পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিএনপির সাথে রাজনৈতিক সংলাপের কোনো প্রয়োজন নেই এবং তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে ব্যবস্থা রয়েছে তা অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিসকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সংলাপের প্রয়োজন কেন? ক্ষমতায় কি পেছনের দরজা দিয়ে আসবে? মোটেই না। যেহেতু একটি ব্যবস্থা আছে তাই আলোচনার প্রয়োজন নেই এবং যারা নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক তাদের (বিএনপিসহ বিরোধী দল) এগিয়ে আসা উচিত।’ ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন মোমেনের- ‘নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টি বা অন্যান্য দল কি আলোচনা করে? না, কখনোই না। কারণ, একটা সিস্টেম আছে। তারা সিস্টেম অনুসরণ করে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি যাদের কথা বলছেন তারা বন্দুকের মাধ্যমে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। তারা ব্যালটে নয়, বন্দুকে বিশ্বাস করে।’ মোমেন বলেন, ‘তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর আস্থা রাখে এবং এ কারণেই তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চায়। কারণ আমরা মানুষকে বিশ্বাস করি। আমরা একটি মডেল নির্বাচন চাই।’ তিনি আরো বলেন যে বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে ৩০ লাখ মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। আমাদের প্রত্যেকের রক্তে ভোটাধিকারসহ গণতন্ত্র রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় উল্লেখ করে বলেছে, বিশ্ববাসী বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে ব্লিঙ্কেন গত ১০ এপ্রিল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের সময় বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা তথা বিশ্ব বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছি, যাতে তারা এই অ ল এবং বিশ্বের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একটি শক্তিশালী দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।’
মোমেন ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা সার্ভিসকে বলেন, ‘আমি ব্লিঙ্কেনের সাথে একমত। আমি খুব খুশি যে তিনিও এমন একটি মডেল নির্বাচন চান যা সারা বিশ্বে চিত্রিত হতে পারে। আমিও চাই এবং আমরা সকলের সমর্থন চাই।’
মোমেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলকে আন্তরিকতা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রদর্শন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘তার দল আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, অভ্যুত্থান বা বুলেটের মাধ্যমে নয়। গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের যে আন্তরিকতা ও অঙ্গীকার রয়েছে তার দিক থেকে অন্যরা আমাদের কাছাকাছিও নেই।’
মোমেন বলেন যে বিএনপি যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাহলে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। বিএনপি অতীতে নির্বাচন বর্জন করেছে এবং নির্বাচন বানচাল করতে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালিয়েছে। আমরা সেই পরিস্থিতি আর দেখতে চাই না। তিনি আরো বলেন যে তিনি ব্লিঙ্কেনকে যত বেশি সম্ভব নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রেরণের অনুরোধ করেছেন। তবে পক্ষপাতদুষ্ট পর্যবেক্ষকদের এড়ানোর জন্য তাদের স্বাধীন হতে হবে এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত হওয়া যাবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লুকানোর কিছু নেই। কারণ আমরা গত ১৪ বছরে একটি চমৎকার কাজ করেছি এবং আমরা নিশ্চিত যে গল্প বানানো হলেও মানুষ আমাদের ভোট দেবে এবং সেই সব গল্প তারা বিশ্বাস করবে না।’