পবিত্র কোরআনে আত ত্বীন সূরায় বর্ণিত মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন এখন চাষ হচ্ছে ঠাকুরগাওয়ে। সদর উপজেলার ভাউলার হাট এলাকার স্মার্ট কৃষক নামে পরিচিত আবু বক্কর সিদ্দিকের (আবু) ফার্মে এ ত্বীন ফলের চাষ করা হচ্ছে। আয়তনের দিক থেকে দেশের উত্তরের কয়েকটি জেলার মধ্যে এটিই বড় বাগান বলে দাবি করছেন মালিক। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ের এ বাগান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ত্বীন ফল ও চারা বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন চাহিদা বাড়ার কারণে বাগান কর্তৃপক্ষ ফার্মটির সম্প্রসারণ করে এ ফল গাছের চারা উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। সৌদি আরব ও বাংলাদেশে এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত। ডুমুর জাতীয় এ ফলটি পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়ে ওঠে।
বাগানের মালিক আবু বক্কর জানান, লেখাপড়া শেষ করে আমি অন্যদের মত চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেই কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। নিজের জমানো মাত্র ৪০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এ বাগানের যাত্রা শুরু করি। প্রথমে ছোট করে শুরু করলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটি প্রায় এক বিঘা জমিতে চাষ করেন তিনি। শুরুর দিকে গাছের সংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে শতাধিক বড় গাছ রয়েছে। বাগান তৈরির ছয়মাস পর ফল আর চারা বিক্রি করেই দেড় লাখ টাকা আয় হয় তার। এবার দ্বিতীয়বারেও চারা এবং ফল বিক্রি করে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। খুরতামনি, মিসরীয়, ব্রাউন তুর্কি এ তিন জাতের গাছ রয়েছে এ বাগানে।
তিনি জানান, প্রতিটি গাছ থেকে ছয় থেকে আট কেজি বা ন্যূনতম ৭০ থেকে ৮০টি ফল পাওয়া যায়। এখানকার গাছে প্রতিটি ত্বীন ফল ওজনে ৭০ থেকে ১১০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে ছয় শ’ টাকা করে কেজি বিক্রি হচ্ছে। একবার চারা রোপন করা হলে ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। মাদার প্ল্যান্ট (মূল গাছ) থেকে তৈরি করা কলমের তিন মাস বয়স থেকেই ফল দেয়া শুরু করে। ফল ধরার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়। শুধুমাত্র শীতের সময়টা বাদ দিয়ে সারাবছরই গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ ছয় থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ত্বীণ ফল ও গাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন আবু বক্কর।
এখান থেকে কলম তৈরি করে নিজেদের প্ল্যান্ট ছাড়াও আগ্রহী চাষীদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই প গড়, দিনাজপুর, নীলফামারী, সৈয়দপুর সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফল বিক্রেতাসহ ভোজন রসিকরা এখান থেকে ত্বীন কিনে নিয়ে যান। ফলের পাশাপাশি সৌখিন চাষীরা চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ত্বীন গাছে রোগ জীবাণু সংক্রমণের মাত্রা একদমই কম।
ত্বীন চরম জলবায়ু অর্থাৎ শুষ্ক ও শীত প্রধান দেশে চাষ হলেও আমি প্রমাণ করেছি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও ৩৬৫ দিন এ ফল উৎপাদন করা সম্ভব। সরকারের সহযোগিতা পেলে তা রফতানি করে আন্তর্জাতিকভাবে বাজার ধরা সম্ভব। যা চাষ করে দেশের বেকরাত্ব দূর এবং রফতানি করে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, আয়তনের দিক থেকে উত্তরের জেলা গুলির মধ্যে এটিই তুলনামূলক বড় বাগান। বাণিজ্যিকভাবে ছোট পরিসর থেকে বড় হচ্ছে এ বাগানটি। আমরা এ প্রকল্পটি পরিদর্শন করে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। এখানে রোগ বালাই নাই বললেই চলে। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ত্বীন ফলের চাষ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও বিদেশ থেকে ত্বীনের আমদানি নির্ভরতা কমে আসার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এই কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এ ফলটি খুবই উপকারী। এছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এটি চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়েও সহায়তা করে। মানসিক ক্লান্তি দূর করে। এতে আছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম ও ক্যালিসিয়ামসহ নানা ভেষজ গুণ।