সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এমপি‘র কাবিখার টাকায় লালুয়াপাড়ায় গ্রামীণ সড়ক সংস্কারে সীমাহীন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৬ লাখ টাকার বারাদ্দ থাকলেও মাত্র ১ লাখ টাকা মাটি ফেলে নামমাত্র সংস্কার করা হয়েছে। বিশেষ করে নতুন মাটি ফেলার পরে সড়ক সরু হয়ে গেছে। এছাড়া মাটি সমান না করায় চলাচলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। সিরাজগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে প্রথম পর্যায়ের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-গম) ১০ মেট্রিক টন বরাদ্দ দিয়েছেন লাজিমের মোড় হতে লালুয়া পাড়ার মাদ্রাসার জমি পর্যন্ত সড়ক সংস্কার কাজের জন্য। সরেজমিনে দেখা গেছে, লাজিমের মোড় হতে মাদ্রাসার জমি পর্যন্ত সড়কটি দৈর্ঘ্য আধা কিলোমিটারেরও কম হবে। সড়কটির শেষের দু‘পাশের গর্তে ১ থেকে দেড় ফুটের মতো করে মাটি ফেলা হয়েছে। আর উঁচু জায়গাতে আধা ফুটেরও কম মাটি পড়েছে। সরু সড়ক দিয়ে ১টি মোটরসাইকেল ও ১টি বাইসাইকেল এক সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মাটি সমান না করায় হেঁটে চলাও কষ্টের। সড়ক সংস্কার প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও ২ নম্বর লালুয়ামঝিরা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আছালত হোসেনের সরল স্বীকারোক্তি, “১০ টন গমের দাম প্রায় ৬ লাখ টাকা। কিন্তু মাত্র দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে আমাকে। সেই টাকার বিভিন্ন খরচ বাদ দিয়ে লাজিমের মোড় হতে লালুয়া পাড়া মাদ্রাসার জমি পর্যন্ত সড়কে মাটি ফেলার প্রকল্পটি লাখ খানেক টাকায় সম্পূর্ণ করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বরাদ্দ আসে ঠিকই। কিন্তু বেশিরভাগ টাকা অফিস কেটে রেখে দেয়। এ বছরে আর সড়কের সংস্কার কাজ হবেনা। আবার বরাদ্দ পেলে বাকি কাজ করে দেওয়া হবে। ” আছালত হোসেন ২ নম্বর লালুয়ামাঝিরা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতিও বটে। লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের লালুয়া পাড়ার আব্দুস সামাদ(৫৫) বলেন, ভেবেছিলাম সড়কে বেশি করে মাটি ফেলে আগের চেয়ে প্রসস্থ করা হবে। তারপর মাটি সমান করে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে। এখন ছাইকেল চালিয়ে যাওয়া যায়না। এটেল মাটির উঁচু নিচু সড়ক দিয়ে হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। লালুয়া পাড়ার সবিতা খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, আগের সড়ক প্রসস্থ ও সমান ছিল। যাতায়াতের কোনো অসুবিধা হতো না। কিন্তু নতুন করে মাটি ফেলার পরে সড়কটি সরু হয়ে গেছে। লোকজন চলাচলের সময় ভ্যান ঢুকে পড়লে সড়কের ঢালে দাড়িয়ে ভ্যান যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হয়। লালুয়া পাড়ার ছাইদুল ইসলাম বলেন, ড্রাম ট্রাকে করে সামান্য কয়েক গাড়ি মাটি ফেলা হয়েছে সড়কে। বৃষ্টি হলেই বেশিরভাগ মাটি ধসে যাবে। লালুয়া পাড়ার জহির আলী ফকির(৭০) বলেন, লালুয়া পাড়ায় ৫ শতাধিক মানুষের বসবাস। বাড়ি থেকে বেড় হয়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা ছিলনা আমাদের। বন্যার সময় নৌকায় পারাপার হতাম। শুষ্ক মৌসুমে জমিই আইল দিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেদের জমির জায়গা ছেড়ে দিয়ে নিজেরাই মাটি কেটে সড়ক নির্মাণ করেছিলাম ১৩ বছর আগে। তারপর তিন বছর সামান্য করে মাটি ফেলা হয়েছে। মরার আগে বুঝি ভালো সড়ক দেখে যেতে পারবো না ! উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অতিঃ দাঃ গোলাম রাব্বানী বলেন, প্রয়োজনে ড্রেসিং করে মাটি সমান করে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ -৩ (তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও সলঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ দৈনিক খবরপত্রকে বলেন, সড়কের কাজের অসঙ্গতির বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী ও সড়ক সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি আছালত হোসেনের সাথে কথা বলবেন।