সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন

সয়াল্যান্ডে এবার ৫০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩

মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকা লক্ষ্মীপুর। এ অ লের মাটি সয়াল্যান্ড হিসেবে পরিচিত। এখন সয়াল্যান্ডে সয়াবিন গাছ কাটার ধুম পড়েছে। ক্ষেত থেকে সয়াবিন গাছ কেটে সেগুলো মাড়াই করে ঘরে তোলার ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। চাষিরা জানিয়েছেন, এবার ফলন ভালো হয়েছে৷ আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সময় মতো ফলন ঘরে তুলতে পেরেছেন তারা। কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় যে পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে, তার বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো হবে। সারাদেশে যে পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদন হয়, এর মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ সয়াবিন চাষাবাদ হয় লক্ষ্মীপুরে। জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দণি, পশ্চিম অ ল, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সয়াবিনের চাষাবাদ হয়। কৃষকরা জানান, ধান বা অন্য ফসলের চেয়ে সয়াবিন লাভজনক। গত কয়েক বছর ধরে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন। তবে বীজ, সার, ওষুধ, চাষাবাদ এবং শ্রমিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার ৪১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমির মধ্যে রামগতিতে সবচেয়ে বেশি সয়াবিনের চাষাবাদ করা হয়। এ উপজেলায় এবার সয়াবিনের চাষ হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এরপরের অবস্থান কমলনগর। এ উপজেলায় আবাদ হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৩০০, রায়পুরে ৬ হাজার ২০০ এবং রামগঞ্জে ১০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ হয়েছে।
জেলায় এবার ৮৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন সয়াবিনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এরই মধ্যে, মাঠ থেকে প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি সয়াবিন কাটা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (২৬ মে) সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক-কৃষাণীরা দলবদ্ধ হয়ে সয়াবিন কাটছেন। কেউ গাছসহ সয়াবিন রোদে শুকিয়ে মাড়াই করছেন।
চররমনী মোহন এলাকার কৃষক সিরাজ মোল্লা বলেন, ‘এবার মৌসুমের শুরুতেই সয়াবিনের দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। মাঠেই প্রতি মন সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত।’
কৃষক রফিক উল্লা বলেন, ‘মেঘনা নদী সংলগ্ন একটি চরে সাড়ে তিন কানি জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ করেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই সব সয়াবিন কেটে ঘরে তুলতে পেরেছি। প্রতি কানিতে (একর) ফলন হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ মনের মতো। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয় কানিতে। তবে এবার অসময়ে যে বৃষ্টি হয়েছে, এতে সয়াবিন গাছের জন্য কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এবং ফলনের পুষ্ট কম হয়েছে।’ একই কথা জানিয়েছেন শাকচর এলাকার কৃষক মো. আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে কিছুটা ক্ষতি হলেও অন্য বছরের চেয়ে উৎপাদন ভালো হয়েছে।’
চাষিরা জানান, গত বছর সয়াবিন কাটার আগেই অতিবৃষ্টিতে অনেকের সয়াবিন পচে গেছে। এতে লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। কিন্তু এবার সয়াবিন কাটার সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি না হওয়ায় সয়াবিনের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে, চারাগাছ থাকাবস্থায় বৃষ্টি হওয়ায় কিছু গাছ মারা গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ থেকে জেলার ৬ হাজার ৭০০ সয়াবিন চাষিকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাদের বীজ এবং সার দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সয়াবিনের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছি। এবার ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২.২ টন করে ফলন এসেছে। বর্তমানে কেজি প্রতি সয়াবিনের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সে হিসেবে জেলাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সয়াবিন উৎপাদন হয়েছে। আর সয়াবিন কেন্দ্রিক ৬০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
জাকির হোসেন বলেন, ‘এখানকার উৎপাদিত সয়াবিন দিয়ে পশু এবং মাছের খাদ্য তৈরি হয়। ফলে বিভিন্ন ফিড কোম্পানির কাছে সয়াবিনের চাহিদা রয়েছে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে সয়াবিন কিনে নিচ্ছে। এতে ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সয়াবিনের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের সারিবদ্ধভাবে এবং উচ্চ-ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের বীজ বপন করার পরামর্শ দিয়েছি। হাইব্রিডের মধ্যে বিইউ-১, বিইউ-২, বারি-৬, বীনা-৫ ও বীনা-৬ জাতের সয়াবিন রয়েছে। এগুলোতে ফলন ভালো হয় এবং সময়কালও কম লাগে। বিইউ-১ জাতের সয়াবিন রোপণের পর ফলন আসতে ৮০ দিন সময় লাগে। যেখানে দেশীয় জাতের সয়াবিন ফলন উঠতে সময় লাগে ১০০ দিনের মতো। যেসব সয়াবিনে সময়কাল কম লাগে, সেগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে না। তাই সঠিক সময়ে পাকা সয়াবিন ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com