বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

পরকীয়া প্রতিরোধে ইসলামী অনুশাসন

উম্মে আহমাদ ফারজানা:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

বিশ্বব্যাপী পরকীয়া পারিবারিক অশান্তির কারণ। এর জের ধরে ভেঙে পড়ছে পরিবার কাঠামা। ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও স্বপ্ন-সাধ। কখনো কখনো খুনখারাবির মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটছে পরকীয়ার কারণে। পরকীয়া সম্পর্ক ভুক্তভোগীর মনে ক্রোধ, অশান্তি, দুঃখ, অবিশ্বাস ও অশেষ মনোযন্ত্রণার সৃষ্টি করে। পরকীয়ার প্রধান কারণ আল্লাহর আইনবহির্ভূত জীবনযাপন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়, তার জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর হয়ে ওঠে…।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১২৪) পরকীয়া মানুষকে ব্যভিচারের দিকে টেনে নেয়। অথচ এটি ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল/ইসরা, আয়াত : ৩২)
নি¤েœ পরকীয় প্রতিরোধে ইসলামী অনুশাসন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
আল্লাহর ভয় : বিবাহের খুতবায় পবিত্র কোরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করতে হয়, যা যথাক্রমে সুরা নিসা, আয়াত : ১, সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০২ এবং সুরা আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১। (সূত্র : সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১১৮) এই তিন আয়াতের মূলকথা হলো আল্লাহর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত রাখা। গভীর আল্লাহভীতি না থাকলে পারিবারিক জীবনের এই সঙ্গিন পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন। প্রকৃত আল্লাহভীতি মানুষকে সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত রাখতে পারে।
বিবাহের ক্ষেত্রে সমতাবিধান : মুসলিম বিবাহে সমতাবিধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে ‘কুফু’ বলা হয়। অর্থাৎ বর ও কনের সমান-সমান হওয়া, একের সঙ্গে অন্যজনের সামঞ্জস্য হওয়া। তবে সেটি প্রধানত গণ্য হবে দ্বিন পালনের ব্যাপারে। ইমাম খাত্তাবি (রহ.) তাই লিখেছেন, বহুসংখ্যক মনীষীর মতে, চারটি বিষয়ে কুফু বিবেচনা করবে : দ্বিনদারি, স্বাধীনতা (আজাদি), বংশ ও শিল্প-জীবিকা। তাদের অনেকে আবার দোষত্রুটিমুক্ত ও আর্থিক সচ্ছলতার দিক দিয়েও কুফুর বিচার গণ্য করেছেন। ফলে কুফু বিচারের জন্য মোট দাঁড়াল ছয়টি গুণ। হানাফি মাজহাবে কুফুর বিচারে বংশমর্যাদা ও আর্থিক অবস্থাও বিশেষভাবে গণ্য। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে উত্তম নারী গ্রহণ করো এবং সমতা (কুকু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ রাখো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯৬৮) ছেলে-মেয়ের সম্মতিতে বিয়ের ব্যবস্থা করা : বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর সম্মতি থাকা জরুরি। আর পরকীয়া থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী একে অন্যকে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে বিয়ের পরে তাদের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হবে। অনেক পরিবার এ ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না বা তাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না। অথচ এটা ইসলামবিরোধী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে, তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯) পরিবারে ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা : পরিপূর্ণ ইসলামী পরিবেশ ও ইসলামী শিক্ষা পরকীয়ার মতো পরিবার বিধ্বংসী পাপ থেকে নারী-পুরুষকে রক্ষা করতে পারে। ইসলামী শিক্ষা, পর্দা প্রথা, দৃষ্টি নি¤œগামী রাখার নির্দেশ, বিনা প্রয়োজনে মাহরাম থেকে দূরে থাকার বাস্তবধর্মী আমলগুলো মানুষকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। স্ত্রীর দ্বিন-দুনিয়ার প্রয়োজনমাফিক শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করাও স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার। এ ক্ষেত্রে কোরআনে নির্দেশ হলো, ‘তোমরা তোমাদের নিজেকে ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
গায়র মাহরাম থেকে দূরে থাকা : মাহরাম নয়, এমন পরপুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ না রাখা। কেননা চারিত্রিক নির্মলতা ও মানসিক পবিত্রতা রক্ষায় এটি খুবই জরুরি। কোনো গায়র মাহরাম নারীর একাকী অবস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করা শয়তানেরই কাজ। এ জন্যই ইসলাম উক্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার আজকের এই দিনের পর থেকে কোনো পুরুষ একজন বা দুজন পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কোনো স্বামী থেকে দূরে থাকা নারীর সঙ্গে নির্জনে দেখা করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২১৭৩)
পরিপূর্ণ পর্দা করা : পরকীয়া থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হলো পরিপূর্ণ পর্দা মেনে চলা। বেপর্দা হয়ে চলাচলের কারণে একে অন্যের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়, নিজেদের মধ্যে অবৈধ ভাব বিনিময় হয়, স্বামী-স্ত্রীর দুর্বল দিক নিয়ে কথা হয় এবং পরবর্তী সময়ে পরকীয়ার দিকে ধাবিত হয়। মুসলিম নারীর ওপর পর্দা ফরজ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনা স্ত্রীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের বড় চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। বস্তুত আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা : আহজাব, হাদিস : ৫৯)
সফরে সঙ্গে মাহরাম থাকা : পরকীয়া থেকে বাঁচতে দূরের সফর হলে অবশ্যই স্বামী অথবা মাহরাম সঙ্গে থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, নারীরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই, এমতাবস্থায় কোনো পুরুষ কোনো নারীর কাছে গমন করতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬২)
পরিবারের সঙ্গে থাকা : আজকাল বিভিন্ন কারণে নারী-পুরুষ আলাদা থাকে। ফলে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে যাদের স্বামী দূরে অবস্থান করে তাদের সঙ্গে পরপুরুষ একাকী হবে না। সন্তানদের সঙ্গে রাখবে। সন্তান না থাকলে মা, বোন, ভাগ্নি-ভাতিজি, ননদ, শাশুড়ি, পিতা, আপন ভাই কিংবা নিকটাত্মীয় নারীদের সঙ্গে থাকবে। স্বামী-স্ত্রী কোনো কারণে একত্রে থাকা সম্ভব না হলে নিয়মিত নফল সিয়াম পালন, কোরআন তিলাওয়াত, নবীজীবন, সাহাবিচরিত ও ইসলামী বই-পুস্তক বেশি বেশি পাঠ করা এবং পারিবারিক ও অন্য কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করা।

প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ : বর্তমান প্রযুক্তির যুগে পরকীয়া অনেক সহজ। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফ্রি কলিং অ্যাপ ও মোবাইল ফোন এই কাজটি ভীষণ সহজ করে দিয়েছে। এখন আর কারো সঙ্গে দেখা করার জন্য গোপনে তার ঘরের পেছনে গিয়ে মশার কামড় খেতে হয় না। মুঠোফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে এক মুহূর্তেই প্রেমিকার দেখা পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com