আজকাল কিছু কিছু মানুষকে এ কথা বলতে শোনা যায়- ‘সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য’। মানুষের শুকরিয়া কেন আদায় করতে হবে? অথচ মহান রাব্বুল আলামিন তার কালামে পাকে বলেছেন, “সৎকর্মের প্রতিদান উত্তম পুরস্কার ছাড়া কী হতে পারে!” (সূরা আর রহমান, আয়াত ৬০) এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া আদায় করে না সে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে না।” (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং ৪৮১১) অন্যত্র রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “কাউকে কিছু দান করা হলে সে যেন সামর্থ থাকলে তার প্রতিদান দেয়। যদি সে সামর্থ না থাকে তবে সে যেন তার প্রশংসা করে। যে প্রশংসা করলো সে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি তা গোপন করলো সে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।” (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং ৪৮১৩)
এছাড়াও ইসলামের সোনালী ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দ্বীনের বৃহত্তর স্বার্থে অমুসলিমকেও সম্মান প্রদর্শন করার বৈধতার প্রমাণ পাওয়া যায়। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর খিলাফতকালে রোম সম্রাটের বিরুদ্ধে একটি মুজাহিদ বাহিনী পাঠালেন। এ বাহিনীর একজন সৈনিক ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন হুজাইফা (রা.)
রোম সম্রাট বহু প্রলোভন ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের প্রস্তাবে বারবার ব্যর্থ হয়ে বললো, ‘হে হুজাফা! তুমি আমার ললাটে চুমু খেলে তোমাকে মুক্তি দিব।’ তখন আব্দুল্লাহ বিন হুযাইফা (রা.) বললেন, চুমু খাব তবে আমার সাথে আমার সকল মুসলমান বন্দিদেরও মুক্তি দিতে হবে। সম্রাট এতে রাজি হলেন। তখন আব্দুল্লাহ বিন হুজাফা সামনে অগ্রসর হয়ে রোম সম্রাটের ললাটে চুমু খেলেন। তারপর সম্রাট আব্দুল্লাহ বিন হুযাফা ও তার সঙ্গীদের মুক্তি দিয়ে দিলেন।
সফর থেকে ফিরে এ ঘটনা তিনি খলিফা উমর (রা.)-কে শুনালে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। হযরত উমর বললেন, সকলের উচিত আব্দুল্লাহ বিন হুজাফার কপালে চুমু খাওয়া। এরপর হযরত উমর রা. দাঁড়ালেন এবং আব্দুল্লাহ বিন হুজাফার কপালে চুমু খেলেন। [আরব জাতির প্রথা অনুযায়ী ললাটে চুমু খাওয়া বিশেষ সম্মানের নিদর্শন।] (সংক্ষেপিত) এসব ঘটনা পর্যালোচনা করলে একথা প্রতীয়মান হয়, ইসলামের স্বার্থে একজন অমুসলিমকেও সম্মান প্রদর্শন করা বৈধ।