তাপদাহের কারণে যশোরে মৌসুমি ফলের ৫০ শতাংশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাপকহারে আমের গুটি ঝরে পড়েছে। শুকিয়ে যাচ্ছে লিচুর গুটি ও কাঁঠালের মুচি। এই অবস্থায় বাগান মালিকরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। কৃষি বিভাগ বলছে তীব্র গরম আর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে প্রচ- তাপদাহে গুটি অবস্থায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ফল ঝরে যাচ্ছে। সামনে কালবৈশাখী হতে পারে। তখনো কিছু ফল ঝরে গিয়ে নষ্ট হবে। সবমিলিয়ে ৫০ শতাংশ মৌসুমি ফল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যশোর কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলায় ৩ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে আম ও ৬৪৯ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ বছর এই বাগান থেকে ৫৫ হাজার ৪০৭ টন আম ও ৩ হাজার ৪৫৫ টন লিচু উৎপাদন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে।
তাপদাহে ইতোমধ্যে আমের গুটি পড়ে যাচ্ছে ব্যাপকহারে। সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা, মন্ডলগাতি, পতেঙ্গালী ও সুজলপুর গ্রামের একাধিক আম বাগান ঘুরে গুটি পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। পতেঙ্গালী গ্রামের রাজুর বাড়ির সামনের একটি আমবাগানে প্রচুর পরিমাণে আমের গুটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। একই অবস্থা লিচুতেও। ঝুরে পড়ছে লিচুর গুটিও। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়া এবং তীব্র তাপদাহের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (প্রোটেকশন) শেখ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রচ- গরমের কারণে বিভিন্ন ফলের গুটি ঝরে যাচ্ছে। ফলের অ্যাপসিসন লেয়ার শুকিয়ে যাওয়ায় এমনটি হচ্ছে। ফলের গুটি থেকে ডালের সাথে লাগানো অংশকে অ্যাপসিসন লেয়ার বলে। ঝরেপড়া একেবারে বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। তবে, কমানো সম্ভব।
তিনি বলেন, রোদ কমে যাওয়ার পর আম-লিচুসহ বিভিন্ন ফলের গুটিতে নিয়মিত পানি স্প্রে করতে পারলে ঝরে যাওয়া অনেকাংশে রোধ হবে। একইসাথে গাছে মালচিং করতে পারলে ভালো কাজ হয়। মালচিং হচ্ছে গাছের গোড়ায় পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা।
সাজ্জাদ হোসেন জানান, গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত পানি দিয়ে লতাপাতা কিংবা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়ার মাধ্যমে মালচিং করা যেতে পারে। মালচিং করতে পারলে গাছের গোড়া শুকাবে না।
এদিকে, যশোরে তাপমাত্রা কমছেই না। বরং দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। রোববার যশোরে তাপমাত্রা ছিল ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বোচ্চ। একই তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়ও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, কালবৈশাখীতে ঝরে যাওয়ার পরে যেগুলো থাকে সেগুলোই আম। যেগুলো ঝরে যায় সেগুলো অতিরিক্ত। এবার ঝরেপড়ার হার একটু বেশি। এটি প্রাকৃতিক কারণে। বর্তমানে প্রচণ্ড খরা চলছে। যে কারণে ঝরেপড়ার পরিমাণ অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। তারপরও আমের তেমন ক্ষতি হবে না। ভয় শুধু শিলা বৃষ্টি নিয়ে। শিলা বৃষ্টি না হলে তেমন কোনো ভয় নেই।
তিনি বলেন, ঝরেপড়া রোধ করতে বাগান মালিকরা প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ৬০ থেকে ৭০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে সপ্তাহে একবার স্প্রে করতে হবে। আর ঝড়ে আমের যদি ডালের সাথে ঘষা লাগে তাহলে পচে যাওয়া কিংবা পোকা লাগার ভয় থাকে। সেক্ষেত্রে যেকোনো কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক একসাথে স্প্রে করে পচন রোধ করা যায়।