বাংলাদেশের নির্বাচিত কৃষি-প্রাকৃতিক এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে অনুদান দেবে লিস্ট ডেভেলপমেন্ট কান্ট্রি ফান্ড (এলডিসিএফ)। ইউএনডিপির মাধ্যমে প্রকল্পের আওতায় আসবে ৪৯ কোটি টাকার এ অনুদান। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে পরামর্শক খাতে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এই ব্যয় প্রস্তাব সমীচীন নয় জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনে ‘ইন্টিগ্রেটিং ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপ্টেশন ইন্টু সাস্টেইনেবল পাথওয়েজ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠায় পরিবেশ অধিদপ্তর। বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (এসপিইসি) সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কমিশন জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে একজন প্রজেক্ট ম্যানেজার, একজন অ্যাডমিন ও ফাইন্যান্স কনসালট্যান্ট, একজন আইসিটি ও অ্যাডমিন ফাইন্যান্স কনসালট্যান্টসহ মোট ১১ জন পরামর্শক নিয়োগের সংস্থান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি থাকবে পরামর্শক ফার্ম। এর যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আরও আলোচনা করা হবে। কোনো ব্যক্তি পরামর্শক রাখা সমীচীন হবে না, পরামর্শকের একান্ত প্রয়োজনীয়তা থাকলে তা ফার্ম নিয়োগের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে বলে মত কমিশনের।
সূত্র জানায়, প্রকল্পে স্থানীয় জাতীয় পরামর্শক খাতে ৮১ লাখ ৫৫ হাজার, একক পরামর্শক খাতে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার, চুক্তিভিত্তিক পরামর্শক ফার্ম খাতে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয় হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মেয়াদ চলতি সময় থেকে জুন ২০২৭ নাগাদ।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম প্রধান (কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ) মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি অনুদানের টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে পিইসি কনসার্ন। বর্তমানে পরামর্শকখাতের ব্যয় নিয়ে আমরা নানান ধরনের আলোচনা করি কীভাবে এটা কমানো যায়। এরই ধারাবাহিকতায় পিইসি সভায় এটা নিয়ে আলোচনা করেছি, সংশ্লিষ্ট সবাই পিইসি সভায় উপস্থিত ছিলেন।’
ব্যক্তিখাতে বেশি পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি অনুদানের অর্থে বাস্তবায়ন হবে। ইউএনডিপির মাধ্যমে ফান্ড আসবে। সুতরাং, ফান্ড যারা দেয় তাদের চাহিদা থাকে। কিছু কিছু চাহিদা মেটাতে হয়। এটা না রাখলে হবে না।’ পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মুহাম্মদ সোলায়মান হায়দার বলেন, ‘এটা রিভিউ পর্যায়ে আছে। পরিকল্পনা কমিশন এখনো পাস করেনি।’
পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, বরেন্দ্র সমভূমি, তিস্তা প্লাবন ভূমি, উপকূলীয়, পার্বত্য ও সুরমা, কুশিয়ারা প্লাবন ভূমি অঞ্চলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা: বাংলাদেশের নির্বাচিত পাঁচটি অ্যাগ্রো ইকোলজিক্যাল জোনের জন্য লোকাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান অব অ্যাকশন গ্রহণ করা হবে। সেগুলো হলো- কুড়িগ্রামের তিস্তা প্লাবন ভূমি অঞ্চল, সুনামগঞ্জের সুরমা কুশিয়ারা প্লাবন ভূমি অঞ্চল, চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চল, নওগাঁর বরেন্দ্র সমভূমি অঞ্চল ও রাঙামাটির পার্বত্য অঞ্চল। কুড়িগ্রামে ৪৫টি জলবায়ু সহনশীল আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, সুনামগঞ্জে স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত সাশ্রয়ী উপকরণ দিয়ে এক হাজার বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত ঘড়বাড়ি রক্ষার্থে শর্তসাপেক্ষ নগদ অর্থ সহায়তা, সুনামগঞ্জের এক হাজার পরিবারকে বিকল্প জীবিকার মাধ্যমে আয়ের ব্যবস্থাকরণের সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া ১০০ জন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাকে ডাটাবেজ ও নলেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের ওপর প্রশিক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের লক্ষ্যে বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক পদ্ধতির ওপর নির্বাচিত পাঁচটি এলাকায় ৫০০ জন স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীর দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ ও প্রকল্প এলাকায় বনায়ন করা হবে মোট ৫১০ হেক্টর জমিতে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম: জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন ত্বরান্বিত-বেগবান করার লক্ষ্যে উন্নত সমন্বয় প্রক্রিয়া, ডাটাবেজ এবং নলেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে সক্ষমতা বাড়ানো। স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ এবং বাংলাদেশের নির্বাচিত পাঁচটি এলাকায় অ্যাডাপটেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। রাঙামাটি জেলায় পতিত ভূমিতে প্রাকৃতিক বন পুনঃপ্রতিষ্ঠাকরণ এবং গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ভিত্তিক কৃষি বন উন্নয়ন করা হবে। ৯০ হেক্টর এলাকায় গ্রাম্য যৌথ বন পুনরুদ্ধার ও কৃষিভিত্তিক বনায়ন করা হবে ১১৫ হেক্টর এলাকায়।
সুনামগঞ্জের পূর্ব দিকের সুরমা কুশিয়ারা প্লাবন ভূমির জলারবন পুনরুজ্জীবন, ২২০ হেক্টর এলাকায় বনভূমি সৃজন ও পুনঃবনায়ন, কুড়িগ্রামের তিস্তা প্লাবন ভূমিতে নদীসৃষ্ট বন্যা সামলানোর জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বাড়ানো, জলবায়ু তথ্য ও সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাবিত বন্যাঝুঁকি মানচিত্র প্রণয়ন এবং ৪৫টি জলবায়ু সহনশীল বহুমুখী কমিউনিটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।- জাগো নিউজ