বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৩৮৭তম সভা অনুষ্ঠিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে দ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে -আমান শ্রীমঙ্গলে নারী চা শ্রমিক-কর্মজীবী নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে সংলাপ কালীগঞ্জে সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম : আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বগুড়ার শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত-নিহতদের স্মরণসভা দেশবিরোধী চক্রান্তকারীদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে-রেজাউল করিম বাদশা দুর্গাপুরে আইনজীবীদের মানববন্ধন কয়রায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের প্রতিবাদে জলঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ দুর্গাপুরে শেষ হলো দুইদিন ব্যাপি কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ

ফটিকছড়ি পাইন্দং ডলু আশ্রয়ণ প্রকল্প- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত

আলমগীর নিশান (ফটিকছড়ি) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক থেকে পূর্বে কাঞ্চন নগর রাবার বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা প্রায় দুই কিলোমিটারের আকাঁ-বাঁকা পথ পেরোলেই চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পাইন্দং ডলু আশ্রয়ণ প্রকল্পের অবস্থান। যেখানে কিছুটা উচু-নিচু পাহাড়ে গড়ে উঠেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সারি সারি সবুজ ও রঙিন ঘর। যা দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন সবুজায়নের মাঝে লাল-সবুজের আবরণ ঢাকা ছোট্ট সবুজ গুচ্ছগ্রাম। প্রকল্পের চার পাশে সবুজের আবরণে ঢাকা। প্রতিটি সামনে শোভা পাচ্ছে নানা ফুলের বাগান। রয়েছে নানারকম শাকসবজির সমারোহ। এ যেন এক খ- শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন এক দল নারী পুরুষ ।
সরকারী রাবারবাগানের গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা গুচ্ছগ্রামের এই পল্লিতে বসবাস ৫৩৩ পরিবারের। হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে এখন স্বাবলম্বী গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। ডলু মুজিববর্ষ আশ্রয়ণ স্বপ্নযাত্রা প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের নির্মাণ কাজ চললেও এখনো শুরু হয়নি এ বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। যার ফলে এখানকার অর্ধশত ছেলেমেয়েকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরে গিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। তবে স্কুলের দূরত্ব দীর্ঘ হওয়ায় আশ্রয়ণের পাশে নির্মাণাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্রুত পাঠদান চালু করার দাবি তাদের।এছাড়াও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্র স্থাপনের দাবীও জানান। সম্প্রতি সরেজমিনে পাইন্দং ডলু আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পে প্রবেশের মুখে কাজ চলছে নির্মাণাধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। যা ২০২৩ সালে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল সংশ্লিষ্টরা। স্কুলের পাশেই ‘এহইয়াউচ্ছুন্নাহ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে’র অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে একটি জামে মসজিদ। যেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জুমা আদায় করতে পারছেন স্থানীয়রা। মসজিদ থেকে সামান্য পথ এগোলেই সারি সারি সবুজ ও লাল টিনের পাকা রঙিন ঘর। প্রতিটি ঘরের পেছনে নির্মাণ করা হয়েছে শৌচাগার। দেখে মনে হয়, পরিপাটি সাজানো ছবির মতো একটি গ্রাম। প্রতিটি ঘরের সামনে শোভা পাচ্ছে নানা ফুলের বাগান। রয়েছে নানারকম শাকসবজির সমারােহ। কেউ রোপন করেছে বেগুন-মরিচ, লাল ও পালং শাক। পাশের মাচায় লকলকিয়ে বাড়ছে শিম আর লাউ। কারো ঘরের আঙিনায় রয়েছে পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ শীতকালীন নানা সবজি। আম,আমড়া, লেবু, পেয়ারা ও মাল্টাসহ নানা জাতের ফলের বাগান দিন দিন এ গুচ্ছগ্রামকে সমৃদ্ধ করছে। ঘরে পাশেই কেউবা পালন করছে হাঁস- মুরগি আর গবাদিপশু। এদিক ওদিক ছােটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশারের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলের খামার আর নিজ আঙিনায় গড়ে তােলা সবজি বাগানের পরিচর্যায়। প্রকল্প ঘুরে আরও দেখা গেছে, এখানে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি ঘরে। সবাই মিলেমিশে আছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গীও হচ্ছেন তারা। নিজ ঘরের আঙিনায় সবজি ক্ষেতে কাজ করছিলেন পঞ্চাশ উর্ধ্ব মো. হানিফ। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাজিরহাট পৌরসভায় চার সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে ভাড়িচালিত সিএনজি (অটোরিকশা) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সংসার ও ছেলেমেয়েদের পড়া লেখার খরচ জোগানোর পর বাসা ভাড়া দিতে কস্ট হয়ে যেতো।এখন তার ঠাঁই হয়েছে সুন্দর আধা-পাকা ঘরে। জমিসহ ঘর পেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। এই প্রতিবেদককে দেখে ছুটে আসেন তার স্ত্রী মনি আক্তার। তিনি জানান, এখন আমাকে আর বাসা ভাড়া দিতে হয়না নিজের একটা ঘর হয়েছে। এখানে আশে পাশে কোন স্কুল নেই। তাই তিন ছেলেমেয়েকে তার বাপের বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাতে হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মাণাধীন স্কুলটি তাড়াতাড়ি চালু হলে এখানে বাচ্চাদের পড়ালেখা করাইতে পারবো। কাঞ্চন নগর এলাকার ষার্টোধ্ব আমেনা বেগম। তাঁর চোখেমুখে হাসির ঝিলিক। আমেনা বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ যুগল নুর নবী ও আনোয়ারা বেগম ঘর পেয়েছেন কি না, জিজ্ঞেস করতেই হাস্যোজ্জ্বল মুখে মাথা নাড়ার। নুর নবীর বয়স ৫৮ পেরিয়েছে পুত্র সন্তানটাও এখনও ছোট। দুই মেয়ে বিয়ে দিতে বসতভিটার দুই শতক জমি বিক্রি করেছেন।নৈশ্যপ্রহরী হিসেবে চাকুরী নিয়েছে বৃদ্ধা বয়সে। ডলু আশ্রয়ণ প্রকল্পে অন্যান্যদের মতো তিনিও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছে। পেয়েছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। তাই তিনি নামাজ পড়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন বলে জানান। নুর নবী ও আনোয়ারা বেগমের মতো ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রথম ও তৃতীয় ধাপে মোট ৫৩৩ টি পরিবারের ঠাঁই হয়েছে পাইন্দং ডলু আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এ ছাড়াও প্রথম ও তৃতীয় ধাপ মিলে বাগানবাজার ইউনিয়নের নতুনবাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০টি, দাঁতমারা দক্ষিণ কেচিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০টি, নারায়ণহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১১টি, ভুজপুরে ৮৭টি, কাঞ্চন নগরে ১০টি,সুয়াবিলে ৩৫টি, ধর্মপুরে ১৫টি, খিরামে ৯৫ টি, রোসাংগিরীতে ৫টি ও ফটিকছড়ি পৌরসভার রাঙ্গামাটিয়ায় ১৮২টি সহ সর্বমোট ফটিকছড়ি উপজেলায় ১ হাজার ৯৩ ভূমিহীন অসহায় পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২এর আওতায় জমিসহ পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি পরিবারকে কৃষি অফিস থেকে পুষ্টি বাগান করে দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে আম, আমড়া, পেঁপে ও মাল্টাসহ বিভিন্ন জাতের শাক- সবজি, ফলের চারা দেয়া হচ্ছে। যাতে তারা স্বাবলম্বী হতে পারেন। এছাড়াও বিনামূল্যে বিভিন্ন সারসহ কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।’ ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সাব্বির রাহমান সানি বলেন, ‘ফটিকছড়িতে প্রথম ও তৃতীয় পর্যায়ে সর্বমোট ১ হাজার ৯৩ টি ঘর ইতিমধ্যে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরের পাশে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় তাদের কে পারিবারিক পুষ্টি বাগান করে দেয়া হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন শাক-সবজি, মশলা ও ফলের গাছ রোপন করে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে তারা সারাবছর সেখান থেকে ভিন্ন ফলমূল খেতে পারে।’ ঘরের পাশাপাশি তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলতে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে ইউএনও আরো বলেন, ‘তাদেরকে বিভিন্নভাবে স্বাবলম্বী করতে চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন প্রদানসহ বিভিন্ন সহায়তা করা হচ্ছে যাতে তারা যেন স্বাবলম্বী হতে পারে। পাইন্দং ডলু আশ্রয়ণ প্রকল্পটি চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ কেন্দ্র। সেখানে একটি মসজিদ, একটি স্কুল প্রতিষ্টা করা হচ্ছে। যা আগামী বছর থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ অন্যান্য নাগরিক সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com