পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উৎখাতে ওয়াশিংটনের ভূমিকা ছিল বলে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউজ আউটলেট দ্য ইন্টারসেপ্টের এক প্রতিবেদনে। পাকিস্তান সরকারের কিছু নথির বরাতে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দুই কর্মকর্তার মধ্যে বৈঠকটি গত দেড় বছর ধরে পাকিস্তানে জল্পনা-কল্পনার শীর্ষে রয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতি তীব্র সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয় পাকিস্তানকে।
দ্য ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন অনুসারে, ৫ আগস্ট ইমরানকে যখন দুর্নীতির অভিযোগে তিন বছরের কারাদ-ে দেওয়া হয় তখন থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। আদালত ঘোষিত সিদ্ধান্তে চলতি বছরের শেষ দিকে পাকিস্তানে প্রত্যাশিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না ক্রিকেট থেকে রাজনীতিতে আসা ইমরান। পাকিস্তান সরকারের নথি অনুযায়ী, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের এক মাস পর পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এই ভোটেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ইমরানকে। এ ঘটনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
ইন্টারসেপ্ট বলছে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইমরান খানের বিরুদ্ধে তাদের নিয়মিত কৌশল প্রয়োগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি দূতকে জানানো হয়েছিল, ইমরানকে সরিয়ে দেওয়া হলে ইসলামাবাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের উষ্ণ সম্পর্ক থাকবে, নইলে পাকিস্তানকে একঘরে করে দেওয়া হবে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর একটি বেনামি সূত্র ‘সিক্রেট’ শিরোনামের নথিটি দ্য ইন্টারসেপ্টকে সরবরাহ করেছে। এতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের বিবরণ রয়েছে। ৭ মার্চ হওয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং সে সময়ে দেশটিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খান। দ্য ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে ইমরান খানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আপত্তি তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের বিষয়ে ইমরান খানের গৃহীত অবস্থান তার অপসারণের পর দ্রুত বদলে যায়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং পাকিস্তান সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক বৈঠকটি ইউক্রেন সংঘাত শুরুর দুই সপ্তাহ পর হয়েছিল। তখন ইমরান খান মস্কো গিয়েছিলেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের রাশিয়া সফরটি ক্ষুব্ধ করে তোলে যুক্তরাষ্ট্রকে। ইন্টারসেপ্ট বলছে, ২০২২ সালের ২ মার্চ বৈঠকের কয়েক দিন আগে ইউক্রেন সংঘাতে পাকিস্তান এবং অন্যান্য দেশের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির শুনানিতে লুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেনের প্রশ্নের জবাবে লু বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি মস্কো সফর করেছেন। এই সফরের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা কীভাবে যুক্ত হতে পারি, তা নিয়ে ভাবছি। বৈঠকের একদিন আগে ইমরান খান জনসভায় দেওয়া ভাষণে বলেছিলেন, আমরা কি তোমাদের দাস? আপনারা আমাদের কি মনে করেন? আপনারা যা বলবেন আমরা তাই করবো? তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা রাশিয়ার বন্ধু। আমরা যুক্তরাষ্ট্রেরও বন্ধু। আমরা চীন ও ইউরোপেরও বন্ধু। আমরা কোনও জোটের অংশ নই। নথি অনুযায়ী, বৈঠকে লু রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে পাকিস্তানের অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
অনাস্থা ভোটের বিষয়ে দ্য ইন্টারসেপ্ট ডোনাল্ড লুকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘আমি মনে করি যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সফল হয় তবে ওয়াশিংটনে সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরটিকে একটি সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।’ পাকিস্তান ইস্যুতে লুর উদ্ধৃতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘পাকিস্তানের নেতা কে হওয়া উচিত সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান নিয়েছেৃ কথিত এসব মন্তব্যে তা প্রমাণ হয় না।’ মিলার অবশ্য বলেছেন, ব্যক্তিগত কূটনৈতিক আলোচনায় প্রতিক্রিয়া জানাবেন না তিনি। সূত্র: দ্য ইন্টারসেপ্ট