার কাউন্টারে ৩০টি, অনলাইনে ৩০টি, এসি কাউন্টারে ৮টি, অনলাইনে ৭টি, বাথ কাউন্টারে ২টি ও অনলাইনে ২টি টিকেট মাত্র। দ্রুতযান এক্সপ্রেসে মোট আসন স্যখ্যা ১০৭টি। এর মধ্যে শোভন চেয়ার কাউন্টারে ৫০টি, অনলাইনে ৫০টি, এসি কাউন্টারে ২টি, অনলাইনে ১টি, বাথ কাউন্টারে ২টি ও অনলাইনে ২টি টিকেট মাত্র। লালমনি এক্সপ্রেসে আসন সংখ্যা মোট ৫০টি। তার মধ্যে শোভন চেয়ার কাউন্টারে ২৫টি, অনলাইনে ২০টি, এসি কাউন্টারে ৩টি ও অনলাইনে ২টি টিকেট মাত্র। পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে মোট আসন সংখ্যা ১১৯টি। তার মধ্যে শোভন চেয়ার কাউন্টারে ৫০টি, অনলাইনে ৫০টি, এসি কাউন্টারে ৮টি, অনলাইনে ৭টি ও বাথ কাউন্টারে ৪টি টিকেট মাত্র। নীলসাগর এক্সপ্রেসে মোট আসন সংখ্যা ৬৪টি। তার মধ্যে শোভন চেয়ার কাউন্টারে ২৫টি, অনলাইনে ২২টি, এসি কাউন্টারে ৮টি, অনলাইনে ৭টি, বাথ কাউন্টারে ১টি ও অনলাইনে ১টি টিকেট মাত্র। সান্তাহার থেকে ঢাকাগামী ৭টি আন্ত:নগর এক্সপ্রেস ট্রেনের আসন সংখ্যা সর্বমোট ৫১৩টি, অথচ সান্তাহার থেকে প্রতিদিন ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা হাজারের অধিক। ঢাকাগামী যাত্রীদেরকে দূরÍদুরান্ত থেকে সান্তাহারে এসে টিকেটে জন্য কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট না পেয়ে হতাশ হতে হয়। রেলসূত্রে আরো জানা যায়, যাত্রীদেরকে টিকেট প্রাপ্তির জন্য ৫ দিন পূর্ব থেকেই কাউন্টার অথবা অনলাইন থেকে টিকেট স্যগ্রহ করার ব্যবস্থা চালু আছে। সে ক্ষেত্রে অনলাইনে রাত ১২ টার পর থেকে এবং কাউন্টারে সকাল ৮ টা থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু অনলাইনে রাত ১২ টার পর একশ্রেণির অসাধু চক্র কালোবাজারে টিকেট চড়া দামে বিক্রির আশায় অনলাইনের টিকেট কিনে নেয়। সান্তাহার স্টেশনের আশে-পাশে এ রকম কয়েকটি অনলাইনের দোকানদাররা এই চক্রের মূল হোতা বলে বিভিন্ন নির্ভযোগ্য সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে এ গুলো সাবধানতার সাথে যাত্রীদের কাছে কখনও কখনও দ্বিগুন-তিনগুন দামে বিক্রি করে। অপর দিকে কাউন্টার থেকে সকাল ৮ টার পর থেকেই টিকেট বিক্রি শুরু করা হলেও মাত্র ৫/৬ মিনিটেই সব টিকেট শেষ হয়ে যাবার ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে। অনেকেই রাতে এসেই টিকেটের আশায় সান্তাহার বুকিং কাউন্টারে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট মেলাতে না পেরে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করে। জানতে চাইলে বুকিং ক্লার্ক মতিউর রহমান জানান, সান্তাহার থেকে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যার তুলনায় টিকেটের পরিমান কম হওয়ার কারণে যাত্রীরা টিকেট না পেয়ে নানা রকম অভিযোগ করে। কিন্তু কাউন্টারের বুকিং ক্লার্কদের সাথে এক শ্রেণির টিকেট কালোবাজারীদের যোগসাজস রয়েছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ পাওয়া যায়। ফলে লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট মেলে না। ঢাকাগামী যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির কারনে সান্তাহার জংশন স্টশনে প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনে চাহিদা মোতাবেক আসন অথবা সান্তাহারের জন্য অতিরিক্ত কোচ বরাদ্ধ করা প্রয়োজন বলে ভূক্তভোগীদের দাবী।