অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ গতকাল সোমবার পর্যন্ত শেষ হয়নি। তবে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে এ কাজ শেষ করে বুধবার থেকে এখানে দোকান বসানো হবে বলে জানিয়েছে এ কমপ্লেক্সের দোকান মালিক সমিতি।
গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের ছয় দিন পর আজ বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন, এ কমপ্লেক্সের নিচতলার ব্যবসায়ীদের জন্য বুধবার থেকে ওই অস্থায়ী দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে, দ্রুত ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী দোকান বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, আগুনে তাঁদের সব পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। অস্থায়ী দোকান পেলে ধারদেনা করে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। না হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের (ডিএসসিসি) মেয়র দোকান উদ্বোধন করবেন। এর পর থেকে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে দোকান করার সুয়োগ পাবেন। তিনি বলেন, এই কমপ্লেক্স তিন তলা ছিল। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত নিচতলার ব্যবসায়ীদের জন্য এখন ব্যবস্থা করছেন। অন্যদের জন্য এখনই ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বুধবার দোকান উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স তিন তলা ছিল। দোকান মালিক সমিতি আপাতত নিচতলার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য এখন ব্যবস্থা করছে। অন্যদের জন্য এখনই ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একজন মো. ফয়সালের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অস্থায়ী দোকান পেলে পরিবার, বন্ধু–বান্ধবদের কাছ থেকে টাকা এনে ব্যবসা শুরু করতে চান। ব্যবসা করতে না পারলে পরিবার নিয়ে চলতে পারবেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবাজারের এনেক্সকো টাওয়ারের সামনে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি। সেখানে প্রতিবন্ধক দিয়ে রাখা। তবে হেঁটে সেখানকার রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। ট্রাকে করে ধ্বংসস্তূপ সরানো হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপে থাকা টিন, লোহাসহ বিভিন্ন পোড়া জিনিস ছিন্নমূল লোকজন নিয়ে যাচ্ছেন।
আগুনে এনেক্সকো টাওয়ারের অনেক দোকান ও গুদাম ঘর পুড়ে গেলেও নিচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত বেশকিছু দোকানের ক্ষতি হয়নি। দোকান খুলে এরই মধ্যে ব্যবসা শুরু করেছেন ভবনটির ব্যবসায়ীরা। আজ দুপুরে এ ভবনের নিচতলার বিক্রমপুর গার্মেন্টস নামের একটি দোকানে গিয়ে কথা হয় মালিক নাজমুল হুদার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকান খুলে বসে আছি। তেমন কেনাবেচা নেই। স্বাভাবিক থাকলে এই সময় দিনে লাখ টাকা বিক্রি হতো।’
গত মঙ্গলবার বঙ্গবাজারের ভয়াবহ আগুনে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান পুড়ে যায়। আগুনে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
অনুদানের দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানে তৈরি পোশাক সরবরাহ করতেন ঢাকা ও আশপাশের কারখানার মালিকেরা। বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের কাছে বিরাট অঙ্কের বকেয়া পাওনা রয়েছে এসব কারখানা মালিকদের। পুড়ে যাওয়া দোকানের মালিকেরা সরকারি–বেসরকারি অনুদান পেলেও যাঁরা এসব দোকানে কাপড় সরবরাহ করতেন, তাঁরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না।
তাই কারখানার মালিকেরা সরকারের কাছে অনুদানের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। দুপুরে বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে ঢাকার আলুবাজার ও সিদ্দিকবাজারের কারখানার মালিক ও কর্মচারীরা এ মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেন আলুবাজার এলাকার কারখানার মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলমও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোড়া দোকানের মালিকেরা টাকা দিতে পারছেন না। কিন্তু তাঁরা কিছু হলেও অনুদান পাচ্ছেন। কিন্তু আমরা যারা এই মার্কেটে পণ্য সরবরাহ করতাম, তাঁদের লাখ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এ টাকা না পেলে কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন দেওয়া যাচ্ছে না। তাই আমরা অনুদান চাই।’