একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী। এবার এক আওয়ামী লীগ নেতাকে এমপি নদভী থাপ্পড় মারছেন- এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে এমপি ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে জীবিত পুঁতে ফেলারও হুমকি দেন।
জানা যায়, ভাইরাল সেই ভিডিওটি ২০১৯ সালের। তবে সেটি গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর মারধরের শিকার ব্যক্তির নাম জসিম উদ্দিন। তিনি মক্কা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কবির চৌধুরীর ছোট ভাই।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, জসিম উদ্দিন নামের স্থানীয় ওই আওয়ামী লীগ নেতা নদভীকে বলছেন, ‘যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু আপনাকে দিতে হবে, তবেই রোড মজবুত হবে। তারা (ইঞ্জিনিয়ার) আসে কিন্তু যে পরিমাণ দরকার সেটুকু দেয় না।’ এরপরেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন এমপি নদভী। তোকে আমি চড় মারবো বলতেই সজোরে চড় মেরে বসেন জসিম উদ্দিনের গালে। এসময় লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি নদভীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে নদভী উল্টো তাদেরই ধাক্কা দেন।
এসময় জসিমকে উদ্দেশ্য করে নদভী বলেন, ‘এখনও মানুষ চিনিস নাই, কথা বেশি বলিস! আমি কথা শেষ করেছি? আমি এখন প্রধান প্রকৌশলীর সাথেই কথা বলতাম। আমাকে চিনস নাই, বেয়াদব। আমি এখানে কেন এসেছি, কলা খেতে এসেছি? আমি যা করতে পারবো সেটা তোরা করতে পারবি, তাই না? ফালতু কোথাকার। আমি কতটা রাগী সেটা জানিস না? একেবারে জীবিত পুঁতে ফেলবো। ওমুকের, ওমুক আওয়ামী লীগের নেতা এসব আমার এখানে চলবে না। আমার এখানে চলবে বাস্তবতা।’
জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে সাতকানিয়ার এওচিয়া গাটিয়াডাঙ্গা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ব্রিজের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যান এমপি নদভী। টেন্ডার পেয়ে সেই ব্রিজের নির্মাণকাজ করছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা এলডিপির তৎকালীন সভাপতি জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। ব্রিজের নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে নিম্নমানের কাজ করায় ঠিকাদার জিয়াউল হক বাবুলের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী প্রবাসী জসিম উদ্দিন। এসময় ঠিকাদার জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলকে সন্তুষ্ট করতে অভিযোগকারী জসিম উদ্দিনকে থাপ্পড় মেরে দেন এবং জ্যন্ত কবর দেওয়ার হুমকি দেন এমপি নদভী।
এদিকে এই ভাইরাল ভিডিও’র বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সেদিন আমি সেতু নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়মের কথা এমপি সাহেবকে জানিয়েছিলাম। আর উল্টো তিনি আমাকে চড় মারলেন, অশালীন গালিগালাজ করলেন। দলকে গালাগালি করতেও তিনি ছাড়েননি। তবে এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘ভিডিওটি ২০১৯ সালের। জসিম নামে ওই ব্যক্তি সেতু নির্মাণে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করছিলো। উপজেলা চেয়ারম্যানকে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাই আমি তাকে শাসন করেছিলাম মাত্র।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১১ মার্চ) স্থানীয় একটি কলেজের ভবন উদ্বোধন করতে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিষোদগার করেন এমপি নদভী। পরে রাতের অন্ধকারে সেই ভিত্তিপ্রস্তরও ভেঙে দেওয়া হয়। তবে কারা সেটি ভেঙেছেন তা এখনও জানা যায়নি।