সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন

পোকার আক্রমণে মরে যাচ্ছে ভোলার বাম্পার ফলনশীল গম, দুশ্চিন্তায় কৃষকরা

মীর মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ভোলা:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩

ভোলায় গমের ফলন ভালো হলেও তা পাকার আগে ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতে সেচের অভাব ও পোকার আক্রমণে গম গাছ মরে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ভোলার ইলিশাসহ বিভিন্ন গম ক্ষেতের এই অবস্থা। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। কি ভাবে তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিবে তার কোন উপায় পাচ্ছে না। কৃষকরা জানান, গেলো বছর গমের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর লাভের আশায় ভোলায় বহু কৃষক গমের আবাদ করে। প্রথম দিকে গাছে গমের ফলন ভালো দেখা যায়। এতে করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে গমের শীষ মরে যাওয়ায় কৃষকের ওই হাসি মলিন হতে শুরু করেছে। তাদের কপালে এখন চিন্তা। ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা, পশ্চিম ইলিশা, বাপ্তা, ভেদুরিয়া, ভেলুনিয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের বিস্তীর্ণ ক্ষেতে বাতাসে দুলছে গমের শীষ। দূর থেকে দেখলেই মনে হয় সোনালী রংয়ের গাছে গম যেন পেকে রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আসলে তা নয়। ভোলার চুটকিমারা এলাকার মো: মনির হোসেন, জামাল, জসিম, ভুট্টু সহ একাধিক কৃষক জানান, আর মাত্র দুই সপ্তাহ পর তাদের গম কেটে ঘরে তোলার কথা ছিলো। এমন সময়েই গম গাছ গুলো গোড়া থেকে শুকিয়ে যাওয়া গাছ মরে গিয়ে সোনালী রং ধারন করেছে। গমের থোরা গুলো চিটা হয়ে গেছে। আবার কোন কোন ক্ষেতে গমের শীষে পোকার আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন কাটছে কৃষকরা। ভোলায় সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের গুপ্ত মুন্সি গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ বজলু রহমান, মোঃ খোকন, অহিদুর রহমান, কাঞ্চন, লিটন সহ জানান, এ বছর সরকারিভাবে ২০ কেজি গমের বীজ পেয়ে নিজে আরও ৪৮ কেজি গমের বীজ কিনে এক একর জমিতে গমের চাষ করেছেন। এতে তাঁর প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গমের ভালো ফলনে এসেছে। কিছু দিন পরেই গম ঘরে তোলার আশায় ছিলেন তিনি। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁর গম খেতে পোকার আক্রমণে অধিকাংশ গমের শীষ নষ্ট হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি গম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। কৃষক আব্দুর রহমান জানান, গত বছর এক একর জমিতে গম চাষ করে ২১ হাজার টাকা লাভবান হয়েছে। তাই এ বছরও তিনি গমের চাষ করেছেন। কিন্তু পোকার আক্রমণে তাঁর গম ক্ষেত এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষি অফিস থেকেও তাদেরকে সঠিক মত কোনো পরামর্শ দিচ্ছে না। ঔষধ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। লাভ তো দূরের কথা চালানও উঠবে না তাদের। কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করবে তা নিয়ে চরম দু:চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। কৃষক আব্দুর রহমান সহ বহু কৃষকের একই অবস্থা। ভোলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, গত বছর ভোলা জেলায় ১৯ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়। এ বছর জেলায় গম আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৬ হাজার ৬ শত হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয়েছে তার চাইতে বেশী ৯ হাজার ২১ হেক্টর জমিতে। লক্ষমাত্রার চেয়ে আড়াই হাজার হেক্টর বেশী গমের আবাদ হওয়ায় কৃষি বিভাগ আশা করছে এ বছরও গমের উৎপাদন বাড়বে। ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকতা এ এফ এম শাহাবুদ্দিন জানান, যারা দেরিতে গম আবাদ করেছে তাদের ক্ষেতে পানির অভাবে সেচ না দেওয়ায় গম গাছ ও শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিকারে সেচ দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি আগামীতে সল্প মেয়াদী জাত বারি গম ৩২ চাষ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করছি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাসান ওয়ারিসুল কবির জানান, গম ক্ষেতে তিনবার সেচ দিতে হয়। সঠিক সময়ে সেচ না দেয়ায় কিছু কিছু ক্ষেতের গমের শীষ সাদা হয়ে নষ্ট হয়েছে। কিছু খেতে মাজরাপোকার আক্রমণ হয়েছে। তবে সেগুলো খুব কম। আমরা কৃষকদের সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। তবে আর মাত্র দুই সপ্তাহ পর গম কাটা হয়ে যাবে। এতে বেশী একটা ক্ষতি হবে না বলে জানান এ কর্মকর্তা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com