নিম্নজলাভূমি বেষ্টিত জেলা গোপালগঞ্জ। এ জেলার প্রধান ফসল ধানও পাট। আগে গোপালগঞ্জে আমের বাণিজ্যিক চাষাবাদ ছিল না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও জেলার ৫ উপজেলায় কৃষকদের বাণিজ্যিক আম চাষে উদ্বুদ্ধ করে। তারা বিানমূল্যে চারা ও অন্যান্য সহযোগিতা করে কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে আম চাষের বাগান সৃজন করে দেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের বাণিজ্যিক আমবাগান সম্প্রসারণে সহযোগিতা করেছে। এ কারণে গোপালগঞ্জ জেলায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক আম বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাগান থেকে কৃষক এ বছর আম সংগ্রহ করতে পারছেন। গোপালগঞ্জের আম স্বাদে গন্ধে রাজশাহীর আমের মতোই। তাই তরতাজা এ আম বাজারে একটু বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আঃ কাদের সরদার বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় ইতিমধ্যে ১৩৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক আম বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে। এসব আম বাগানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের আমের চাষাবাদ করা হয়েছে। অনেক বাগানে গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার উদ্ভাবিত বিদেশী আমের চাষাবাদও হয়েছে। আমের চাষাবাদ করে কৃষক অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। জেলার ৫ উপজেলার মধ্যে মুকসুদপুর, কাশিয়ানী ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় আমের বাগান বেশি। তুলনামুলকভাবে কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় আম বাগান কম বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. এমএম কামরুজ্জামান বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় আমরা বিগত ৫ বছরে গোপালগঞ্জে ৫০টি আম ও মিশ্র ফলের বাণিজিক বাগান করে দিয়েছি। এ বছর গোপালগঞ্জে আমের বাগানে আমের রোগবালাই দমন প্রদর্শনী করেছি। এতে আমের রোগ বালই হয়নি। তাই আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক অধিক লাভবান হয়েছেন। তাই গোপালগঞ্জেও আম চাষ লাভজনক হয়েছে । অনেকেই লাভজনক আম চাষে ঝঁকছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ এম খায়রুল বাসার বলেন, বাণিজ্যিক আম চাষ লাভ জনক করতে এ বছর গোপালগঞ্জের বেশ কিছু বাগানে রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী করা হয়। এসব বাগানের আমে পোকা লাগেনি। কৃষক আমের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। কৃষকরা আমাদের দেখিয়ে দেওয়া পথে আমের রোগ বালাই দমন করবেন বলে জানিয়েছেন। রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আম চাষের আধুনিক কলাকৌশল বিস্তার করে আমরা এ চাষাবাদকে আরো উন্নত ও জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছি।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চর পদ্মবিলা গ্রামের আম চাষি ছিরু মোল্লা বলেন, আমি ১০ একর জমিতে আমের বাগান করেছি। আমার বাগানে বারি জাতের আম রয়েছে। বাগান সৃজনে গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প সব ধরণের সহযোগিতা করেছে। এ বছর আমার বাগানে রোগ বালই ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইস্টিটিউট। এ কারণে আমে কোন পোকার আক্রমণ হয়নি। আমের ফলন ভালো পেয়েছি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইস্টিটিউটের সহযোগিতা ও পরামর্শে বাগান করে আমি লাভবান হয়েছি। গোপালগঞ্জের মতো বিল বেষ্টিত জেলায় আম চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। আমার বাগানই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বাগান থেকেই আমি আম বিক্রি করতে পারছি।
কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের তারাইল গ্রামের কৃষক রফিকুল হাসান সুমন বলেন, আমাদের জেলায় অতি সম্প্রতিকালে আমের বাগান সম্প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ৩ বছর আগে আমাকে একটি মিশ্র ফলের বাগান করে দিয়েছে। এ বাগানে আম, লেবু ও মাল্টা রয়েছে। এ বছর আমার বাগানে আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে গাছ থেকে পাকা আম পেড়ে বিক্রি শুরু করেছি। বাজারে এ আম একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারণ এ আমের স্বাদ, গন্ধ ও মিষ্টিত্ব রাজশাীর আমের মতোই। এ আম ন্যাচারালি পেকেছে। তাই বাজারে ক্রেতারা আগ্রহ করে আমাদের আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এ আম দিয়ে আমার পরিবারের পুষ্টির চাহিদ া পূরণ করে বাড়তি টাকা আয় করতে পারছি। সেপ্টেম্বর –অক্টোবরের দিকে বাগন থেকে মাল্টা সংগ্রহ করব। মিশ্র ফল বাগান থেকে গড়ে সারা বছর ফল পাচ্ছি।
কাশিয়ানী উপজেলার চর পদ্মবিলা গ্রামের শ্যামল বিশ^াস বলেন, আমাদের গ্রামে ছিরু মোল্লার বাগানের আমে কোন ভেজাল নেই। প্রতিটি আম তরতাজা। আমের স্বাদও বেশ ভালো। তাই নিরাপদ আম হিসেবে এ আম আমরা গ্রাম থেকে ক্রয় করছি। এ আম ছেলে মেয়েদের নিশ্চিন্তে খাওয়াতে পারছি। এখান থেকে আমরা পুষ্টি পাচ্ছি। এটি আমাদের জন্য পরম পাওয়া ।
একই গ্রামের গৃহবধূ নাসরিন বেগম বলেন, আগে বাগানের গাছ পাকা আম খেতে পারতাম না। এখন গ্রামে আম বাগান হয়েছে। তাই বাগানের ফ্রেস আম খেতে পারছি। এ ভাবে আমের বাগান সম্প্রসারিত হলে আমরা যেমন তাজা আমের স্বাদ নিতে পারব, তেমনি কৃষক আমের বাগান করে লাভবান হবেন ।