দেশে ৫২ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে, সব থেকে ঢাকায় বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার হয় ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ। মোবাইল ফোন আছে এমন খানার (পরিবার) অনুপাতে নারী প্রধান খানার তুলনায় পুরুষ প্রধান খানায় ব্যবহার বেশি। তবে স্মার্টফোন ব্যবহারে পুরুষের থেকে নারীরা এগিয়ে। স্মার্ট ফোনের ক্ষেত্রে এটি পুরুষের জন্য ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারীদের জন্য ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে জাতীয় পর্যায়ে ৪ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ২০৫টি পরিবারে মোবাইল ফোন রয়েছে যা প্রায় ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ছাড়া বরিশালে ৩৬ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ৬৩, খুলনায় ৪৯, ময়মনসিংহে ৩৯ দশমিক ৫, রাজশাহীতে ৩২, রংপুরে ৩৪ দশমিক ১ এবং সিলেটে ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত আইসিটি নিয়ে ‘ব্যক্তি ও খানা পর্যায়ে আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ ও প্রয়োগ’ শীর্ষক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে রেডিও আছে এমন খানার অনুপাত ১২.৮ শতাংশ (পল্লীতে ৮.৫ শতাংশ এবং শহরে ২৫.৬ শতাংশ)। দেশের ৬২.০ শতাংশ (পল্লীতে ৫৬.৮ শতাংশ এবং শহরে ৭৭.৫ শতাংশ) খানায় অন্তত একটি টেলিভিশন রয়েছে যা ঐ খানার মালিকানাধীন। জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের মাত্র ০.৮ শতাংশ (পল্লীতে ০.৩ শতাংশ এবং শহরে ২.৩ শতাংশ)। দেশে প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে আছেন পুরুষরা। পুরুষদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে আছেন নারীরা। দেশের ৫ বছরের বেশি যেকোনো শিশু এ আওতায় রয়েছে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান অনেক। শহরের তুলনায় গ্রাম এলাকার মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। বেতার প্রায় হারিয়ে যেতে বসলেও দেশের কিছু সংখ্যক মানুষ রেডিও শোনার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ যুগে দেশের চার ভাগের তিন ভাগ পরিবার ঘরে টেলিভিশন দেখেন।
জরিপ থেকে দেখা যায় যে, কম্পিউটার আছে এমন খানার (পরিবার) হার ৮.৭ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রাম এলাকার ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং শহরে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারে কম্পিউটার রয়েছে। বাংলাদেশের মাত্র শুন্য দশমিক ৮ শতাংশ পরিবারে ফিক্সড লাইন টেলিফোন সংযোগ রয়েছে, যেখানে গ্রাম এলাকায় শুন্য দশমিক ৩ শতাংশ এবং শহরে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
জরিপে উঠে এসেছে দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হারও। জরিপ বলছে, দেশের ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার পরিপূর্ণভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তবে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ব্যবহারের তফাত অনেক। পরিবারে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে গ্রামে এমন পরিবারের হার ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। অথচ শহরে এ হার প্রায় তিনগুণ বেশি, ৬৩ দশমিক ৪ শতাংশ।
জরিপ বলছে, শহরের তুলনায় গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার তুলনামুলকভাবে কম। গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক দিয়ে নারীদের তুলনায় পুরুষরা এগিয়ে। এতে বলা হয়েছে, গ্রামে মাত্র ২৩ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। গ্রাম এলাকার পুরুষদের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে শহরেও একই চিত্র দেখা গেছে। শহর এলাকাও এ হারে নারীদের তুলনায় পুরুষরা এগিয়ে। দেশের শহর এলাকাগুলোর ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ ইন্টারন্টে ব্যবহার করেন। যেখানে শহরের ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।
গ্রাম এলাকাগুলোতে এখনও কম্পিউটার ব্যবহারের দিক থেকে পিছিয়ে আছে। গ্রাম এলাকায় কম্পিউটার ব্যবহারের দিক থেকেও পিছিয়ে আছেন নারীরা। গ্রামের ৫ শতাংশ পুরুষ কম্পিউটার ব্যবহার করেন, যেখানে নারীরা মাত্র ২ দশমিক ৭ শতাংশ। শহরগুলোতেও কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে। শহর অ লে ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ কম্পিউটার ব্যবহার করেন ও নারী ১৩ দশমিক ১ শতাংশ।
তবে মোবাইল ফোন ব্যবহারের দিক থেকে নারী ও পুরুষ প্রায় সমানে সমান। গ্রামের ৮৯ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ মোবাইল ব্যবহার করেন, এক্ষেত্রে প্রায় সমান নারীরা, ৮৯ দশমিক ৬ শতাংশ। শহর এলাকাতে অবশ্য পুরুষরা মোবাইল ব্যবহারে কিছুটা পিছিয়ে। শহরের ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, যেখানে ও নারী ৯১ দশমিক ২ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক দিয়ে নারীরা পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ বেতারের কথা প্রায় ভুলে যেতে বসেছেন। তবে কিছু পরিবার এখনও ঘরে বসে রেডিও শোনার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এ হার এখনও শহরেই বেশি। শহর এলাকায় এখন এফএম রেডিও শোনা যায়। গ্রামে শুধু বাংলাদেশ বেতার ছাড়া অন্য কোনো চ্যানেল স্পষ্টভাবে শোনা যায় না। জরিপ বলছে, বাংলাদেশে রেডিও আছে এমন পরিবার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রাম এলাকায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শহরে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ।