শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
মাধবদীতে লোডশেডিং ও গরমে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের বৃষ্টি প্রার্থনায় অঝোরে কাঁদলেন বরিশালের মুসল্লিরা আদিতমারীতে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্মশালা নওগাঁয় বোরো ধানের সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন ছড়ার পানিই ভরসা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর চকরিয়ায় একাধিক অভিযানেও অপ্রতিরোধ্য বালুখেকো সিন্ডিকেট রবি মওসুমে নওগাঁ জেলায় ৮৮ হাজার ১১০ মেট্রিকটন ভূট্টা উৎপাদনের প্রত্যাশা কটিয়াদীতে প্রচন্ড তাপ প্রবাহ, বৃষ্টির জন্য সালাতুল ইসস্তিকা বরিশালে দাপদাহে স্বাস্থ্য সুরক্ষার্থে শেবাচিম হাসপাতালে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা শুরু কালীগঞ্জে রাতের অন্ধকারে কৃষি জমির মাটি লুট

বর্তমান পরিস্থিতিতে: জামায়াতে নামাজ ও জুমআর নামাজ

ড. মুহাম্মদ আব্দুল জলিল
  • আপডেট সময় রবিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২০

ড. মুহাম্মদ আব্দুল জলিল

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সম্মানিত দায়িত্বশীল আলেমগণের সঠিক সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ অতিব জরুরী । করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জামায়াতে নামাজ ও জুমআর নামাজের জামায়াত বন্ধ রাখার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, সবাই ইসলামের বিধানকে গুরুত্ব দিয়েই তাদের মতামত পেশ করছেন। কেউ কেউ যে কোন অবস্থায় ছোট পরিসরে হলেও জামায়াতে নামাজ ও জুমআর নামাজ অব্যাহত রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করছেন। আবার কেউ কেউ রাসূল সা. এর হাদীস, খোলাফায়ে রাশেদীনের বাস্তব দৃষ্টান্ত ও পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং তাকওয়াবান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের মূল্যবান পরামর্শের আলোকে বর্তমানে জামায়াতে নামাজ ও জুমআর নামাজ বন্ধ রাখার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। এমতাবস্থায় বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত আলেমদের মতপার্থক্যের কারণে এমন একটি জটিল বিষয়ে সতর্কতার সাথে  সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবছেন। আমার বিশ্বাস, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, বিচক্ষণ, দূরদর্শী, রাসূলের সা. যুগে বিভিন্ন জটিল বিষয়ে প্রজ্ঞাপূর্ণ মতামত উপস্থাপনকারি সাহাবী হযরত ওমর রা এর খিলাফতকালীন সময়ে তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট নিম্নোল্লেখিত ঘটনাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দায়িত্বশীল ওলামায়ে কেরামকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।

ঘটনাটি হলো:আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. হতে বর্ণিত যে, উমার ইবনু খাত্তাব রা. সিরিয়ার দিকে রওনা করেছিলেন। শেষে তিনি যখন সারগ এলাকায় গেলেন, তখন তাঁর সঙ্গে সৈন্য বাহিনীর প্রধানগণ তথা আবূ উবাইদা ইবনু জাররাহ ও তার সঙ্গীগণ সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা তাঁকে জানালেন যে, সিরিয়া এলাকায় প্লেগের বিস্তার ঘটেছে। ইবনু আব্বাস রা. বলেন, তখন উমার রা. বলেন, আমার নিকট প্রবীণ মুহাজিরদেরকে ডেকে আন। তখন তিনি তাঁদের ডেকে আনলেন। উমার রা. তাঁদের সিরিয়ার প্লেগের বিস্তার ঘটার কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। তখন তাঁদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হলো। কেউ বললেন, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বের হয়েছেন, কাজেই তা থেকে প্রত্যাবর্তন করা আমরা পছন্দ করিনা। আবার কেউ কেউ বললেন, বাকী লোক আপনার সঙ্গে রয়েছেন এবং রাসুল সা. এর সাহাবীগণ। কাজেই আমরা সঠিক মনে করিনা যে, আপনি তাঁদের এই প্লেগের মধ্যে ঠেলে দিবেন। উমার রা. বললেন, তোমরা আমার নিকট থেকে চলে যাও।

এরপর তিনি বললেন, আমার নিকট আনসারদের ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম। তিনি তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলে তাঁরাও মুহাজিরদের পথ অবলম্বন করলেন এবং তাদের মতই মতপার্থক্য করলেন।

উমার রা. বললেন, তোমরা উঠে যাও। এরপর আমাকে বললেন, এখানে যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ কুরাইশী আছেন, যারা মক্কা জয়ের বছর হিজরত করেছিলেন, তাঁদের ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম, তখন তারা পরস্পরে মতভেদ করলেন ন্।া তারা বললেন, আপনার লোকজনকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা এবং তাদের প্লেগের মধ্যে ঠেলে না দেয়াই আমরা ভালো মনে করি। তখন উমার রা. লোকজনের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, আমি ভোরে সাওয়ারীর পিঠে আরোহন করবো (ফিরার জন্য)। অতএব তোমরাও সকালে সওয়ারীর পিঠে আরোহন করবে।

আবু উবাইদা রা. বললেন, আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর থেকে পালানোর জন্য ফিরে যাচ্ছেন? উমার রা. বললেন, হে আবু উবাইদা! যদি তুমি ব্যতীত অন্য কেউ কথাটি বলতো! হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর এক তাকদীর থেকে আল্লাহর আরেকটি তাকদীরের দিকে ফিরে যাচ্ছি। তুমি বলতো, তোমার কিছু উটকে যদি তুমি এমন কোন উপত্যকায় নিয়ে যাও যেখানে আছে দু’টি মাঠ। তন্মধ্যে একটি হলো সবুজ শ্যামল, আর অন্যটি হলো শুষ্ক ও ধূসর। এবার বলো ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ মাঠে চরাও তাহলে তা আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ীই চরিয়েছ। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তাহলে তাও আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ীই চরিয়েছ।

বর্ণনাকারি বলেন, এমন সময় আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রা. আসলেন। তিনি এতক্ষণ যাবত তার কোন প্রয়োজনের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যখন কোন এলাকায়  (প্লেগের) বিস্তারের কথা শোন, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোন এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না। বর্ণনাকারি বলেন, এরপর উমার রা. আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তারপর প্রত্যাবর্তন করলেন।

সূত্র ঃ বুখারি শরিফ, ৫ম খন্ড, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ৪র্থ প্রকাশ, জুন ২০১২ খ্রি. [৫৭৩০, ৬৯৭৩; মুসলিম ৩৯/৩২, হাঃ ২২১৯] (আ.প্র. ৫৩০৯, ই.ফা. ৫২০৫)।

সম্মানিত ওলামায়ে কেরামগণ, আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে, হযরত ওমর রা. এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতিটি ছিল খুবই প্রজ্ঞাপূর্ণ। এছাড়া তাঁর মতো একজন মর্যাদা সম্পন্ন সাহাবীকে যখন বলা হলো, আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর থেকে পালানোর জন্য ফিরে যাচ্ছেন? তখন তিনি তাকদীরের কি চমৎকার ব্যাখ্যাই দিয়েছেন; তাই না? আজকে একটি অদৃশ্য করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপি আমাদেরকে আক্রান্ত করছে। আমরা এর আক্রান্তের সীমানা নির্ধারণ করতে পারছিনা। এ কারণে অনেক মুসলিম দেশ ওলামায়ে কেরামের পরামর্শে নামাজের জামায়াত ও জুমআয়ার নামাজ স্থগিত করেছে। রাসূল সা. এর সময়ও সঙ্গত কারণে আযানের বাক্য পরিবর্তন করে বাড়িতে নামাজ আদায়ের জন্য বলা হয়েছে। ইসলামে মুসাফিরের জন্যও ফরজ নামাজকে সংক্ষিপ্ত করে জুমআর নামাজ আদায়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। সেদিন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে পড়লাম এ পর্যন্ত মহামারি ও যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে পবিত্র হজ্জের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত প্রায় ৪০ বার আদায় করা সম্ভব হয়নি। আগামী হজ্জের ব্যাপারে সৌদি সরকার এখনো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ভারতে তাবলীগ জামায়াতের একটি প্রোগ্রামের কারণে করোনা ভাইরাসে কয়েক জন মুসলমানের মৃত্যুবরণকে কেন্দ্র করে তাবলীগ জামায়াতকে মানবতার দূষমন আখ্যায়িত করে ইসলামের ব্যাপারে নেগেটিভ ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কাজেই সম্মাণিত দায়িত্বশীল ওলামায়ে কিরামগণ, আপনারা যারা মানবজাতির এমন ক্রান্তিকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা গভীরভাবে বিষয়টি নিয়ে ভাবুন এবং জরুরী ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। যতদূর জানি, ইসলামে ইজতিহাদে ভুল করলেও গুনাহ হয় না। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের মানুষকে আল্লাহ কঠিন বিপদে ফেলবেন না। কারণ এ দেশের মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসায় হাসিমূখে শহীদ হতে জানে। তথাপি আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষন না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সচেষ্ট না থাকে। পরিশেষে বলতে চাই, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের গুনাহের জন্য আমাদেরকে ধ্বংস করো না; এই মহামারি হতে শিক্ষা নিয়ে তোমার নিকট আমাদের আত্মসমর্পন করার তৌফিক দাও। আমীন (মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন। লেখক: ড. মুহাম্মদ আব্দুল জলিল, সহকারি অধ্যাপক, ইসলামী শিক্ষা বিভাগ, সরকারি সৈয়দ মহব্বত আলী কলেজ, দেলদুয়ার, টাঙ্গাইল।)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com