অসহনীয় দ্রব্যমূল্যে নাকাল মানুষ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। হুটহাট দাম বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের। এ নিয়ে ক্রেতাসাধারণের ক্ষোভ ও অভিযোগ থাকলেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ।
কোরবানির ঈদের পর বাজারে মাছ ও সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে তা এখনো সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। অন্যদিকে কাঁচা মরিচ, আদা, পেঁয়াজ, আলু, টমেটো, ভোজ্যতেল ও চিনি- এ সাতটি নিত্যপণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এসব পণ্যের দাম কিছুতেই সাধারণ মানুষের নাগালে আসছে না। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে অস্বস্তি নিয়ে ঘরে ফিরছেন নিম্নবিত্তরা। দাম বাড়তি থাকায় পকেটের টাকায় তারা কিনতে পারছেন না প্রয়োজনের সব পণ্য।
গতকাল শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে দ্রব্যমূল্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র দেখা গেছে।
চড়া দামের ওই সাত পণ্যের মধ্যে গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা ও খোলা পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা আসে। যা পরের দিন বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে এখনো ভোজ্যতেলের দাম কমেনি। আগের বাড়তি দামেই তেল কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
এ বিষয়ে মালিবাগ বাজারে নোয়াখালী স্টোরের স্বত্বাধিকারী ফরিদ হোসেন বলেন, এখনো নতুন দামের তেল বাজারে আসেনি। কোম্পানি আরও কদিন পর সেগুলো বাজারে ছাড়বে। এখনো পুরোনো তেল বিক্রি করছি, যে কারণে আগের দাম রাখতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোম্পানি দাম বাড়ালে ব্যবসায়ীরা সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু যখন কোনো পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা আসে তখন তা কার্যকর হতে অনেক সময় লেগে যায়। ভোজ্যতেলের নতুন দাম কার্যকর হতেও এক থেকে দেড় সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
বিক্রেতারা বলছে, দাম কমানোর পর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৯ টাকা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আগের দাম ১৮৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে কমেছে ৫ টাকা। খোলা সয়াবিন ১৫৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে। আর ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৪৩ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৭৩ টাকা, দাম না কমায় তা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯১০ টাকায়।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন খুচরা বাজারে কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। গত কদিনের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম আরও বেড়ে এখন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কোথাওবা ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম রাখা হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, তেল-চিনি ছাড়াও বাজারে আরও পাঁচ ধরনের পণ্যের দাম ক্রেতাদের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। এরমধ্যে কাঁচা মরিচ ২৬০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একপোয়া বা ২৫০ গ্রাম কিনলে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৮০ টাকা।
গত প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে আদার দাম ৩০০ টাকা কেজির নিচে নামছে না। পর্যাপ্ত আমদানির পরও বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া বাজারে ঈদের পর আলুর দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সারাবছরই স্থিতিশীল থাকলেও মৌসুমের শুরুতে আলুর অস্থিতিশীল বাজারকে অস্বাভাবিক বলছেন ক্রেতারা। মাত্র কদিনের ব্যবধানে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে বাজারে গত রমজানের ঈদের পর থেকেই টমেটোর দাম ২০০ টাকা কেজির নিচে নামেনি। এখন বিভিন্ন বাজারে এ কাঁচা পণ্যটি কেজিপ্রতি ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মালিবাগ বাজারে কথা হয় ইলেকট্রনিক্স শোরুমের কর্মকর্তা শোভন ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিশেষ করে কয়েকটি পণ্যের দাম একদমই নাগালের বাইরে চলে গেছে। এত দামের পণ্য কিনে সংসার চালানোই এখন কঠিন। এভাবে তো কেউ অভ্যস্ত নয়। নিত্যপণ্যের চড়া দামে মানুষের খুব কষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই আদা ও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। দীর্ঘ সময়েও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। প্রায় হাজার টাকা ছুঁয়ে আসা কাঁচা মরিচের দাম এখনো ৩০০ টাকা কেজি। এটিও নি¤œ ও মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টকর।
‘এখন বাজারে এসে ভালো খাবার ছেড়ে সস্তা খাবার খুঁজতে হয়। কখন কোনটার দাম হুট করে আকাশচুম্বী হয়, সে টেনশনে থাকতে হয়। শুধু চড়া দামের কারণে আমিষ প্রোটিন ভিটামিন জাতীয় খাবার তালিকা থেকে ছাঁটাই করতে হচ্ছে। বিলাসী পণ্য তো দূরে, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যই এখন কিনতে পারছেন অনেকে। আবার কোনো কোনো পণ্য এত প্রয়োজনীয়, যা না হলেও চলে না।
তবে বাজারে কিছুটা কমেছে সবজি ও মাছের দাম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মের সবজিগুলো ৫০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আর বিভিন্ন জাতের মাছের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। অন্যদিকে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকার ওপরেই আটকে আছে। ব্রয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩৩০ টাকা। আর প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।