গ্রাহক পর্যায়ে আবারও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। যেকোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ছে। ১ মার্চ থেকে তা কার্যকর হবে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান জানান, বিদ্যুতের দাম বাড়বে। যেকোনও সময় প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এর আগে, গেল ৩১ জানুয়ারি খুচরা ও পাইকারি দুই শ্রেণির গ্রাহকেরই বিদ্যুতের দাম ঘোষণা করে মন্ত্রণালয়। ওইদিনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। এতে গৃহস্থালির খুচরা বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়। সাধারণ গ্রাহকের ক্ষেত্রে ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬২ পয়সা করা হয়। ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৬২ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়াও, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৯৯ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ পর্যন্ত ইউনিট ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা এবং ষষ্ঠ ধাপে ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ১২ টাকা ৩ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৬৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে অবশ্যই জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সীমিত আয়ের লোকের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়বে। কারণ গড় হারে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। এ ক্ষেত্রে সরকার বিকল্প পদক্ষেপ নিতে পারতো।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার প্রেক্ষাপটে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। তিনি বলেন, রপ্তানি আয়ে আমরা ক্রমেই বাজার হারাচ্ছি। প্রতিযোগী দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ক্রমেই বাড়ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। কেননা আমরা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এমন সময় এ সিদ্ধান্ত নতুন চাপ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধি কোনো বিষয় হতো না, যদি চাহিদা মতো গ্যাস-বিদ্যুৎ পেতাম। যে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে তা পূর্ণ প্রেসারে পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুতে লোডশেডিং বাড়ছে। ফলে খরচ বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে। সেই হিসাবে বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা অথচ বাড়ানো হয়েছে। আর দেশি গ্যাস কোম্পানিগুলো লাভের মধ্যে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্ত।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দেশে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি। সরকার যদি তেলের দাম কমিয়ে সমন্বয় করে তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। তিনি আরও বলেন, বিদ্যুতের সঙ্গে সব খাত জড়িত। তাই বিদ্যুতের দাম বাড়ালে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। এখন চালসহ নিত্য পণ্যের দাম অনেক বেশি। এমন সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লে সবকিছুর মূল্য আরও বেড়ে যাবে।
সেন্টা ফর পলেসি ডায়ালগ (সিপিডির) ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বিদ্যুতের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকায় ভোক্তা এবং উৎপাদক সবাই কম দামের যে সুবিধা পাচ্ছিলেন, তা হারাবেন। উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় বাড়বে। অভ্যন্তরীণ বাজারের উৎপাদকের পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতার ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আর উৎপাদনের ব্যয় বাড়লে তাও শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপরই বর্তাবে।
ক্যাবর জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে বিশ্ববাজারে অব্যাহতভাবে কয়েক বছর ধরে কম থাকলেও সরকার দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমাবে না। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত তেলের দাম কমানো হলেই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা কমানো সম্ভব। কিন্তু তারা এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে দাম বাড়ানোর প্রতিই বেশি মনোযোগী, যা দুঃখজনক।