প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গভীর মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শোষণবিরোধী সোচ্চার কণ্ঠস্বর আমাদের আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে অনুপ্রেরণা যোগাবে । গত বৃহস্পতিবার দেয়া বাণীতে গতকাল শুক্রবার ‘নজরুল উৎসব’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে নজরুল উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তাগণ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সামগ্রিক শিল্পসৃষ্টি শুদ্ধরূপে ধারণ, রক্ষণ ও পরবর্তী প্রজন্মকে এই অমূল্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি তাদের এই মহৎ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। আমি নিশ্চিত যে আমাদের জাতীয় কবির গভীর মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শোষণ বিরোধী সোচ্চার কণ্ঠস্বর আমাদের আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৩ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী ‘নজরুল উৎসব’-এর আয়োজন হচ্ছে জেনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছেন। একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে বাঙালির আত্মপরিচয় বিনির্মাণের ক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি দখলদারদের থেকে মুক্তির সংগ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের তেজোদীপ্ত কবিতা, গান ও সাহিত্য আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পথ নির্দেশ করেছে। তার কালজয়ী সাহিত্যসম্ভার নবীন প্রজন্মকেও দেশপ্রেমের গভীর মন্ত্রে দীক্ষিত করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাগরণের কবি নজরুল ইসলামের দর্শন দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর তার নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়। শুধু তাই নয়, তিনি কবি রচিত ‘চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল’ গানটিকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে নির্ধারণ করেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ২৫ মে কবির ৭৩তম জন্মদিন পালনের উদ্দেশে ২৪ মে তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে এসে নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং তার জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে জাতীয় কবিকে ডি লিট উপাধি প্রদান করে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে কবির স্বাস্থ্যের অবনতি হলে, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাকে তৎকালীন পিজি হাসপাতাল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী খুনিচক্র ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। কবিও হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি। ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জাতীয় কবির কণ্ঠস্বর ৪০-এর দশকেই চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে ততদিনে তিনি আমাদের জন্য রেখে যান অজস্র গান, কবিতা ও নানান অগ্নিঝরা রচনার অমূল্য সাহিত্য ভান্ডার। নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ধর্মমত নির্বিশেষে সকল বাঙালি মিলেমিশে সমতার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সাম্যবাদের কবি। সেটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’-এর ভিত্তি। আমরা জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা কুমিল্লায় একটি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বরাদ্দকৃত কবি ভবনে প্রতিষ্ঠিত কবি নজরুল ইনষ্টিটিউটের জন্য ২টি বেজমেন্টসহ ৯ তলা নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আমরা যে ‘জয় বাংলা’-কে জাতীয় শ্লোগান হিসেবে গ্রহণ করেছি- তাও প্রথম উঠে এসেছিল আমাদের জাতীয় কবির প্রবন্ধে ও কবিতায়। আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেউই আমাদের মাঝে নেই। রয়ে গেছে তাদের আকাঙ্ক্ষ এবং স্বপ্ন। আমরা সেটাকে বাস্তবে পরিণত করার পবিত্র ব্রত গ্রহণ করলেই তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখানো হবে। তিনি ‘নজরুল উৎসব’ আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান এবং এর সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন।