রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ অপরাহ্ন

চাকরিচ্যুতির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে শ্রীমঙ্গলে শেভরনের কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলন

এহসান বিন মুজাহির (শ্রীমঙ্গল) মৌলভীবাজার :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩

আদালতের নির্দেশ অমান্য এবং শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করে কালাপুরস্থ শেভরণ গ্যাস প্লান্টের ২২ জন কর্মীকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ ওঠেছে। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকাল ১১টায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শেভরনের চাকরিচ্যুত কর্মীরা এ অভিযোগ করেন। শেভরনের চাকুরিচ্যুত ২২ কর্মচারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে মো.জাকির হোসেন বলেন, আমরা ২২জন কর্মচারী মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গ্রামের বাসিন্দা। ২০০৪ সাল থেকে উপজেলার কালাপুরস্থ শেভরণ গ্যাস প্লান্টে অত্যন্ত সততা ও নিষ্টার সাথে আমরা বিভিন্ন পদে চাকুরি করে আসছি। কিন্তু গত ১৩ জুন ২০২৩ তারিখে আমাদের ২২জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ১২ জুন আমরা যথারীতি ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফেরার প্রক্কালে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে আমাদের ২২ জনকে চাকুরি থেকে অব্যাহতির কথা জানান এবং পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত যেনো আমরা কর্মস্থলে না যাই এ নির্দেশ দেন। কি কারণে আমাদের চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো তার কোন স্পষ্ট দলিলপত্র দেখাতে তারা অস্বীকৃতি জানায়। আমরা কেউ কেউ শেভরণে ১২ বছর থেকে ১৯ বছর যাবত চাকুরি করে আসছিলাম। কিন্তু আমাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান শ্রম আইন, বিধি বিধান তোয়াক্কা না করে কেবল একটি ফোন কলের মাধ্যমে ২২ জন শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করায় দ্রমূল্যের বাজারে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃখ কষ্টে পড়েছি। আমাদের একেকজনের আয়ের উপর ৮/১০ জন পরিবারের মানুষ নির্ভশীল। সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার পথে। এ অবস্থায় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছি। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে নিয়ে আমরা ২২ জন কর্মচারী সম্মিলিত স্বাক্ষরে বিভিন্ন সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার গ্যাস প্লান্ট এর সুপারিনটেন্ডেট, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, শ্রীমঙ্গল থানা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, শ্রীমঙ্গল র?্যাব ক্যাম্প ইনচার্জ কে প্রতিকার চেয়ে পৃথক পৃথকভাবে পত্র দিয়ে অবহিত করেছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাইনি। চাকরিচ্যুত শ্রমিক জাকির হোসেন আরো বলেন, শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ২ বছরের মধ্যে কর্মচারীকে স্থায়ীকরণের বিধান রয়েছে। কিন্তু চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠান সরকারী বিধিবদ্ধ এসব আইন কখনও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেনি। কোম্পানি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫জন শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১০ জনকে স্থায়ীকরণ করে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আর কোন শ্রমিককের চাকরি স্থায়ীকরণ ও বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি। এই ব্যাপারে কোম্পানী বরাবর দফায় দফায় লিখিতভাবে আবেদন করা হলেও আমাদের দাবী দাওয়া নিয়ে কোম্পানী আলোচনা পর্যন্ত করেনি। এর প্রতিবাদে ২০১৩সালে সাধারণ শ্রমিকরা চাকুরি স্থায়ী ও বেতন বৃদ্ধির দাবী নিয়ে ১৫ দিন কর্মবিরতি পালন করি। আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে আমাদের মাসিক বেতন দৈনিক ১শ’ টাকা হারে বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আমাদের মুল দাবি চাকুরি স্থায়ীকরনের বিষয়টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। কোম্পানী আমাদের চাকুরি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি দেয়ায় আমরা কর্মবিরতির কর্মসূচি থেকে সরে এসে পুনরায় কাজে যোগদান করি। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল এই ১০ বছরের মধ্যে বেতন বৃদ্ধি বা চাকুরি স্থায়ী করার কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি। ১০ বছরেও চাকুরি স্থায়ীকরণ ও বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা শেভরণ কর্তৃপক্ষ বরাবরে কয়েকদফা লিখিত আবেদন করি। কিন্তু শেভরণ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় আমরা বাধ্য হয়ে ২২ জন কর্মচারী আমাদের শ্রম অধিকার আদায়ের জন্য ২০২২ সালের মে মাসে ঢাকা শ্রম আদালতের শরণাপন্ন হই। মামলা চলাকালে আদালত শেভরন ও নিয়োগকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে এই মর্মে একটি অন্তবর্তিকালিন আদেশ দেয় যে, এই মামলা চলাকালীন সময়ে বাদী পক্ষের ২২ শ্রমিকের কোনো শ্রমিককে চাকুরিচ্যুত করা যাবে না। আদালতের এমন নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আদালতের রায়কে অমান্য করে আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পক্ষে জাকির হোসেন আরো বলেন, দীর্ঘ কর্মজীবনে দেশের জ্বালানীখাতে কিছুটা হলেও আমরা অবদান রেখেছি। আমাদের অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা দিয়ে । আমরা আবারো দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চাই। চাকুরিতে বহাল করা হলে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পেলে আমরা আবার সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত থেকে বের হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবো। এই প্রত্যাশা নিয়ে আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের চাকুরি ফিরে পাবার আহবান পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে দেশের আইন আদালতের প্রতি সম্মান রেখে কর্তৃপক্ষ আমাদের কর্মস্থলে নতুন করে জনবল স্থলাভিষিক্ত না করে চাকুরিচ্যুতের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আমাদের পুনর্বহাল করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানাই। চাকরিচ্যুত শেভরনের ২২জন কর্মচারি হলেন, মোস্তফা, জাকির, রফিক, ইমন, খছরু, মজনু, সঞ্জু, কালাম, নাজির, রহিম, আলী হোসেন, মসুদ, আতাউর, ইমরান, মোশাহিদ, আলমাছ, সাজিদ, আকরাম, আফসার, আমীর মিয়া, উজ্জল মিয়া, হাবিব। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে শেভরন গ্যাস প্লান্ট এর সুপারিনটেন্ডেট এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সমতা এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী জমশেদুর রহমান জমশেদ জানান, চাকরিচ্যুত এই শ্রমিকদের দৈনিক মজুরির বৃত্তিতে কাজে নেয়া হয়েছে। তাদের কাউকে স্থায়ীভাবে তাদের নেয়া হয়নি। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, শেভরণ কর্তৃপক্ষ আজ আমার সাথে বসতে চেয়েছিল, কি বিষয়ে তা জানি না।
আমার ব্যস্ততায় তাদের সাথে বসার টাইম দিতে পারিনি। এর কিছুদিন আগে শেভরণের একটি বড় গ্রুপ আমার কাছে এসেছিল। তাদের যেটা জানালো সেটা হলো, শেভরন তৃতীয় পক্ষের ঠিকাদারদের সঙ্গে পরিষেবা চুক্তি করেছিল। পরিষেবাগুলো ঠিকাদারের কর্মীদের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এসব কর্মী ঠিকাদারের বেতনভুক্ত কর্মচারী। যে কোনো কর্মসংস্থানসংক্রান্ত উদ্বেগ কর্মী ও তাদের নিয়োগকর্তার (তৃতীয় পক্ষের ঠিকাদার) মধ্যকার বিষয়। শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত করা বা বহাল রাখার সম্পূূণ শেভরণের এখতিয়ার। শেভরণ আইনবর্হিভূত কিছু করে থাকলে আমরা নোটিশ করবে। শ্রীমঙ্গলের কোনো শ্রমিক যেনো কষ্টে না থাকে তাদের পাশে থাকবো, চাকরি বহাল রাখার ব্যাপারে প্রয়োজনে শেভরণকে রিকুয়েস্ট করবো। শেভরণের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ অমান্য করার বিষয়টি জানালে ইউএনও বলেন, এটি আমার জানা নেই। আদালতের নির্দেশ যদি থাকে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুত না করার, তাহলে করা যাবে না। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ অমান্য করার কারো ক্ষমতা নেই।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com