সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন

৭ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ৩০৬৯ কোটি টাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩

মধ্যবিত্তের আস্থার জায়গা ছিল সঞ্চয়পত্র। চাকরি থেকে অবসরের পর পাওয়া অর্থ কিংবা বাড়তি টাকা হাতে থাকলেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হতো। তবে বিভিন্ন কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছেই।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাতমাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমছে তিন হাজার ৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এসময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি দিয়ে গ্রাহকের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করাও সম্ভব হয়নি। উল্টো সরকারি কোষাগার বা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করা হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৭৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ওই সময়ে সুদ-আসল পরিশোধের পরও সরকারের কোষাগারে ১২ হাজার ১৭৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা জমা ছিল। সেসময়ে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বিক্রির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, গত বছরেরর তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপক কমেছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম ছয়মাসে এ খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। উল্টো সরকার পরিশোধ করেছে। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রির ওপর চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন সনদপত্র বাধ্যতামূলক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্তসহ আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এরপরও বিক্রি বাড়তে থাকে।
সর্বশেষ ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই বিক্রি কমতে থাকে।
অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না পাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমা নিয়ে কথা হয় আসলাম নামে এক গ্রাহকের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, একটা সময় সঞ্চয়পত্র মানুষের আস্থার জায়গা ছিল। সবাই এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সুদহার কমিয়ে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। শেয়ারবাজারের পরিবর্তে এখানে রেখেছিলাম, সেটাও আর হচ্ছে না। সব টাকা উঠিয়ে নিতে হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আহমেদ জানান, সাধারণ মানুষের নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিবেচিত হতো। এখন সরকার কর্তৃক সুদহার কমানোসহ নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ কমছে মানুষের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, সুদহার কমানোসহ নানান কড়াকড়ির আরোপ করার পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমেছে। বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধেই সরকারের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। সুদহার কমায় অবসরের অর্থ কিংবা পরিবারের বাড়তি টাকা থাকলেও সেগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে আসছেন না। এতে বিক্রি কমে যাচ্ছে। এসব কারণে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণও বাড়ছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com