ছাত্রজীবনে যুক্ত হন রাজনীতিতে। ভবিষ্যৎ ভাবনাও ছিল রাজনীতি ঘিরে। ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিনি। এর ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই তার নামে ৩৬টি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হয়। মূলত এসব মামলা, আইনি জটিলতা থেকে রেহাই পেতেই সিনেমায় নাম লেখান চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। ১৯৬৮ সালে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। সিনেমার নাম ‘জলছবি’। সেই সুবাদে প্রথমবার এফডিসিতে আসা। এরপর আর দ্বিতীয় কোনও পেশা খুঁজতে হয়নি। মৃত্যুর আগ অব্দি সিনেমার সঙ্গেই জুড়ে ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ মে) দুপুরে সেই প্রাণের আঙিনা, এফডিসি থেকে চিরবিদায় নিলেন ফারুক।
দুপুর ১টার দিকে এফডিসিতে আসে তার লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যান। তার আগে থেকেই শ্রদ্ধা নিবেদন আর শেষ দেখার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন। বিভিন্ন তারকা, সিনেমার কুশলী, এফডিসি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বহু মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন তার জন্য। মরদেহ আসার পর লাইন ধরে সবাই তাকে শেষবারের মতো দেখে নেয়।
ফারুককে শ্রদ্ধা জানাতে এফডিসিতে আসা তারকাদের মধ্যে ছিলেন আলমগীর, ইলিয়াস কা ন, কাজী হায়াৎ, সুজাতা, নাঈম, রিয়াজ, ওমর সানী, মিশা সওদাগর, ফেরদৌস, নিপুণ, জায়েদ খান, ড্যানি সিডাক, সুব্রত, অরুণা বিশ্বাস, কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, এস ডি রুবেল, চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী-সহ অনেকে।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে নায়ক ফারুককে নিয়ে অভিনেত্রী সুজাতা বলেছেন, ‘এফডিসিতে কিংবা অন্য কোথাও যতবার দেখা হয়েছে; সে একটু (ডেয়ারিং) সাহসী প্রকৃতির মানুষ ছিল। ডেয়ারিং বলতে ভালো, সত্যকে কখনও অস্বীকার করেনি। যতই তিক্ত হোক, সে সত্যটা তুলে ধরেছে সবসময়। ফারুকের এই দিকটাই আমার বেশি ভালো লাগতো। ফারুক আমাদের হৃদয়ের মাঝে বেঁচে থাকবে।’ এর আগে সকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়েছিল ফারুকের মরদেহ। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে সর্বস্তুরের মানুষ। এফডিসিতে শ্রদ্ধা ও জানাজা শেষে ফারুকের মরদেহ নেওয়া চ্যানেল এই প্রাঙ্গণে। সেখানে শ্রদ্ধা-জানাজা শেষে নেওয়া হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। অভিনেতার নির্বাচনী এই এলাকায় বাদ আসর আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর গাজীপুরের কালীগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে প্রয়াত ফারুককে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের মার্চ থেকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফারুক। সোমবার (১৫ মে) স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে মারা যান তিনি।