কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। হল প্রশাসনের আলোচনা শেষে গতকাল সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বহিষ্কৃত পাঁচ জন হলেন- শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, তার সহযোগী ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মিম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মি ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া জাহান। বহিষ্কৃত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ছাড়া বাকিরা ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা হলে গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি দুই দফায় ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং, শারীরিকভাবে নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ ওঠে। এতে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, মোয়াবিয়া জাহান, ইসরাত জাহান মিম ও হালিমা খাতুন উর্মিসহ কয়েকজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। পরে ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পৃথকভাবে শেখ হাসিনা হল ও শাখা ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।
সত্যতা পেল তদন্ত কমিটি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক নবীন ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে রাতভর ছাত্রলীগ নেত্রীর নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। তদন্তে নির্যাতনের সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের সত্যতা পাওয়া গেছে। নির্যাতনকারী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তাঁদের কী ধরনের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি । তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানায়, মোট ১১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া শতাধিক পৃষ্ঠার সংযুক্তি জমা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিবেদনের একটি কপি হাইকোর্টের নির্দেশনানুযায়ী হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। আর একটি কপি রেজিস্ট্রারের কাছে আছে। উপাচার্যের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। নির্যাতনের অভিযোগ করে ভুক্তভোগী ছাত্রী গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। এতে আইন বিভাগের অধ্যাপক রেবা ম-লকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ কমিটি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কার্যক্রম শুরু করে। ভুক্তভোগী, অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার শেষে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। এরপর গতকাল এ প্রতিবেদন জমা দেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও ফিন্যান্স বিভাগের তাবাচ্ছুমসহ ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।