রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবো: প্রধানমন্ত্রী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩

ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব উপহার দেওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার (২৯ মে) ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘পিস বিগেইনস উইথ মি’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জাতির পিতার দেখানো পথে আমরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবো এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব উপহার দিব- আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারেন, সে জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
‘আমার প্রত্যাশা, বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীগণ তাদের দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, সাহস ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে দেশের সম্মান ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখবে।’ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারী সকল শান্তিরক্ষীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহত শান্তিরক্ষীসহ বর্তমানে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সব শান্তিরক্ষীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রধান বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বাঙালি জাতিরই নন, তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির বার্তাবাহক ও শান্তির দূত। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় প্রদত্ত তার প্রথম ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার। এই শান্তির মধ্যে সারা বিশ্বের সকল নর-নারীর গভীর আশা-আকাঙ্খা মূর্ত হয়ে রয়েছে। ন্যায় নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত না হলে শান্তি কখনও স্থায়ী হতে পারে না”। পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা রোধ, সাম্য-মৈত্রী, গণতন্ত্র রক্ষা এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক’-এ ভূষিত করে। তিনি সেই পদক উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহিদদের এবং বীর সেনানীদের। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অঙ্গীকার ও আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়। সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। পরবর্তীতে ১৯৮৯ বাংলাদেশ পুলিশ এবং ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ নৌ ও বিমান বাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত হয়। গত ৩৫ বছর ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে বাংলাদেশ অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে চলেছে।’
শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশ্বের বুকে রোল মডেল। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর চৌকস, পরিশ্রমী ও নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের অবদান ও আত্মত্যাগ।’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩৫ বছর উদযাপন অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের উল্লেখ করে তিনি জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীসহ সকল শান্তিরক্ষীদের শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখছি।’
বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা এখন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব‌্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রসার ও অগ্রযাত্রার সাথে সাথে বাড়ছে অপশক্তিসমূহের নতুন নতুন হুমকি। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শান্তিরক্ষা মিশনসমূহ উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।’
‘বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীগণ যাতে বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপদজনক অ লসমূহে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে সেজন্য আমরা তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে সর্বদা প্রস্তুত রেখেছি। মিশন এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া ও ভূমির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নত প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জামাদিসহ পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টসমূহে অত্যাধুনিক মাইন-রেজিস্ট্যান্ট এ্যাম্বুশ প্রটেক্টেড যানবাহন এবং শান্তিরক্ষীদের যোগাযোগের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করেছি। আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন ও প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া যা আমরা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবো,’ বলেন তিনি। বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও কার্যক্রমে বাংলাদেশের ৭ হাজার ৪৩৬ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সংখ্যা বিশ্বে নিয়োজিত সর্বমোট শান্তিরক্ষীর প্রায় ৯.৮ শতাংশ।’
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪০টি দেশে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে ১৪টি জাতিসংঘ মিশন ও কার্যক্রমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীগণ নিয়োজিত আছেন। এসকল মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২০টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২টি, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৪টি এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩টি কন্টিনজেন্ট কাজ করছে।’
বিশ্ব শান্তিরক্ষায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত উপস্থাপন বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীল সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা সংঘাত প্রতিরোধ, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা, মানবাধিকার নিশ্চিত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আন্তরিকতাপূর্ণ কাজের কারণে ঐ সকল দেশের জনগণ আপনাদেরকে অকুন্ঠ ভালোবাসা উপহার দিয়েছে।’তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সর্বমোট ১৬৭ জন শান্তিরক্ষী শহিদ হয়েছেন।’ সকল বীর শান্তিরক্ষীদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিতদের সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com