গত একান্ন বছরে দেশে বিদেশি কূটনীতিকদের প্রটোকল প্রত্যাহারের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় পদযাত্রা কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে সাড়ে ৩টার দিকে পদযাত্রা শুরু করেন নেতাকর্মীরা। মহানগরের পদযাত্রা উত্তর বাড্ডা শাহজাদপুর সুবাস্ত টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু করে রামপুরা হয়ে মালিবাগ আবুল হোটেল মোড়ে এসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ড. মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশে এখন উচ্চ পর্যায় থেকে নি¤œ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি। দেশের অর্থ পাচার করে সব শুন্য করে দিয়েছে। দেশের মানুষ আজ দুবেলা পেট পুরে খেতে পারে না। মধ্যবিত্ত আজ গরীব হয়ে যাচ্ছে। সরকার নিজেদের ইচ্ছামতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলে দেশের মানুষ ভোট দিতে যায় না। গত কয়েকদিন আগে একটি উপ-নির্বাচনে শুধু ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এতে বোঝা যায় কেউ এ সরকারের অধীনে ভোট দিতে চায় না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আর কোনো ভোট হতে দিবো না। জনগণ তা হতে দিবে না।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, একটাই দফা এই সরকারকে হটাতে হবে। কোনো স্বৈরাচার এমনি এমনি যায় না।তাকে হটাতে হয়। তাই এ সরকরকে হটাতে গণঅভ্যুত্থানের কোনো বিকল্প নাই। এজন্য আপনারা প্রস্তুতি নিন। বিদেশিদের প্রটোকল প্রত্যাহার বিষয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, গত একান্ন বছরে দেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সরকার বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়ে কোনো লাভ পায়নি। তাই সরকার পাগল হয়ে গেছে। আপনারা সজাগ থাকুন। কোনো ষড়যন্ত্র বা ফাঁদে পা দিবেন না। সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। ইনশাআল্লাহ। সভাপতির বক্তব্যে আমান উল্লাহ আমান বলেন, আমরা সরকারকে বার্তা দিতে চাই, জনগণের চোখের ভাষা বুঝুন। আগের মতো আর ভোট হতে দিবো না। আগামী নির্বাচন কোনোভাবে এই সরকারের অধীনে হবে না। করতে দিবো না। শরীরে একফোঁটা রক্ত থাকতে জনগণ এই সরকারের অধীনে ভোট দিতে দিবে না। সরকারকেও ওই লাল দালানে ঢুকতে হবে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আমাদের কাছে জেলখানা এখন পান্তা ভাত। আমরা আর ভয় করি না। আপনারা ভয় পাবেন না। এবার সরকারকে টেনেহেঁচড়ে নামাবো। জনগণ নামিয়ে ছাড়বে। যতই জেল আর মিথ্যা মামলার রায় দিক, কোনো লাভ হবে না। সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। এখনও সময় আছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিন।
সরকারের পতন ঘটিয়ে আমাদের পদযাত্রা থামবে: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, জনগণকে নিয়ে আমাদের পদযাত্রা শুরু হলো, এ পদযাত্রার মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে আমাদের পদযাত্রা থামবে। তারা টিকে থাকতে পারবে না।
গতকাল বুধবার (১৭ মে) রাজধানীর বাসাবো বালুর মাঠের সামনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচির পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষকে সম্পদহীন করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করেছেন। সম্পদ তো লুট করেছেন এখন বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে খেলাধুলা শুরু করেছেন। এটা বাংলাদেশের জনগণ কখনোই হতে দেবে না। এ দেশ রক্ত দিয়ে অর্জন করা দেশ। এ দেশ মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ। এ দেশ বিনা রক্তপাতে কখনো কেউ নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘শুনতেছি আবার নাকি গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে! কয়েকদিন আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে এটা মনে হয় ওরা ভুলে গেছে। কয়েকদিন আগে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে এটাও মনে হয় ওরা ভুলে গেছে। কিভাবে দেশে লুটপাট হচ্ছে এটা ওরা ভুলে গেছে। নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতা এসেছে এটাও ওরা ভুলে গেছে। এখন ওরা বলে খালেদা জিয়ার আমলে নাকি ভোট চুরি হয়েছে।’
সরকারের অত্যাচারের সীমা বয়স্ক মানুষ থেকে বাচ্চা পর্যন্ত চলে গেছে অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, বাচ্চাদের কেও আপনারা ভালো রাখেননি। বাচ্চারা ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে ফার্মের বাচ্চার মতো হয়ে গেছে। এই বাচ্চারা বড় হবে আন্দোলন করবে আপনারা গুলি করে মারবেন এ কথা ভাববেন না। বাচ্চাদের বড় করা হচ্ছে এরা আপনাদেরকে পরিচালনা করবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইদানিং উদ্ভট কথা বলেন, তিনি বলেছেন জিয়াউর রহমানের সময় নাকি ভোট চুরি হয়েছে, আপনি ভোট ডাকাতি করে অন্যদের চোর বলছেন।’
তিনি বলেন, ১০ দাবিতে আজকের এই বিপুল উপস্থিতি প্রমাণ করে সরকারের রাজ সিংহাসন কেঁপে উঠেছে।
রাজধানীর বাসাবো বালুর মাঠের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষ করে বিকেল ৫টায় যাত্রা কর্মসূচি শুরু হয়। মালিবাগ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে এ পদযাত্রা শেষ হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় বিএনপি নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সারাফত আলী শপু, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।