রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু লোকের কদর বাড়ে: প্রধানমন্ত্রী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি জানি, অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি আছে, এই ধারাবাহিক গণতন্ত্র তাদের পছন্দ হয় না। আর আমাদের কিছু আঁতেল আছে, তাদের তো (ধারাবাহিক গণতন্ত্র) পছন্দই না। তারা মনে করে, একটা অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের কদর বাড়ে। কারণ যারা অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে, তাদের কিছু লোক হাতের লাঠি লাগে বা খুঁটি লাগে। সেই লাঠি হতে পারছে না বলেই তাদের মনে খুব দুঃখ।’
গতকাল সোমবার (২৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় স্বাধীনতার ৫৩ বছরের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ২১ বছর এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আট বছর; সব মিলিয়ে এই ২৯ বছর বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘কালো অধ্যায়’ বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেই কালো মেঘ কেটে দেশের মানুষের জন্য আমরা একটা নতুন সূর্যের আলো নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ, সেই পথেই এগিয়ে যাবে।
এসময় দেশবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়েই যেন তারা এগিয়ে চলে। কারও মিথ্যা কথায় যেন কেউ বিভ্রান্ত না হয়।’
সমালোচনাকারী ওই ব্যক্তিদের ‘আঁতেল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা সবসময় দেশে এবং বিদেশে বদনাম তো করবেই, আবার দেশের মধ্যেও আজেবাজে লিখে যাচ্ছে যে— কিছুই নাকি হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের একেবারে তৃণমূল মানুষের কাছে যান, তাদের মধ্যে যে আস্থা ও বিশ্বাস আছে; সেটাই আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। যে অবৈধ শক্তি ৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের কোনও প্রেতাত্মা যেন আবার দেশের মানুষের স্বাধীনতা নস্যাত করতে না পারে। আবার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে তার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দেশের জনগণকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থেকে দেশের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।
২০০৮ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আবার সরকারে এসেছি। ধারাবাহিক গণতন্ত্র রয়েছে, ধারাবাহিক উন্নতি হয়েছে বলেই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। সারা বিশ্ব বলতে বাধ্য হয়, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ এখান থেকে আর পিছে হাঁটবে না। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
এসময় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি বিদেশিদের কাছে নালিশ করে, তাদের ওপরে নাকি খুব অত্যাচার করা হচ্ছে। অত্যাচার তো আমরা করি নাই। অত্যাচার করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এর শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন। সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার, সৈনিক থেকে শুরু করে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে নির্বিচারে ফাঁসি দিয়েছে, গুলি করে হত্যা করেছে। পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের লাশ পর্যন্ত পায়নি। সব লাশ গুম হয়ে গেছে।’
বিএনপির জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে প্রথমে লেবাস পড়ে ক্ষমতা দখল করা। রাজনীতিকে গালি দিয়ে ক্ষমতা দখল করে আবার সেই লেবাস খুলে নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে গেছে। ক্ষমতা উচ্ছিষ্টভোগীদের নিয়ে দখল গঠন করার কালচার শুরু হয় বাংলাদেশে।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অবৈধ দখলকারীদের হাতে তৈরি করা যে সংগঠন তারা নাকি এখন দেশে গণতন্ত্র চায়। যাদের জন্মই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে হয়নি। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিক্টেটেডের মধ্য দিয়ে, তারা আবার গণতন্ত্র চায়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র দেয়নি, তারা গণতন্ত্র দেবে। গণতন্ত্রের জন্য নাকি তারা লড়াই করে। ওদের জিজ্ঞেস করতে হয়, তাদের জন্মটা কোথায়? অবৈধ দখলদারি এটা তো আমাদের কথা না। আমাদের উচ্চ আদালত বলে দিয়েছে যে, জিয়া-এরশাদ সম্পূর্ণ অবৈধ। তারপর তারাও নাকি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামও করে।’
মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধ একটি জনযুদ্ধ ছিল। যারা ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসেছে, দেশের মানুষকে তৈরি করেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাধা দিয়েছে। ট্রেনিংপ্রাপ্ত শুধু তা নয়, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও মাঠে নেমে গিয়েছিল। যে যেভাবে পেরেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। তিনি আরও বলেন, যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটা গেরিলা যুদ্ধ। তাই গেরিলা যোদ্ধারা দেশে ঢুকলে মা-বোনেরা রান্না করে খাওয়ার দেওয়া, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অবস্থানের তথ্য দেওয়া; সেই কাজগুলো করেছে। একটা জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এদেশে স্বাধীনতার বিজয় অর্জন করতে পেরেছি। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শাহজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমির প্রমুখ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com