রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০০ অপরাহ্ন

বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া : সিএনএনকে প্রধানমন্ত্রী

বাসস:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অব্যাহত এই যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিএনএন টিভিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আমি মনে করি যে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এই যুদ্ধ (ইউক্রেনে) বন্ধ করতে বিশ্বের এগিয়ে আসা উচিত।’ সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব গতকাল মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্কে (সিএনএন) সম্প্রচার হয়েছে এবং দ্বিতীয় অংশটি আজ রাতে প্রচারিত হবে। যুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি আমরা। কোনো বিরোধ থাকলে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। আমরা কখনই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা কোনো সংঘর্ষকে সমর্থন করি না।’ তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। বিখ্যাত সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্টের নেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ইউক্রেনের যুদ্ধ, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং ঋণ দেয়ার মাধ্যমে চীনের সৃষ্ট মরণফাঁদ ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এটি অনুসরণ করছি, তাই যখন আমরা কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন বা আক্রমণ দেখি, আমরা অবশ্যই এর বিরোধিতা করি।’ তিনি বলেন, যুদ্ধ এক পক্ষের দ্বারা সংঘটিত হতে পারে না, উভয় পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশের নিজস্ব ভূখন্ডে (স্বাধীনভাবে) বসবাস করার এবং তাদের নিজস্ব অঞ্চল রক্ষার অধিকার রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তার দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সমর্থন করে এমন প্রতিটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের কাছাকাছি, চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত। যারা আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছেন, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।’ তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার। তারা বিনিয়োগ করছে এবং কিছু নির্মাণকাজ করছে, ‘এটিই মূল কথা।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা কারো উপর নির্ভরশীল নই।’
চীন থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক। আমরা বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে বেশিরভাগ ঋণ নিয়ে থাকি। চীন থেকে আমাদের ঋণ খুবই কম। এটা শ্রীলঙ্কা বা অন্য কারো মতো নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অকারণে তাঁর সরকার কোনো ঋণ বা কোনো মেগা প্রকল্প নেয় না। কোনো মেগা প্রকল্প বা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করি কোন প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং আমরা সুবিধাভোগী হব।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের কী প্রয়োজন জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, তারা যেন তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দেয়। ‘শুধু তাই নয়, আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপও শুরু করেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা সঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ইতিমধ্যে চীন, আসিয়ান দেশ, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সাথে কথা বলেছে এবং মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির উপর চাপ দেয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করেছে।
তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, মিয়ানমার সরকার কারো কথাই শুনছে না। এটাই সমস্যা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশি (এক কোটি) মানুষের প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় দেওয়ার কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা (১২ লাখ) বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’ হয়ে উঠছে। কারণ দেশটিতে অতিরিক্ত জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।’
জমি অনাবাদী না রেখে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বললেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং এর যথাযথ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি ডাল, পেঁয়াজ ও সরিষার আবাদ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে সংশ্লিষ্টদের গভীর মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কোনো জমি যেন অলস পড়ে না থাকে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন।
সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারও কোনো জমি অলস না রেখে চাষের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সিলেট অঞ্চলে এখনও অনেক জমি অলস পড়ে থাকে। চাষাবাদ হচ্ছে না। সেসব জমি চাষের আওতায় আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উপকূলীয় অঞ্চলের চিংড়ি ঘের মালিকদের প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ঘের মালিকরা যেন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং ঘের থেকে বালু পরিস্কার করতে পারে। এছাড়া, তিনি বিদেশি জাতের মাছের পরিবর্তে স্থানীয় জাতের মাছ চাষে বেশি মনোযোগ দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী যেকোন প্রকল্পে ‘দারিদ্র বিমোচন’ শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার আপত্তির বিষয়টি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন শব্দটি বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো প্রকল্পের অধীনে কেবল অবকাঠামো নির্মাণ করাটাই সবসময় বুদ্ধিমানের কাজ নয়, জনগণকে সেবা প্রদানের জন্য অবকাঠামো ও ভবনের অধীনে মেশিনারিজ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি এবং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের দরকার রয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি প্রকল্পে আমদানি করা যানবাহনের পরিবর্তে প্রগতি থেকে স্থানীয়ভাবে সংযোজিত যানবাহন ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের প্রবণতা কমানো এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিজ সংস্থার নিয়মকানুন মেনে চলার নির্দেশ প্রদান করেন।
দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারিতে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। মার্চে সেটি আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি বোরোর বাম্পার ফলন হয়, তাহলে বৈশাখ থেকে মূল্যস্ফীতি কমে যাবে, তবে এসময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত কিন্তু ভাল নয়।’
পরিকল্পনামন্ত্রী মনে করেন, বর্তমানে সার্বিক অর্থনীতি আগের তুলনায় অনেক ভাল। তিনি বলেন, ‘রেমিটেন্স, রপ্তানি এবং কৃষি ফলনের অবস্থা যেভাবে আছে, তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’ তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য পণ্যের সরবরাহ কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মান্নান বলেন, বাংলাদেশের মত অর্থনীতিতে পণ্যের প্রবাহ মসৃন নয়। এখানে কিছু অজানা ও অদৃশ্য সমস্যা রয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মত ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তবে, সেটি কমানো যেতে পারে।
আসন্ন রমজানে মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা প্রদান করেছেন কিনা- সে বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশি করে পণ্য কেনার (পেনিং বায়িং) প্রবণতা রয়েছে। যা ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ তৈরি করে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রবণতা রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি জানান, সম্প্রতি ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করায় একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়। দুই প্রতিবেশী দেশ ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার আন্তঃসীমান্ত পাইপলাইন তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে ভারত থেকে পেট্রোলিয়াম বিশেষ করে ডিজেল আমদানি করবে বাংলাদেশ। ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com