শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শেখ পরিবারের কারোরই রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা নেই : তাজউদ্দীনের মেয়ে আগামী প্রজন্মকে দূষণমুক্ত খাল আর দূষণমুক্ত নদী দেখাতে হবে- পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও ১৮টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে ভোলায়: জ্বালানি উপদেষ্টা ব্যাংকে সাইবার আক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে: বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন নির্বাচন: আগাম ভোট দিয়েছেন ৬ কোটিরও বেশি ভোটার দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যান উপভোগ করতে পর্যটকদের ভীড় ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করতে হবে : জয়নুল আবদীন ফারুক পলাশ বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে ৩ নভেম্বর থেকে উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালের দাম সহনীয় রাখতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার

অর্পিত সম্পতির মামলা ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য আদালতে করা যাবে না : হাইকোর্ট

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩

বাংলাদেশে অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক যেসব মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য আদালতে চলমান ছিল সেগুলো বাতিল করেছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুন) আদালত এ রায় দিয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত বলেন, ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের তিনটি ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দুটি রিট পিটিশনের শুনানি শেষে এ রায় আসে।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় যারা এদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যায় তাদের সম্পত্তিকে শত্রু সম্পতি হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার। পরে ১৯৭৪ সালে সেই সব সম্পত্তিকেই অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন পাশ করা হলেও তা কার্যকর হয় ২০১২ সালে। এ আইন অনুযায়ী, অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক আইন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একই সাথে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য আদালতে চলমান মামলা ‘অ্যাবেইট’ বা বাতিলের বিধানও ছিল। রিটকারীদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল যাতে অর্পিত সম্পত্তির মামলাগুলো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও অন্য আদালতেও যাতে পরিচালনা করা যায়। জেলা প্রশাসকরা যাতে অর্পিত সম্পত্তি লিজ দিতে না পারেন সে আবেদনও করেছিল রিটকারীরা। হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তাতে রিটকারীদের আবেদন খারিজ করা হয়েছে। ফলে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের ধারাগুলো বহাল রাখা হয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, এখন জেলা প্রশাসকরা অর্পিত সম্পত্তি লিজ দিতে পারবেন। আইনের এ ধারাটি আদলত বহাল রেখেছে।
অমিত দাশগুপ্ত বলেন,‘২০১২ সালে গেজেট প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনালে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো চলতে থাকবে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য দেওয়ানি আদালতে যেসব মামলা হয়েছে ২০১২-এর আগে বা পরে, সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে।’ দাশ গুপ্ত জানান, যদি কারো মামলা ট্রাইব্যুনাল এবং দেওয়ানি আদালত দুই জায়গাতেই থেকে থাকে তাহলে শুধু ট্রাইব্যুনালের মামলাটিই চলবে। অন্যটা বাতিল হয়ে যাবে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন কার্যকর হওয়ার পর দেওয়ানি আদালত থেকে মামলা ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার জন্য সময় দেয়া হয়েছিল বলেও জানান তিনি। এই রিট আবেদনের পরে পক্ষভুক্ত হয়েছিল ভূমি মন্ত্রনালয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইনজীবী ছিলেন মনজিল মোরশেদ। মোরশেদ বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য কোনো আদালতে চলমান থাকায় বাতিল হওয়া মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত হতে পারবে। সেক্ষেত্রে মামলাকারীকে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে নতুন করে মামলা করতে হবে।
মোরশেদ বলেন, শুধু ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত নয় বরং বর্তমানেও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ছাড়া অন্য কোনো দেওয়ানি আদালতে অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক মামলা করা বা পরিচালনা করা যাবে না। যেহেতু আইনটি ২০১২ সালে কার্যকর করা হয়েছিল তাই এখানে ওই বছরের আগে করা সব মামলা বাতিল হয়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন কার্যকর হওয়ার আগে অর্থাৎ ২০১২ সালের আগে যদি এ সম্পর্কিত কোনো মামলার রায় হয়ে থাকে তাহলে ওই রায়ই বহাল থাকবে। এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু যদি কোনো মামলার রায় হওয়ার পর তা আবার আপিল বিভাগে থেকে থাকে তাহলেও সেটি বাতিল হয়ে যাবে। আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘যেকোনো আদালতের মামলা বাতিল হয়ে যাবে।’
বাসস সূত্রে প্রকাশ, অর্পিত সম্পত্তি আইনের ধারা ৯, ১৩ ও ১৪-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আনা দুটি রিট খারিজ করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে সব মামলা এখন থেকে ট্রাইব্যুনালে চলবে। বিচারপতি নাইমা হায়দারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতি সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর হাইকোর্ট বে গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। বেে র অপর দুই বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট মনজিল মোরসেদ আদালতের রায়ের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, আদালত রায়ে বলেন-অর্পিত সম্পত্তি আইনের ৯, ১৩ ও ১৪ ধারা সংবিধান পরিপন্থি নয়। এ নিয়ে আনা পৃথক দুটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোপূর্বে জারি করা রুল ডিসচার্জ করে রায় দেন গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের একটি লার্জার (বৃহত্তর) বে । তিনি জানান, অর্পিত সম্পত্তি জেলা প্রশাসকের অধীনে থাকবে এবং জেলা প্রশাসক প্রয়োজনে লিজ দিতে পারবেন। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত সব মামলার আবেদন অর্পিত সম্পত্তি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে হবে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট মনজিল মোরসেদ। জেলা প্রশাসনের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত। এডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, আজকের এ রায়ের ফলে অর্পিত সম্পত্তির তদারকি ও লিজ দেয়ার ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের হাতেই রইল এবং এ সংক্রান্ত মামলা কেবল অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালেই দায়ের করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো।
অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত কতিপয় সম্পত্তি বাংলাদেশি মূল মালিক বা তাহার বাংলাদেশি উত্তরাধিকারী বা এদের বাংলাদেশি স্বার্থাধিকারীর নিকট প্রত্যর্পণ সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করে ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন-২০০১’ পাস করা হয়। এ আইনের ধারা ৯, ১৩ ও ১৪ সংবিধান পরিপন্থী দাবী করে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খুলনার শ্যামল কুমার সিংহ এবং চট্রগ্রামের মো. মশিউর রহমান ২০১২ সালে দুটি রিট করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে তখন হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলে। ওই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ হাইকোর্ট রায় দেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com