আজ ২৫ মে বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিএনপি,জামায়াতে ইসলামীসহ মূলধারার সকল বিরোধীদল ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনের মাঠে আছে, তারা এই নির্বাচন বর্জন করেছে। প্রায় ১২ লাখ ভোটারের আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় গাজীপুর সিটি করপোরেশন । গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে আজ ২৫ মে বৃহস্পতিবার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। রবিবার (২১ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সোনিয়া হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের চাহিদা মোতাবেক গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণের দিন অর্থাৎ ২৫ মে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো। এর আগে ৩ এপ্রিল গাজীপুর, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আজ ২৫ মে গাজীপুর সিটি, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল সিটি এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিয়েই নির্বাচন কমিশনের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনকে অনেকে ইসি’র জন্য এসিড টেস্ট হিসেবে দেখছেন। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, সিটির ভোট সুষ্ঠু করে তারা পরীক্ষা দিতে চায়। যদিও গাজীপুরসহ অন্য সিটির ভোটে প্রধান বিরোধী জোট বিএনপি ও সমমনা দল অংশ নিচ্ছে না। এ কারণে ভোটের মাঠে বড় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে না। দৃশ্যত বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও এ সিটির ভোট আসছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য বড় বার্তা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সিটির ভোটকে বিরোধী দলগুলোকে নতুন ইস্যু হিসেবে নিতে পারে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশের দৃষ্টি রয়েছে এ নির্বাচনে।
কূটনীতিকরাও পর্যবেক্ষণ করবেন নির্বাচন। এমন অবস্থায় এ সিটির ভোট নির্বাচন কমিশনের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা। গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খান প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সাবেক মেয়র এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের। মূলত জাহাঙ্গীর আলমই মায়ের হয়ে মাঠে লড়ছেন। মাঠের পরিস্থিতি এখন অনেকটা গুমোট। নির্বাচন কমিশন চাইছে একটি সুষ্ঠু ভোট করতে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী মূল প্রার্থীর অভিযোগের শেষ নেই। প্রচার-প্রচারণায় বাধা, হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখন দেখার বিষয় স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করতে পারে কিনা? ইতিমধ্যে ভোট নিয়ে নানারকম শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা। তারা নির্ভয়ে ভোট দেয়ার নিশ্চয়তা চাইছেন।
গণসংযোগে আজমত, রনি ও জায়েদার ইশতেহার ঘোষণা: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহানুর ইসলাম রনি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। টঙ্গীর নিজ বাসভবনে রনি সরকার ও ছয়দানা এলাকার বাসভবনে জায়েদা খাতুন এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
জায়েদা খাতুনের ইশতেহার তার উপস্থিতি মূলত ঘোষণা করেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তিনি নির্বাচনে তার বাধা বিঘেœর কথা উল্লেখ করে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দাবি করেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন আমার মা যদি নির্বাচিত হতে পারেন তাহলে পাঁচ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। নগরে যে প্রায় এক হাজার বেসরকারি স্কুল আছে সে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সিটি করপোরেশন থেকে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। মসজিদ মাদ্রাসা চালানোর জন্য সিটি করপোরেশন থেকে মাসিক ভাতা দেয়া হবে। নারীদের কর্মসংস্থান ও ব্যবসা বাণিজ্য করার জন্য বিনা সুদে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
জায়েদা খাতুন গ্রিন ও ক্লিন সিটি গঠনসহ তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অসমাপ্ত কাজসমূহ শেষ করার প্রতিশ্রুতিসহ ১০ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধির বিষয়ে নানা কর্মসূচি নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। পরে তিনি জয়ের জন্য সবার কাছে ভোট চান।
উন্নয়ন অগ্রগতির ১৯টি দফার ইশতেহার ঘোষণা করে রনি সরকার বলেন, আমি পারিবারিক ঐহিত্য ও অভিজ্ঞতাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই। ‘নগর পিতা’ নয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একজন সেবক হয়ে নাগরিকদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই। ইশতেহারে তিনি গাজীপুর সিটিকে একটি পরিচ্ছন্ন সবুুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলা, নাগরিকসেবা সহজ ও জনবান্ধব করা, শিল্পবান্ধব পরিবেশ, বিকল্প রাস্তা সম্প্রসারণ-উন্নয়ন ঘটিয়ে ঢাকা-গাজীপুর যানজটমুক্ত যাতায়াতের নতুন দিগন্ত উন্মোচন, রেলক্রসিংগুলোতে ওভারপাস নির্মাণ, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত স্কুল-কলেজ গড়ে তোলা, বিনোদন ও খেলাধুলার জন্য খেলার মাঠ নির্মাণ, সহনীয় কর নির্ধারণ, পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়নসহ ১৯টি দফা উল্লেখ করে বিস্তারিত উল্লেখ করেন।
ওদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান তার টঙ্গীর নিজ বাসায় দলের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এবং নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শমূলক কথা বলেন। জনসংযোগে বের হওয়ার আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জনগণ একটি স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক সিটি করপোরেশন আশা করেছিলেন। বিগত ১০ বছরে নগরবাসী এই জায়গাটাতে আশাহত হয়েছেন। তাদের আশা ভঙ্গ হয়েছে। আমি ১৮ বছর পৌরসভার দায়িত্বে ছিলাম। আমাকে দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি। শেষ হিসেবে আমি মনে করছি আমি যেভাবে সাড়া পাচ্ছি সবকিছু বিবেচনা মানুষের যেরকম আগ্রহ ও মানুষের প্রত্যাশা এতে তাদের ধারণা এই প্রত্যাশা পূরণের জন্যই আমি বিজয়ের জন্য শতভাগ আশাবাদী।