শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন

পটিয়ায় মাটি সিন্ডিকেটের লাগাম টানা যাচ্ছে না

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩

চট্রগ্রামের পটিয়ায় কোনভাবেই মাটি সিন্ডিকেটের লাগাম টানা যাচ্ছে না। দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব। পরিবেশ আইন অমান্য করে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একটি চক্র মাটি কেটে বিক্রি করছে। পাহাড় খেকো ও মাটি বেপারীদের বেপরোয়া কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মূখ খোলার সাহস পায় না। জানা যায়, উপজেলার শোভনদন্ডী এলাকার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে কৃষকের ফসলি জমি ও পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চক্রটি দিন রাত বিশেষ করে রাতের বেলা পটিয়া থানায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা। তারা আবার সুযোগ বুঝে মামলা মোকদ্দমা নিয়েও তদবির বানিজ্য করে থানায়। চক্রটি লেবাসধারী আওয়ামী লীগ হলেও বাস্তবে তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে রয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সমর্থকরা। তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থানাসহ বিভিন্ন অফিস আদালতে সুবিধা দেয়। শোভনদন্ডীর গন্ডি পেরিয়ে চক্রটি ছনহরা, হাইদগাঁও, বড়লিয়া, ভাটিখাইন, ধলঘাট, কচুয়াই,খরনা কেলিশহর এলাকার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা একাধিক সিন্ডিকেটের সদস্যদের নিয়ে মাটি কাটার মহোৎসবে মেতে উঠছে প্রতিনিয়ত। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন পাহাড় ও কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে দুর্বৃত্তরা। মাঝে মধ্যে প্রশাসন লোক দেখানো জরিমানা করা হলেও পাহাড় ও কৃষি জমির মাটি কাটা কোন ভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। পরিবেশ আইন অমান্য করে প্রতিবছর এ মৌসুমে পটিয়ার বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে পটিয়ার সীমান্তবর্তী চন্দনাইশের ইটভাটায়, পুকুর ভরাট, বাড়ি ভিটা ভরাটের কাজে। অনুসন্ধানে জানা যায়, আইন অমান্য করে এস্কেভেটর কিংবা শাবল-কোদালে দিবা-রাত্রি সমানতালে চলছে ফসলি জমির মাটি ও পাহাড় কাটার মহোৎসব। পাহাড় কাটায় ছোট বড় ৮-১০ এস্কেভেটর দিয়ে বড় বড় পাহাড়গুলো কাটা হয়। ৫০ থেকে ৬০ টি ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টরযোগে এসব পাচার করা হয় পাহাড়ি টিলার মাটি। চক্রটি মূল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তথা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ মাটির ব্যবসার সুযোগ করে দেন। আর এর বিনিময়ে তাদের পকেটে ঢুকছে লাখ-লাখ টাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষি জমির কয়েকজন মালিক জানান, তাঁদের কৃষি জমি থেকে প্রভাবশালী একটি চক্র মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। তাতে তাঁদের জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষি জমির মধ্যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় তারা চলতি বোরো মৌসুমেও চাষাবাদ করতে পারেনি। চক্রটির লোকজনকে মাটি কাটতে নিষেধ করা হলেও তাঁরা মানছেনা। বাধা দিতে গেলে তাঁদের বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। পরিবেশ অধিপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, পাহাড় কাটা গুরুতর অপরাধ। নির্দিষ্ট কোন তথ্য পেলে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওকে জানানো হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুল মামুন জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি কাটা ও পাহাড় কাটা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com