প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের ঘণ্টা বাজছে। গাছে গাছে নতুন পাতা আর ফুলের ছড়াছড়ি। প্রকৃতি রঙিন সাজে সাজতে শুরু করেছে। দেশের উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাসসহ নানা রঙের ফুল। এখান থেকেই জেলাজুড়ে ফুল সরবরাহ করা হয়। আর কয়েকদিন পর বসন্ত উৎসব। তারপর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই তিনটি দিবসের বাজার ধরতে প্রস্তুত এখানকার ফুল চাষিরা। ভালো মানের ফুল বাজারজাত করতে এখন তারা পরিচর্যায় ব্যস্ত। এ দিবসগুলোতে প্রায় কোটি টাকার বেচাকেনা করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন ফুল চাষিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলের ফুল বাগান ও ফুলবাজারগুলো ইতোমধ্যে ফুল চাষি, পাইকার, শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।
ফুল চাষিরা জানান, সাদুল্লাপুর উপজেলার ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে এ বছর চাষ হয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল। তাদের উৎপাদিত ফুল ঢাকা, রংপুরসহ গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার ও ব্যবসায়িরা এসে নিয়ে যাবেন। কখনও কখনও চাহিদামাফিক ফুল কার্টনে প্যাকেটজাত করে কুরিয়ারে পাঠানো হয়।
এখানকার ফুল চাষিরা প্রতি মৌসুমে ৭টি উৎসবকে ঘিরে মূল বেচাকেনা করে থাকেন। উৎসবগুলোর মধ্যে বিজয় দিবস ও খ্রীষ্টিয় নববর্ষের বেচাকেনা শেষ করেছেন তারা। আসন্ন বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে ফুল বাজারে তুলতে প্রস্তুত চাষিরা। তাই প্রতিটি বাগানে গোলাপ, গাঁদাসহ অন্যান্য ফুল পরিচর্যায় এখন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তারা আরও জানান, করোনা বিধিনিষেধে তারা দুই বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন। এ বছর যদি ফুলের দর ভাল পান তাহলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের ফুল চাষি মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বাগানে জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, গোলাপ, গাঁদা ও রজনীগন্ধা ফুলের চাষ হলেও, করোনা মহামারি শুরুর পর এবার এক বিঘা জমির বাগানে শুধু গোলাপ আর গাঁদার চাষ করে বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল সরবরাহ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফুলের ভরা মৌসুমে আমাদের নাওয়া খাওয়া থাকে না। তবে তুলনামূলক ফুলের চাহিদা ও দাম এখনও একটু কম। বর্তমানে গোলাপ ৮ থেকে ১০ টাকা পিস ও গাঁদা ৬শ থেকে ৭শ টাকা প্রতি হাজার বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা জমির ফুল মওসুমে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়।
একই ইউনিয়নের চকনদী গ্রামের ফুল চাষি মো. আনিসুর রহমান বলেন, ৪০ শতক জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গোলাপ রোপণ করা যায়। এতে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। যার মধ্যে চারার দাম ৫০ হাজার টাকা এবং সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরী আর রোপণসহ অন্যান্য খরচ আরও ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও পরিচর্যা ও পরিবহনে রয়েছে বাড়তি খরচ। একবার চারা রোপণে ৬ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত গোলাপ ফুল পাওয়া যায়।
সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ইদিলপুর এলাকার মাটি ফুল চাষে অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে বেশি ফলন পাওয়ায় ফুল চাষ করে যথেষ্ট লাভবান হতে পারছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দিবসকে সামনে রেখে তারা বাগানের ফুলগুলো ম্যাকিং করা শুরু করেছেন।’- রাইজিংবিডি.কম