সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

গো-খাদ্যের চাহিদা পূরণে পাকচোং ঘাস চাষে সফলতা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ জুন, ২০২৩

উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকা
উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় গো-খাদ্য বিশেষ করে উচ্চ ফলনশীল সবুজ ঘাসের ঘাটতি দূর করতে পাকচোং জাতের ঘাস চাষ করে সফলতা পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের পিএইচডি শিক্ষার্থী পিযুষ কান্তি ঘোষ। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এ গবেষণার প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. সফিকুল ইসলাম।
গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো গো-খাদ্যের অভাব ও দানাদার খাদ্যের উচ্চমূল্য। মাটি ও পানিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের জমিতে ঘাসের উৎপাদন আশানুরূপ হয় না। গবাদিপশু পালনের জন্য খামারিকে শুধু খড়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে এ অঞ্চলের খামারিরা গবাদিপশু পালনে ক্রমান্বয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এ বিষয়ে এরই মধ্যে তিন উপজেলায় দুই শতাধিক খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শিগগির এ গবেষণালব্ধ ফলাফল এ অঞ্চলের খামারিদের উপকারে আসবে। গবাদিপশু থেকে মাংস ও দুধ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী এ গবেষক।
প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ড. মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি গবেষণা প্রকল্পের আওতায় দুই ধাপে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় এ গবেষণাকর্মটি পরিচালিত হয়। প্রথমধাপে এ অঞ্চলে কী পরিমাণ গবাদিপশু আছে এবং গবাদিপশু কী কী কারণে কমে যাচ্ছে; সেটা খুঁজে বের করা হয়। খামারিরা কোন কোন ঘাস বা গো-খাদ্য ব্যবহার করেন; সে বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হয়। সেখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ১৭টি ঘাসের জাত নিয়ে ৫টি লবণাক্ততার মাত্রা তৈরি করে টবে চাষ করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. পূর্নেন্দু গাইন মাঠ গবেষণাগারের সেমিকন্ট্রোলড সেডে এগুলো চাষ করেন। সেখান থেকে ভিন্ন ভিন্ন লবণাক্ততার মাত্রায় যেগুলো ভালো উৎপাদন হয়, সেগুলোর মধ্যে ৪টি ঘাস (নেপিয়ার-৪, পাকচোং, জার্মান ও হাইব্রিড জামবু জাত) পরবর্তী ধাপে গবেষণার জন্য নির্বাচন করা হয়। ৪টি ঘাসের জাত বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনা এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঠ পর্যায়ে গবেষণার জন্য পাঠানো হয়। মাঠ গবেষণার পর ৪টি জাতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো উৎপাদন আসে পাকচোং থেকে।’
ড. সফিক আরও বলেন, ‘পাকচোং ঘাস ৬০ দিনেই গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। গবেষণার জন্য এটি ৯০ দিন পর্যন্ত রাখা হয়। ঘাস চাষের পর প্রথম কাটিং ৬০ দিন পর গবাদিপশুকে খাওয়ানো যায়। এরপর উন্নত পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতি ৪৫ দিন পর পর ঘাস কর্তন করা যায়। একবার রোপণ করলে সামান্য যতেœ ৫ বছর পর্যন্ত এ ঘাস উৎপাদন হবে। এ ঘাসের গড় উৎপাদন ৬০ দিনে হেক্টর প্রতি ৪৪.৭৭ টন এবং ৯০ দিনে হেক্টর প্রতি ৭৫.৮০ টন। এ ঘাস রোপণের উপযুক্ত সময় ফাল্গুন-চৈত্র মাস (মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মধ্য এপ্রিল)। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কাটিং রোপণ করা উচিত নয়।’
জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে জন্মানো পাকচোং ঘাস পুষ্টিমান বিবেচনায় খুবই উন্নত। ঘাসটি নরম হওয়ায় গবাদিপশু খুবই আগ্রহ নিয়ে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এ ঘাসে ৭০% এর ওপরে জলীয় পদার্থ থাকে। খাদ্যের উপাদানের সবচেয়ে দামি অংশ প্রোটিন বা আমিষ তুলনামূলকভাবে অন্য ঘাসের প্রায় সমান। এ ঘাসে খাদ্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফাইবার (আঁশ) পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। এ ঘাসে গড়ে ১.৫% এর ওপরে ফ্যাট থাকে, যা গবাদিপশুর দেহের পুষ্টিমান চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ঘাস সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক খাদ্য বলে এটি গ্রহণে প্রাণীর রুমেনে কোনো ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয় না। এমনকি প্রাণী থেকে উৎপাদিত দুধ এবং মাংস মানব স্বাস্থ্যের জন্যও নিরাপদ।’
এ বিষয়ে গবেষক পিযুষ কান্তি ঘোষ বলেন, ‘পাকচোং ঘাস চাষাবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে ঘাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। গবাদিপশু লালন-পালন অর্থনৈতিকভাবে টেকসই হবে এবং খামারিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। তাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে। একই সঙ্গে বেকারত্ব দূর হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সর্বোপরি আমার বিশ্বাস, উপকূলীয় অঞ্চলের গবাদিপশুর উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এ দেশে প্রাণিসম্পদের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com