শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় প্রত্যাবাসন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩

মানবিক কারণে বল প্রয়োগে বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) আশ্রয় দিয়ে নানামুখী সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ এই উদ্বাস্তু বা শরণার্থী সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সে লক্ষ্যেই সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য তিনটি ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব ক্যাম্প স্থাপনের জন্য এরইমধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে সরকার।
দীর্ঘদিন থেকে ডাকাতি, খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- ছাড়াও মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এছাড়াও রয়েছে জঙ্গিবাদের হুমকি। বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্বলতাকে পুঁজি করে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জঙ্গিবাদের বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়ে বলছেন, রোহিঙ্গা সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে— তাদেরকে নিজ দেশে সম্মানজনকভাবে ফেরত পাঠানো। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য সরকার যেসব ট্রানজিট ক্যাম্প বা সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো হচ্ছে— বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমে একটি, টেকনাফের কেরণতলীতে প্রত্যাবাসন ঘাটের জেটি পুনর্র্নিমাণসহ উপজেলার জাদিমুরাতে প্রত্যাবাসন সেন্টার ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রুতে প্রত্যাবাসন সেন্টার নির্মাণ। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী বিষয়ক সেলের দায়িত্বশীল সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারে বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত ৯ লাখ ৫০ হাজার ৯৭২ জন রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালের আগেও মিয়ানমার থেকে আসা তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশাল এই উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠী কক্সবাজারসহ আশপাশের এলাকার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি ছাড়াও মাদকপাচার, ডাকাতি, খুনোখুনি, অস্ত্র ও মানবপাচারসহ নানা গুরুতর অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। আর এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিরোধ ও নজরদারিতে রাখা এবং তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা উদ্যোগ চালু রেখেছে সরকার। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। নোয়াখালীর ভাসানচরেও রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কাজ চলমান রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী বিষয়ক সেলের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপত্তা ও নজরদারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নানা উদ্যোগ চলমান রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারপাশে কাঁটা তারের নিরাপত্তা বেষ্টনি ও ওয়াকওয়ে বা রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরইমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যেসব কাজ শেষ হচ্ছে, সেনাবাহিনী পর্যায়ক্রমে সেগুলো আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে (এপিবিএন) বুঝিয়ে দিচ্ছে। মনিটরিংয়ের জন্য লাগানো ক্যামেরা কন্ট্রোল রুমের কাজ চলমান রয়েছে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী বিষয়ক সেলের তথ্য অনুযায়ী, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়ার মোট দৈর্ঘ নির্ধারণ করা হয় ১৪৫ কিলোমিটার। এ পর্যন্ত বৃহত্তর কুতুপালং, বালুখালী এবং পালংখালী এলাকায় ৭৪ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৭১ কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। শুধুমাত্র ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নিরাপত্তার জন্য নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি এপিবিএন-এর তিনটি ইউনিটের এক হাজার ৯২৪ জন সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইতোমধ্যে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (ক্যাম্প-২৩) সব রোহিঙ্গা সদস্যকে উখিয়ার মেগা ক্যাম্প এলাকায় স্থানান্তর করে ওই ক্যাম্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নানা ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গত ২৩ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গাদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালাতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ডাকা হবে। সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাম্পগুলোতে নিয়মিত যৌথ অভিযান চালাবে। তিনি বলেন, ‘‘কোনোভাবেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রক্তপাত ও মাদকের ব্যবসা হতে দেওয়া হবে না। ‘আরসা’ বা ‘আরাকান আর্মি’ যাকে বলে— তাদের কেউ যেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকতে না পারে, তার জন্যেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে ব্যাপক অভিযান চলবে। যৌথ টহলসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় তৎপর থাকবে।’’
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে, অর্থাৎ তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রত্যাবাসন আরও বেগবান করার জন্য আলোচনা চলছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা আশা করি, এটা চলতে থাকবে।’
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে সম্মানজনকভাবে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই সংকটের সমাধান হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘দিন যত যাবে সংকট তত বাড়বে।’ তবে রোহিঙ্গাকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদের কোনও আলামত এখনও পাওয়া যায়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।- বাংলা ট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com