রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন

প্যাকেট চিনি উধাও, খোলা চিনির কেজি ১৪০

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৬ মে, ২০২৩

ঈদের পর চিনির দাম আবারও বেড়েছে। বাজারে এখন খোলা চিনি এলাকাভেদে কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবু বাজারের সব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। বিশেষ করে প্যাকেটের চিনি নেই বললেই চলে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথমত পাইকারি দরে চিনির দাম বাড়ায় তারা এখন চিনি রাখছেন না, দ্বিতীয়ত বাজারে চিনির সংকট। গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার (৪ ও ৫ মে) মিরপুরের কয়েকটি বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র। বাজারের অধিকাংশ দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকটি দোকানে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি অনেকটাই উধাও।
চিনির সংকটের কারণ হিসেবে মিরপুর ১১ নম্বরের মোহম্মদীয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী মুন্না বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে কোম্পানির লোকেরা আর চিনির অর্ডার কাটে না। চিনি নাকি নাই। আবার বাড়তি দামে ৫০ কেজির একটা বস্তাও আমাদের পক্ষে রাখা সম্ভব না। তাই এখন অনেক দোকানে চিনি নাই।’
তৃতীয়পক্ষ থেকে প্যাকেটজাত চিনি কিনতে হচ্ছে জানিয়ে মুন্না বলেন, ‘কোম্পানির লোক অর্ডার না নিলেও কিছু থার্ড পার্টি আছে, যাদের কাছে আগের কিছু মাল রয়েছে। সেগুলা কিনছি। তাও প্যাকেটের মূল্যের চাইতে অনেক বেশি দামে।’ অনেকে আবার প্যাকেটের চিনি কেটে খোলা হিসেবে বিক্রি করছে জানিয়ে দোকানি মাহমুদুল বলেন, ‘দোকানদাররাই তো প্যাকেট চিনি গায়ের রেটের চেয়ে বেশি দামে কিনছে। এখন ম্যাজিস্ট্রেট আসলে তো সেটা বুঝবো না, ধরলেই জরিমানা করবো। এই কারণে অনেক দোকানদার এইখান থেকে, ওইখানে থেকে ১০-২০ প্যাকেট কিনে সেইটা কেটে খোলা হিসেবে বিক্রি করছে।’ তবে মিল ও কোম্পানি থেকেই চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে অভিযোগ বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের। এ বিষয়ে মিরপুর ১১ নম্বরের আড়তদার মো. আরশাদ বলেন, ‘এখন মিল থেকেই চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। আগে দিনে মিলগেট থেকে ১৫০ থেকে ২০০ গাড়ি বের হইতো। এখন ৩০টা বের হয়। তাও ৭ দিন আগে থেকে সিরিয়াল দিয়ে রাখতে হয়। তার ওপর দাম বাড়ছে। এখন নগদ টাকায় চিনি নিতে হয়। দেড় বছর আগেও ৭ লাখ টাকায় এক গাড়ি (৫০ কেজির ৩২০ বস্তা) চিনি পাওয়া যাইতো। আর বর্তমানে গাড়ি ২০ লাখ হয়ে গেছে। এই ২০ লাখ টাকা চিনি কিনে রাখা সম্ভব নাকি আমাদের পক্ষে।’
রসিদ ছাড়াই চিনি কিনতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকার মৌলভীবাজার থেকে চিনি আনি। কোনও রসিদ দেয় না। সিল ছাড়াই একটা কাগজ ধরায়া দেয়। আমাদের না কিনেও উপায় নাই। কাস্টমার ধরে রাখতে অন্যান্য আইটেমের সঙ্গে চিনিও রাখা লাগে। ঈদ ৫৮০৩ টাকা বস্তা কিনে ৫৮০০ টাকায় বিক্রি করছি। লস দিয়ে বিক্রি করছি, কারণ অন্যান্য আইটেমও বিক্রি করতে হবে। বর্তমানে সেই চিনির দাম বেড়ে ৬২৩০-এ উঠছে।’ ঈদেই চিনি মার্কেট আউট হয়ে যাওয়ার সুযোগে কাজে লাগাচ্ছে বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর ১১ নম্বরের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময়ই বেশি দামে চিনি বিক্রি করেছি। চালাতে কষ্ট হয়েছে। ক্রেতা কম ছিল। তাই ঈদের আগেই যা ছিল সব বিক্রি করে গোডাউন খালি করে দিছি। নতুন করে আর মাল ওঠাই নাই। দেখছিলাম পরে কী হয়। এখানেই লস খেয়ে গেছি। মার্কেটে চিনি নাই, এখন গরমে চাহিদাও বাড়বো। এই সুযোগে দাম বাড়ায়া চিনি ধীরে ধীরে ছাড়ছে। আবার শুনছি আন্তর্জাতিক মার্কেটে নাকি চিনির দাম বাড়ছে। এখন তো অনেক বড় পার্টি মিল থেকে বাড়তি দামে হইলেও চিনি নিয়ে আটকায়া রাখবো।’ চিনির দাম বাড়ায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। মিরপুর বাউনিয়াবাঁধ এলাকার বউবাজারে চিনি কিনতে আসা ক্রেতা মনোয়ারা আক্তার বলেন, ‘মাথায় এখন বাড়ি দেওয়ার অবস্থা বাজারে। কোন জিনিসটার দাম বাড়ে নাই! চিনি ১৪০ টাকা কেজিতে কিনা খাওয়া লাগতাছে। সাধারণ পাবলিক যাইবো কই, কার কাছে বিচার দিবো।’ দাম বাড়ছে আরও বাড়বে, চুপচাপ কিনে নিয়ে যাওয়া লাগবে মন্তব্য করে মিরপুর মোহম্মদীয়া মার্কেটের আরেক ক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও প্রশ্ন করা যাবে না। আসবেন আর কিনে নিয়ে যাবেন। দাম বাড়ছে আরও বাড়বে। এইটাই রীতি এখন।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com