প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কাঠামোগত রূপান্তরের অঙ্গীকার পূরণ ও নবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেহেতু দেশগুলো ‘চ্যারিটি’ দাবি করে না। গতকাল রোববার জাতিসঙ্ঘের প ম এলডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দোহা প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আশার আরেকটি নিশ্চয়তা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রকৃত কাঠামোগত রূপান্তরের জন্য তার প্রতিশ্রুতি পুনর্নবীকরণ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে তালিকা থেকে উন্নীত করার লক্ষ্যে পারফরম্যান্সের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকা উচিত এবং তাদের বর্ধিত সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা উপভোগ করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের উৎপাদনশীল সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য তাদের বর্ধিত বিনিয়োগ ও জ্ঞান প্রয়োজন। তাদের জন্য কিছু উদ্ভাবনী এবং ক্রান্তিকালীন অর্থায়ন ব্যবস্থা থাকতে পারে।’
তিনি উন্নত দেশগুলোকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশগুলোও দরকষাকষিতে তাদের পক্ষ নেবে। এই দেশগুলো দান-খয়রাত চায় না; আমরা যা চাই তা হলো আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির অধীনে আমাদের পাওনা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বৈশ্বিক বাণিজ্যে তাদের অংশ দ্বিগুণ করার জন্য টেকসই সহায়তা প্রয়োজন এবং উন্নত দেশগুলো থেকে এলডিসির জন্য ওডিএ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দাবি রাখে।
তিনি দাবি জানান, ‘আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ঋণের স্থায়িত্বকে সমর্থন করার উপায় রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নকে নমনীয় ও অনুমানযোগ্য করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তি হস্তান্তর বাস্তব ও অর্থবহ হতে হবে।’
তিনি বলেন, অভিবাসী শ্রমিকদের তাদের অধিকার ও কল্যাণের জন্য সুরক্ষা প্রয়োজন। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ২২ কোটি ৬০ লাখ তরুণকে আমরা ব্যর্থ করতে পারি না। মহামারী ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব দেশের অধিকাংশ দেশে মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। এর সাথে যোগ হয়েছে জলবায়ু সঙ্কট এবং কিছু স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্ব। তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গার সাথে আমরা তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান ছাড়াই কাজ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেছে এবং এখন ২০২৬ সালে উত্তরণের অপেক্ষায় রয়েছে।
যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধে বিশেষ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ যত দ্রুত শেষ হবে, ততই জনগণের জন্য মঙ্গলজনক।’
স্থানীয় সময় শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি এ আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এসময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারেন জানিয়ে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ থেকে লাভবান দেশগুলোর উচিত হবে এর প্রভাবে দুর্ভোগে পড়া দেশগুলোকে সহায়তা করা।’
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য জাতিসংঘকে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
ভাসানচরে ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান জাতিসংঘ মহাসচিবকে সেখানে আরও রোহিঙ্গা স্থানান্তর করতে সহযোগিতার অনুরোধ জানান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়ই একমত হয়েছেন যে, মিয়ানমারে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো পরিবর্তন আসুক বা না আসুক রোহিঙ্গাদের শিগগির নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস উন্নয়ন, কূটনীতি ও করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যগুলো খুবই উৎসাহজনক।’ জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্বের জন্য তারা গর্বিত, যিনি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে প ম জাতিসংঘ সম্মেলনে (এলডিসি ৫: সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) যোগ দিতে বর্তমানে কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থান করছেন।