রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ নিয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য রাশিয়া থেকে নেয়া ঋণ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা সর্বশেষ দফা নিষেধাজ্ঞার কারণে এই ঋণ পরিশোধ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। গতকাল রোববার ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়, গত ১২ই এপ্রিল নতুন করে রাশিয়ার ১২০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্যে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টও। আর এতেই রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে জটিলতা শুরু হয়েছে। গত সপ্তাহে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুইফটের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ঝুঁকির কথা তুলে ধরেন।
গত ১৪ই জুন এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মোঃ আবুল বাশার বলেন, এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, তবে আমরা নিষিদ্ধ বা গোপনীয় কিছু করব না। বর্তমানে রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের বকেয়া একটি এসক্রো অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে। এটি তৃতীয় পক্ষ দ্বারা পরিচালিত একটি ট্রাস্ট ফান্ডের মতো কাজ করে। ব্যাংক অব চায়না-তে বাংলাদেশের একটি করস্পনডেন্ট একাউন্ট রয়েছে। বাশার জানান, যদি কোনো ধরণের ঝুঁকি থাকে তাহলে তারা আমাদের জানাবেন। তারা যদি পেমেন্ট চায়, আমরা তা করে দেব।
উল্লেখ্য, গত ১০ থেকে ১৩ এপ্রিল ঢাকায় চার দিন ব্যাপী রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণ বিষয়ক দপ্তরের উপ-পরিচালক জর্জি চিজেনখোবের নেতৃত্বে রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশি কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইআরডি সচিব শরিফা খান। তিনি রাশিয়ান প্রতিনিধিদের জানান যে, রুবলের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ সম্ভব হবে না।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের এই ঋণ ডলারে পরিশোধ করার কথা ছিল। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করলে দেশটির বড় বেশ কিছু ব্যাংককে সুইফট সিস্টেম থেকে বহিস্কার করা হয়। এসব ব্যাংকের মাধ্যমেই দেশটি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে অর্থ লেনদেন করতো। রূপপুর প্রকল্পের অর্থ লেনদেন পরিচালনা করতো রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক ‘দ্য ব্যাংক ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড ফরেন ইকোনোমিক অ্যাফেয়ার্স’। বহিস্কার হওয়া ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়েছে এই ব্যাংকটিও। ওই ঘটনার পর রাশিয়া বাংলাদেশকে রুবলে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব দেয়। তবে শরিফা খান রাশিয়ান প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেন যে, বর্তমান নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ শুধুমাত্র আইএমএফের এসডিআর মুদ্রাতেই লেনদেন করতে পারবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রূপপুর প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার ঋণ রুবেলে শোধ করার অবস্থানে নেই। তিনি অর্থপ্রদানের জন্য পছন্দের বিকল্প হিসাবে ইউয়ান ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। ২০১৬ সালে আইএমএফ ইউয়ানকে এসডিআর মুদ্রার তালিকায় যুক্ত করে। রাশিয়া বাংলাদেশের এই প্রস্তাব মেনে নেয়।