মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে আর্থিক অভাব অনটনের কারণে সম্পূর্ণভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন। রবিবার (৪ জুন) বিকেলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক আইডিতে ‘ঝড়ে পড়া দু’জন শিক্ষার্থীর নতুন জীবন’ শিরোনামে একটি পোস্ট দৃষ্টিগোচর হয়। পোস্ট দেখে এবিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান-গত ২ মে (মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় আমি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের জুলেখা খাসিয়া পুঞ্জি এলাকা পরিদর্শন করি। এসময় এলাকায় বসবাসরত খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি পরিবারের সাথে পরিচিত হই এবং তাদের সার্বিক খোঁজ-খবর নেই। তখন জানতে পারি খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীর দুইটি পরিবারে দুইজন শিক্ষার্থী আর্থিক অভাবের কারণে পড়ালেখা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু ঝরে পড়া শিক্ষার্থী দুইজনের বেশ ইচ্ছা তারা পড়াশোনা করে একজন শিক্ষক এবং অন্যজন সরকারি চাকরি করবে। খাসিয়ার মন্ত্রী আমাকে এসব বিষয়ে অবগত করলে আমি তাৎক্ষণিক এই দুই শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলি। প্রথমে কথা বলি বৈশাখী সুচেন এর সাথে। সে জানালো ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ভর্তি ফি, মাসিক বেতন, স্কুল ড্রেস এবং বই-খাতা কলম কেনার সামর্থ না থাকার কারণে তার পরিবার তাকে স্কুল ভর্তি করাতে পারেনি। পড়ালেখা করে একজন শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু এখন পান বাধে বাসায় বসে। পড়ালেখার ইচ্ছে থাকলেও তার শিক্ষাজীবনের ইতি টানা হয়ে গেছে টাকার কারনে। পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ এবং স্বপ্ন পূরণে আমি তাকে পড়ালেখার নিশ্চয়তা দিয়ে এসেছিলাম। একই গল্প খুশি খংলিয়াম এর ক্ষেত্রেও। সে কলেজে ভর্তি হয়েও আর্থিক অভাব অনটনের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারছে না। সেও পড়তে চায়, চাকরি চায়। তার স্বপ্ন সরকারি চাকরি করার। তখন তাকেও আমি পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসি। ইউএনও আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন দরিদ্র শিক্ষার্থী দুইজনের ইচ্ছেগুলো, স্বপ্নগুলোকে আমি সম্মান করি। আজকের বৈশাখী, খুশি নিশ্চয় আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের কারিগর। উপজেলা প্রশাসন শ্রীমঙ্গল এর উদ্যোগে আবার শুরু হলো তাদের শিক্ষাজীবন। আমি উদয়ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে বৈশাখী সুচেন এর ভর্তি ফি মওকুফ করে উদয়ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়েছি এবং স্কুল ড্রেস ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এদিকে খুশি খংলিয়াম এর মাসিক বেতন ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণের বিষয়ে দ্বারিকাপাল মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি। সে খুশি এখন দ্বারিকাপাল মহিলা ডিগ্রি কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন ঝরে পড়া দুই শিক্ষার্থী আজ রবিবার (৪জুন) আমার অফিসে এসেছিল। পুনরায় তারা পড়ালেখা করতে পেরে ভীষণ খুশি হয়েছে। এটা জানানোর জন্যই আমার কার্যালয়ে আসে। একদিন তাদের উদ্যোগে আরেকজনের স্বপ্ন আশার আলো দেখবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন উপজেলা ইউএনও। তাদের পড়ালেখা এবং পরিবারে কেউ সহায়তা করতে চাইলে সেটারও সুযোগ রয়েছে বলে জানালেন ইউএনও। খাসিয়া পুঞ্জি পরিদর্শনকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুনের সফর সঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সন্দ্বীপ তালুকদার এবং উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মানবিক এবং দায়িত্বশীল কর্মকান্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন হতদরিত্র দুই শিক্ষার্থীর পরিবারসহ সেখানকার খাসিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা।