সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

আলুর কেজি ৫০ টাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

দামের দিক দিয়ে অন্যান্য সবজির তুলনায় সবসময়ই কিছুটা সস্তা আলু। এবার হাফ সেঞ্চুরি হাঁকছে আলুর দাম। ভালো মানের সাদা (গ্র্যানুলা) বা লাল (কার্ডিনাল) আলু কিনতে হচ্ছে এখন ৫০ টাকা কেজি দরে। আর দেশি জাতের আলুর দাম ৬০ টাকায় ঠেকেছে, যা গত কয়েকদিনে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। গত রোজার ঈদের পর থেকেই বাজারে আলুর দাম বাড়ছে, যা এখন সর্বোচ্চ। সেই হিসেবে গত তিনমাসে প্রতি কেজি আলুর দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। এবছর অস্থির পণ্যের তালিকায় এসেছে সচরাচর স্থিতিশীল থাকা পণ্য আলুও। এখন ক্রেতাকে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পণ্যটি।
বিক্রেতারা বলছেন, গত দুদিনে বাজারে আলুর দাম বেড়ে প্রতি কেজি এখন ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা। আলুর এ মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে রোজার ঈদের পর থেকে। ঈদের পরপর প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা।
তবে, আলুর দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশে ১ কোটি ১১ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে বেশি। ওই বছর দেশে আলু উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। এ উৎপাদন দেশে আলুর চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা ৮৫ থেকে সর্বোচ্চ ৯০ লাখ টন।
অন্য বছর চাহিদার চেয়ে আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় সচরাচর বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকতো। মৌসুমের শেষে হিমাগারগুলোতে আলু অবিক্রীত থেকে যেতো। বছর শেষে লোকসানের কথা বলতেন ব্যবসায়ীরা। এবছর হিমাগারে পর্যাপ্ত আলু থাকার পরও দাম বাড়ছে। কারণ হিসেবে কেউ বলছেন বাড়তি চাহিদার কথা, কেউ বলছেন অন্য পণ্যের দামের প্রভাবের কথা। তবে, সিন্ডিকেটের আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
ঊর্ধ্বমুখী এ বাজারে আলুর বাড়তি দাম নি¤œআয়ের পরিবারগুলোতে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় এ পণ্যের চড়া দাম প্রভাব ফেলেছে মধ্যবিত্তদের দৈনন্দিন খরচেও।
গতকাল রোববার (৯ জুন) সেগুনবাগিচাসহ রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাদা ও লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে, যা দুদিন আগে ছিল ৪০ টাকা। তবে, কারওয়ান বাজারে কয়েকটি দোকানে প্রতি কেজি আলুর দাম এখনো ৪৫ টাকা রাখা হচ্ছে। যদিও অন্য বাজারে এ দামে বিক্রি করা দোকানের সংখ্যা কম। দেশি ছোট গোল আলু (পাকড়ি জাতের আলু) ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, এখন যারা আগের দামে আলু বিক্রি করছেন, তারা আগেই কিনে রেখেছেন। কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘পাইকারি বাজারেই আলুর দাম কেজিতে ৫ টাকা বেশি। আমরাও সে হিসেবে দাম সমন্বয় করে মানভেদে কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা নিচ্ছি। তবে আগে কেনা থাকলে কিছুটা কমে বিক্রি করা যেতো।’
এনামুল হক নামে এক বিক্রেতা বলেন, দুদিন হলো পাইকারিতে আলুর দাম বেড়েছে। আগে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আলু বিক্রি করেছি ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকায়। এখন বিক্রি করছি মানভেদে ২১০-২২০ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারিতে দুদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের যেসব অঞ্চলে আলু উৎপাদন হয়, সেসব এলাকাতেও সবধরনের আলুর দাম বেড়েছে। বগুড়া অঞ্চলেই গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে হিমাগার পর্যায়ে পাইকারিতে সব ধরনের আলুর দাম বেড়েছে।
বগুড়া শেরপুরের আলু ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী জানান, ‘ঈদের পর থেকে হিমাগারে প্রতি কেজি সাদা (গ্র্যানুলা) আলু ও লাল (কার্ডিনাল) আলু কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি বগুড়ার বিখ্যাত দেশি ছোট বা পাকড়ি জাতের আলু প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এখন হিমাগারে প্রতি কেজি সাদা ও লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকায়। আর পাকড়ি জাতের আলু কেজিপ্রতি দাম উঠেছে ৪৬ টাকা।
প্রান্তিক এলাকার আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবছর আলুর চাষাবাদ বেশ কমেছে। পাশাপাশি বাজারে অন্য সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় আলুর চাহিদা বেড়েছে। সে অনুযায়ী সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
ওই এলাকার এসএস কোল্ড স্টোরের কর্ণধার সুমন পাটোয়ারী বলেন, ‘দাম বাড়ার কারণে এবার হিমাগারে সংরক্ষিত আলু তোলার (ছাড় করার) হিড়িক পড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন জাতভেদে প্রতি বস্তা আলুতে (৬০ কেজি) ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা হচ্ছে। এ কারণে সংরক্ষণ মৌসুম শুরু হতে না হতেই হিমাগার থেকে আলু বিক্রির হিড়িক পড়েছে।’
অন্যদিকে, দেশে আলু সরবরাহে কোনো সংকট থাকার কথা নয় বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মোখলেছুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছর উদ্বৃত্ত আলুতে আমাদের সমস্যা হয়। অবিক্রীত থেকে যায়। চাষিদের লোকসান হয়। এবছরও আলুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। চাষের জমির পরিমাণ কিছুটা কমলেও ফলন ভালো হওয়ায় উৎপাদন গত বছরের থেকেও বেড়েছে। তারপরও আলুর দাম কেন বাড়লো সেটা বুঝতে পারছি না।’ মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘হিমাগার মালিকরা এবছর আলু ধরে রেখেছেন। তারা ৪০ হাজার টন আলু এখনো বীজের জন্য রেখেছেন। এ পরিমাণ আলু প্রয়োজন নেই। বাজারে দাম বাড়ানোর জন্য তারা কিছুটা সমস্যা (সৃষ্টি) করছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com